ভর্তিতে সমস্যা হবে না, তবে নামতে হবে প্রতিযোগিতায় by পার্থ সারথি দাস

এবারকার উচ্চ মাধমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভর্তিতে কোনো সংকট সৃষ্টি হবে না, বরং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ৭০ হাজার আসন খালি থাকবে। তবে উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল করেও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ছাত্রছাত্রীদের লড়তে হবে আপ্রাণ।


ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবের উদ্যোগ নেওয়া হলেও 'গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি' এখনো চালু হয়নি। এ প্রক্রিয়া শুরু হলে একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বারবার ভর্তি পরীক্ষা দিতে হতো না।
বেশির ভাগ মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রধান লক্ষ্য থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের মোট আসনসংখ্যার চেয়ে এবার মেধাবী বেশি। তাই কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে তারা।
এবার আসন সংকট হবে না, তবে প্রতিযোগিতা হবে- গতকাল দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফল প্রকাশকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমন মন্তব্যই করেছেন। তিনি বলেন, আসন সংকটের জন্য ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হতে পারছে না, এবার এমন পরিস্থিতি হবে না। তবে ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য লড়াই করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এবার যে-সংখ্যক ছাত্রছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে তারা সবাই ভর্তি হতে পারবে। কারণ এক বছরের মধ্যে আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো আসন বেড়েছে। আমার হিসাবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার আসন খালি থাকবে। এর বেশিও থাকতে পারে।'
আসন আছে আট লাখের ওপর : ফলাফল বিবরণী থেকে জানা গেছে, এবার উত্তীর্ণ হয়েছে সাত লাখ ২১ হাজার ৯৭৯ শিক্ষার্থী। বিভিন্ন হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, অনার্স ও ডিগ্রি কলেজ, বুয়েট, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে আট লাখের বেশি আসন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ৩৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে আছে দুই লাখ ৩৫ হাজার ২৩৫টি আসন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪৩টি অনার্স কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষের আসন হচ্ছে এক লাখ ৮৯ হাজার। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাস কোর্সের প্রথম বর্ষে আসন আছে এক লাখ ৮৬ হাজার। নতুন আটটিসহ ৬২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়ে আসন রয়েছে ৬৮ হাজার ৯২২টি। এখানে সব মিলিয়ে আসন দাঁড়াচ্ছে ছয় লাখ ৭৯ হাজার ১৫৭টি।
এর বাইরেও দেশের ৫৪টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে প্রায় ছয় হাজার, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে আড়াই হাজার, সরকারি মেডিক্যাল কলেজে দুই হাজার ১০০, সরকারি ডেন্টাল কলেজে দুই হাজার ১০০ আসন রয়েছে। শতাধিক বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেঙ্টাইল ইনস্টিটিউট, লেদার টেকনোলজিসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য আসন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সরকারি ছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আসনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ কারণে এবার ভর্তিতে সমস্যা হবে না। আমরা এ বিষয়ে সবাইকে নিশ্চিন্ত করতে চাই।'
গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি ঝুলছে : দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ভর্তি প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার জন্য আলাদা ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরির (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল, কৃষি ও অন্যান্য) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একেকটি গুচ্ছের আওতায় এনে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২০১০ সালের মে মাসে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্লাস্টারের (গুচ্ছ) আওতায় এনে ভর্তির জন্য এরপর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে একটি বৈঠকও করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি আপাতত সম্ভব নয়। তবে পরীক্ষার সংখ্যা কিভাবে কমানো যায় এবং কম সময়ে ও কম খরচে তা করা যায় সে চিন্তা করা হয়েছিল। এ পদ্ধতিতে মেডিক্যাল কলেজগুলোর বর্তমান ভর্তি প্রক্রিয়ার মতো বিভিন্ন ক্যাটাগরির অর্থাৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল, কৃষি কিংবা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কে একেকটি ক্লাস্টারের আওতায় এনে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করার কথা ছিল। মাত্র তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর থেকেই গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তি করার জন্য রাজি হয়েছিল। তবে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ পদ্ধতি কার্যকর করেনি। পঠিত বিষয়ের পার্থক্যসহ বিভিন্ন ইস্যুত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় এ প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান আখন্দ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা এ পদ্ধতি চালুর পক্ষে। কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা এ ব্যাপারে একমত না হওয়ায় এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি বৈঠক ডাকব।'

No comments

Powered by Blogger.