শৈত্যপ্রবাহ দিনাজপুরে মৃতু্য ৫-সন্ধ্যার পর রাজধানী ফাঁকা

সারাদেশের ওপর মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে । শৈত্যপ্রবাহের কারণে উত্তরাঞ্চলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আগের দিন এ তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রী।


এদিকে অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে দিনাজপুরে ৫ জনের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। শীতের কারণে রাজধানীর জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব পড়তে শুরম্ন করেছে। শীত বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর রাসত্মঘাট ফাঁকা হতে থাকে। অনেক রিকশাওয়ালা যাত্রী পরিবহনে অপারগতা প্রকাশ করে। শুক্রবার প্রায় সারাদিনই অধিকাংশ লোকজনকে গরম কাপড় গায়ে দিয়ে চলতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর শীত বাড়তে থাকায় সবাইকে দ্রম্নত ঘরে ফিরতে দেখা যায়।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের ওপর শৈত্যপ্রবাহ আরও দু'দিন অব্যাহত থাকবে। এ দু'দিনের তাপমাত্রার সামান্য হ্রাসবৃদ্ধি ছাড়া বড় ধরনের পরিবর্তন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, সাধারণত প্রতিবছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি নিচে নেমে আসে। এবারও এর কোন ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি জানান, অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহের কারণে রাজশাহী বিভাগে অনেক জায়গায় তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেছে। তবে দেশের অন্যান্য বিভাগ বা শহর অঞ্চলে তাপমাত্রার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার কারণে সন্ধ্যার পর থেকে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। এদিকে শুক্রবার কঙ্বাজারে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রী এবং চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগের তাপমাত্রা ১৩ থেকে ২৩ ডিগ্রীর মধ্যে ওঠানামা করেছে। চট্টগ্রামে ১৪ থেকে ২৪ ডিগ্রী, রাজশাহীতে ১০ থেকে ২০ ডিগ্রী, খুলনাতে ১১ থেকে ২৩ ডিগ্রী, বরিশালে ১০ থেকে ২৪ ডিগ্রী এবং সিলেটে ১২ থেকে ২৫ ডিগ্রীর মধ্যে তাপমাত্রা ওঠানামা করে।
ঠা-া আবহাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন জেলার সাধারণ লোকজনের দুর্ভোগ বাড়ছে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী চর অঞ্চলে লোকজনের অবস্থা আরও করম্নণ। জনস্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। কাশি, সর্দি, জ্বর, এ্যাজমাসহ শীত জনিত রোগে আক্রানত্ম হওয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিরিক্ত শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে উঠতি ফসলে ৰতিসহ পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আলু ৰেতে মড়ক দেখা দেয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা প্রশাসন, এনজিও এবং বিভিন্ন সংগঠনের পৰ থেকে আক্রানত্ম মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, নববর্ষের প্রথম দিনেই জেলায় শীতে আক্রানত্ম হয়ে ৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। কনকনে শীতের সঙ্গে অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহের কারণে এ জেলার ২২ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠন শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। শুক্রবার গ্রামীণফোনের পৰ থেকে এতিম, দুস্থ ও ভাসমান মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। নিজস্ব সংবাদদাতা ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, জেলায় গত দু'দিন ধরে শীতের সঙ্গে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ও শেষ রাতে কুয়াশা ঝড়ছে। কনকনে ঠা-ার কারণে ছিন্নমুল ও দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে। শ্রমজীবী মানুষ কাজে যেতে পারছে না। বীজতলা ও আলুর আবাদ ব্যাপক ৰতির সম্মুখীন হয়েছে। এ ছাড়া শীতের কারণে শিশুদের ঠা-াজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা নীলফামারী থেকে জানান, জেলায় এবারের হাড় কাঁপানো শীত পুরনো রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ঘন কুয়াশা ও হাল্কা বৃষ্টির পর শীতের প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতবস্ত্রের অভাবে অসহায় ও ছিন্নমুল মানুষ নিদারম্নণ কষ্টে পড়েছে। সরকারের পৰ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

No comments

Powered by Blogger.