রাসত্মায় কাঁটা দেব-0 ভারতে যাচ্ছেন, যদি কিছু না আনতে পারেন তবে_ 0 ছাত্রদলের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকে সামনে রেখে সংসদের বিরোধী দলের নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর বা টিপাইমুখ বাঁধ নিমর্াণে সম্মতি দিলে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থবিরোধী কোন চুক্তি মেনে নেবে না বিএনপি।


মহাজোট সরকার গত এক বছরে দেশের জন্য কিছুই করতে পারেনি। এজন্য সরকারকে হুমকি দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থ রক্ষা করে ফিরে এলে তাঁকে বিমানবন্দরে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেয়া হবে। আর যদি কিছুই আনতে না পারেন এবং সবকিছু দিয়ে আসতে হয়, তাহলে আমরা ফুলের মালা নয়, আপনার রাসত্মায় কাঁটা বিছিয়ে দিয়ে আসব।
শুক্রবার বিকেলে পল্টন ময়দানে দলের সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। ৩৫ মিনিট স্থায়ী বক্তব্যে বর্তমান সরকারের এক বছরের শাসনামলকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ অভিহিত করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, এ সরকার একটি ব্যর্থ ও অযোগ্য সরকার। গত এক বছরে দেশের জন্য কিছুই দিতে পারেনি। নির্বাচনী ওয়াদা পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে সরকার। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলৰে নতুন বছরের প্রথম দিনে বেগম জিয়া মহাজোট সরকার ও বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কঠোর সমালোচনা করে চারদলীয় জোট সরকারের সফলতা তুলে ধরেন। গত সাধারণ নির্বাচনের পর পল্টন ময়দানে খালেদা জিয়ার এটাই প্রথম সমাবেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০ জানয়ারি ভারত সফরে যাওয়ার কথা। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে যদি টিপাইমুখ বাঁধ, ট্রানজিটের বিষয়ে কোন সম্মতি দিয়ে আসেন এবং সমুদ্রসীমার বিষয়ে কোন ফয়সালা না করতে পারেন তাহলে দেশবাসীকে নিয়ে আন্দোলনে যাবে বিএনপি। দেশের স্বার্থবিরোধী কোন চুক্তি বিএনপি মেনে নেবে না। আন্দোলনের জন্য বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা খালেদা বলেন, আপনার ছাত্রলীগকে সামলান। ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির জন্য আপনি ওই সংগঠনের সাংগঠনিকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এভাবে দেশ পরিচালনা করতে ব্যর্থ হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশকে বাঁচান। অন্যথায় দেশের মানুষ বসে থাকবে না। আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।
ছাত্রদলের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পল্টন ময়দানে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলা এবং মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ছাত্রদলের নেতা-কমর্ী মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। খ- খ- মিছিলে ছাত্রদলের সমাবেশটি বড় জনসমাবেশে রূপ নেয়। বেগম খালেদা জিয়া বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে ছাত্রদলের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমান উলস্নাহ আমান, মূল বক্তা ছিলেন ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ ফজলুল হক মিলন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং সভা পরিচালনা করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিরম্নল ইসলাম আলিম।
সমাবেশে শোক প্রসত্মাব পাঠ করেন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবুল ও সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন আনিসুর রহমান খোকন। মঞ্চে প্রধান অতিথি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কগণ। সাবেক ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক গোলাম হোসেন, মজিবুর রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ইলিয়াস আলী, নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রম্নল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাহাবুদ্দিন লাল্টু, আজিজুল বারী হেলাল, এ বি এম মোশাররফ হোসেন ও শফিউল বারী বাবু। অনুষ্ঠানে প্রথম সারিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, যুগ্ম মহাসচিব, উপদেষ্টা সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যানবৃন্দ। নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. আর এ গনি, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ, এম শামসুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মইন খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আবদুলস্নাহ আল নোমান, বেগম সেলিমা রহমান, মে. জেনারেল (অব) রম্নহল আলম চৌধুরী, ফজলুর রহমান পটল, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জয়নুল আবেদিন ফারম্নক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুসত্মাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক ও অধ্যাপক মাহবুবুলস্নাহ। ছাত্রদলের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলৰে শুক্রবার সকালের দিকে দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতা-কমর্ীরা শেরে বাংলা নগরে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেয়।
বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রদলের নেতা-কমর্ীদের সতর্ক করে দিয়ে সমাবেশে বলেন, কোন প্রকার টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। ছাত্রদলের সংগঠন হচ্ছে আদর্শের সংগঠন, ছাত্রদল কমর্ীদের অবশ্যই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। ভারতীয় দূতাবাসকে ইঙ্গিত করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বিদেশী দূতাবাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনী দিচ্ছে। মিডিয়ায় ছবি প্রকাশ পাচ্ছে। অথচ সরকার বলছে তারা কিছুই জানেন না। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনা করছে না, দেশ পরিচালনা করছে অন্য কেউ। এভাবে দেশ পরিচালনা করলে এই সরকারের কাছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়, থাকবে না। এই সরকার বিদেশী প্রভুদের স্বার্থ রৰায় ব্যসত্ম হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেন, প্রথম দিকেই আমরা সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে চেয়েছি। আমরা এক বছর সময় দিয়েছি। কোন আন্দোলন, অবরোধ, হরতাল, মশাল মিছিলসহ কোন কর্মসূচী দেয়া হয়নি। আমাদের আশা ছিল সরকার জনগণের কাছে দেয়া নির্বাচনী অঙ্গীকার বাসত্মবায়ন করবে। কিন্তু সরকার তা বাসত্মবায়ন করেনি। বিচারবহিভর্ূত হত্যাকা-, রিমান্ডে নিয়ে নিযর্াতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায়সহ নানাভাবে সরকার দমনপীড়ন চালাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, মানুষ আজ অধৈয ও অসহায় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা আর সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত ক্রসফায়ার হচ্ছে। অথচ সরকারের সংশিস্নষ্ট মন্ত্রী বলছেন ক্রসফায়ার হয়নি। প্রতিদিন ঘরের পাশে লাশ পাওয়া যাচ্ছে, প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এই লাশ কোথা থেকে আসে, ক্রসফায়ার না হলে এগুলো গুপ্ত হত্যা হবে ! তিনি বলেন, বিডিআর হত্যা করা হয়েছে। এখন সারাদেশে হত্যা ও সন্ত্রাস চলছে। আমরা আর হত্যা, একের পর এক জানাজা দেখতে চাই না। অবিলম্বে এই সন্ত্রাস, হত্যা বন্ধ করম্নন, তা নাহলে দেশবাসী প্রতিশোধ নিতে বাধ্য হবে।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আর একটি দল মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কাজেকর্মে স্বৈরতন্ত্র ও অসাংবিধানিক সরকারের সঙ্গে অাঁতাত করেছে। বিএনপি ৰমতায় থাকলে তারা খুশি না। অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক সরকার থাকলে তারা খুশি হন। এজন্যই ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে। লাঠিবৈঠার আন্দোলন করে ওই দলটি গণতন্ত্রের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের কারণেই বিগত দুই বছর অবৈধভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ পরিচালনা করেছে। এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে এই সরকার অাঁতাত করে ৰমতায় এসেছে। নির্বাচন কমিশনের অধীনে গত ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন হয়নি। এই সরকার জনগণের ভোটে ৰমতায় আসেনি। এজন্যই নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বেগম জিয়া বলেন, বর্তমানে আলুর কেজি ৩৫ টাকা আর বিএনপির আমলে ছিল মাত্র ৬/৭ টাকা থেকে ১২ টাকা। এখন ডালের কেজি ১০০ টাকার ওপরে আর বিএনপির সময় ছিল ৩৫ টাকার মতো। সরকারের মন্ত্রীরা দ্রব্যমূল্য নিয়েও সত্য কথা বলেন না। মন্ত্রীরা ভয় পাচ্ছেন কেন। এতেই বোঝা যায়, দেশ এই সরকার চালায় না।

No comments

Powered by Blogger.