দারিদ্র্য বিমোচনে শিল্পায়নের বিকল্প নেই-বাণিজ্যমেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার দেশে ধনী গরিবের বৈষম্য দূর করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, "একদিকে বিশাল বিশাল অট্টালিকা, অন্যদিকে বুভুৰু নর-নারীর হাহাকার_ এই বৈষম্য দূর করতেই হবে।" তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন সরকারের মূল লৰ্য এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমেই তা সম্ভব। এ জন্য শিল্পায়নের বিকল্প নেই।


তাই রফতানি পণ্যের নতুন বাজারের সন্ধান করতে হবে। শুক্রবার পঞ্চদশ ঢাকা আনত্মর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিআইটিএফ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতার শুরম্নতে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বজুড়েই মানসম্মত পণ্যের কদর বাড়ছে। বিদেশে আমাদের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে পণ্যের গুণগত মানের ওপর নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের রফতানি নির্দিষ্ট পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অথচ বাংলাদেশে সবচেয়ে কম খরচে পণ্য উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিল্প উদ্যোক্তাদের রফতানি বহুমুখীকরণের দিকে নজর দিতে হবে। নতুন বাজারের সন্ধান করতে হবে।
বিদু্যত সমস্যা শিল্পায়নের ৰেত্রে বড় বাধা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পায়নের ৰেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলো সম্পর্কে সরকার সম্পূর্ণ সচেতন। ইতোমধ্যেই শিল্পায়ন ও বিনিয়োগবান্ধব শিল্পনীতি ঘোষণা করা হয়েছে। শিল্প খাতে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের সুদের হার ১৬ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১২-১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ৰুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে করা হচ্ছে উৎসাহিত। বিশ্ব মন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। তিনি আরও বলেন, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে সরকার নিজে কোন শিল্প স্থাপন করে না। সরকার শুধু সহায়কের ভূমিকা পালন করে। তিনি কথা দিয়ে বলেন, সরকার শিল্পায়নে আনত্মরিক।
বিদু্যত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ সালে দায়িত্ব পালনকালে আমাদের সরকার দেশে অতিরিক্ত প্রায় ২৬০০ মেগাওয়াট বিদু্যত জাতীয় গ্রিডে সংযোজন করেছিল। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাদের ৫ বছরের শাসনামলে এক মেগাওয়াট বিদু্যতও উৎপাদন করতে পারেনি। সংস্কারের অভাবে বিদু্যত পস্নান্টগুলো অকেজো হয়ে গেছে। বিদু্যত খাতে চলেছে অবাধ লুটপাট। জোট সরকারের ৫ বছর এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছর গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির কোন পদৰেপ নেয়া হয়নি। তাদের অদৰতা-ব্যর্থতার দায়ভার আজ দেশের মানুষকে বহন করতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উদ্যোগ চিত্র তুলে ধরে বলেন, দায়িত্ব নেবার পর ইতোমধ্যেই ৭২৭ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ৰমতাসম্পন্ন নতুন বিদু্যত কেন্দ্র চালু করেছে। আগামী জুন মাস নাগাদ ৯১৭ মেগাওয়াট ৰমতার বিদু্যত কেন্দ্র চালু হবে। পাশাপাশি গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির পদৰেপ নিয়েছি; এবং এর ফলে দৈনিক গড় গ্যাস উৎপাদন এক হাজার ৭৬৪ এমএমসিএফ থেকে এক হাজার ৯৪৫ এমএমসিএফ-এ উন্নীত হয়েছে। বিদু্যত ঘাটতি মেটাতে প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে বিদু্যত কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ বক্তৃতায় আরও বলেন, বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব সত্ত্বেও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধিসহ রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি স্বাধীনতা উত্তরকালের সবের্াচ্চ রেকর্ড। চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরের জন্য ১৭ দশমিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নির্ধারিত রফতানি লৰ্যমাত্রা অর্জনসহ আঞ্চলিক ও আনত্মর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবদান আরও সুসংহত হবে বলে উলেস্নখ করেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারম্নক খান বলেন, চলমান বিশ্বায়নের যুগে রফতানিসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সকল অঙ্গনে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সৃষ্টির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনার আলোকে রফতানি উন্নয়ন বু্যরো বিদেশে ত্রিনিদাদ 'বাংলাদেশ ট্রেড সেন্টার' চালু করেছে। রফতানি তালিকায় নতুন পণ্য সংযোগের লৰ্যে কৃষি ভিত্তিক পণ্য, বাইসাইকেলসহ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, ওষুধ শিল্প, হোম টেঙ্টাইল, শিপ বিল্ডিং ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ অন্যান্য প্রতিশ্রম্নতিশীল রফতানি পণ্যের উন্নয়নে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, সবার প্রচেষ্টায় বিশ্বমন্দার পরও গত অর্থবছরে শতকরা প্রায় ১০ দশমিক ৩১ ভাগ রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে প্রায় এক লাখ দশ হাজার কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, এবারের মেলায় ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। এর ফলে মেলা প্রাঙ্গণ সারা বিশ্বের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সর্বৰণিক সংযুক্ত থাকবে। পাশাপাশি ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কমপেস্নঙ্ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক।
সরকারের এক বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি আনিসুল হক বলেন, প্রথম বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ভাল ছিল। এই বছরে রিজার্ভ, রেমিটেন্স ও কৃষি উৎপাদন ভাল হয়েছে। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়েনি। বছরের শেষে এর ধারা ঋণাত্মক। বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে প্রয়োজন জ্বালানি। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে কৃষির পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, "কোপেনহেগেনে তৃতীয় বিশ্বের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে আপনি যে তাগিদ দিয়েছেন, তেমনিভাবে এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্য উন্নয়নে আপনিই দায়িত্ব নিতে পারেন।"
অনুষ্ঠানে রফতানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সাহাব উলস্নাহ স্বাগত বক্তব্য দেন।
বক্তৃতা পর্বের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা উদ্বোধন করেন। পরে মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন। তিনি দেশের বৃহৎ কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান টেঙ্টাইল মিলসের প্যাভিলিয়নে যান এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাপড়ের গুণাগুণ সম্পর্কে অবহিত হন। এ ছাড়াও মেলার অন্যান্য স্টলও প্রধানমন্ত্রী ঘুরে দেখেন।
জানুয়ারি মাস জুড়ে বাণিজ্যমেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যনত্ম খোলা থাকবে। এবারের মেলায় যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, পাকিসত্মান, মালয়েশিয়াসহ ১০টি দেশ অংশ নিচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.