কবিগুরুর বর্ষার গান দর্শক শ্রোতার মুগ্ধতা, গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা-জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের বর্ষা বন্দনা by মোরসালিন মিজান

এখন ভরা বর্ষা, পরিণত বয়স। বর্ষার সৌন্দর্য তাই চোখে পড়ছে খুব। সব বয়সী মানুষ উপভোগ করছেন। কান পেতে শুনছেন বৃষ্টির সুর ছন্দ। কেউ গায়ে মাখছেন নবধারা জল। কেউ জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। জলকনার স্পর্শ নিচ্ছেন। তবে যাদের কণ্ঠে গান আছে তাঁদের চেয়ে সুখী যেন আর কেউ হয় না।


বুধবার সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠান এর প্রমাণ। এখানে গাইতে আসা সকল শিল্পীর মুখে ছিল আনন্দের রেখা। বিভিন্ন বয়সী শিল্পীরা এদিন কবিগুরুর বর্ষার গান করেন। চমৎকার এ বর্ষাবন্দনার আয়োজন করে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ।
বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে মেখেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন শ্রোতা। ততক্ষণে সাজানো হয়ে গেছে মঞ্চ। দুই সারিতে হাঁটু ভেঙে বসেছেন ২৪ শিল্পী। সকলেই পরিষদের সদস্য। ছেলেরা নীল রঙ পাঞ্জাবি। সাদা জমিনে আকাশী রঙ মেখে নিয়েছেন মেয়েরা। খোঁপায় জড়ানো বেলী ফুল সুগন্ধ ছড়াচ্ছে। সবমিলিয়ে চমৎকার এক আবহ। প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ হতে হয়।
তবে গান শুরু হলে এ মুগ্ধতা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ভরপুর মঞ্চ একসঙ্গে কণ্ঠ ছাড়ে। প্রথমেই সঙ্গীতের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা। শিল্পীরা গেয়ে শোনানÑবিশ্ব বীণা রবে বিশ্বজনে মোহিছে।/ স্থলে জলে নভতলে বনে উপবনে/ নদীনদে গিরিগুহা-পারাবারে/ নিত্য জাগে সরস সঙ্গীত মধুরিমা...। এর পর বর্ষা কথন নিয়ে হাজির হন পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি শাহজাহান ফারুক। কেন এই আয়োজন সে কথা ব্যাখ্যা করেন তিনি। এরপর আবার গানে ফেরার পালা। এবার একক পরিবেশনা। শিল্পী পপি গেয়ে শোনানÑ আজি তোমায় আবার চাই...। শুক্লা পাল সেতু ও মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দা কণ্ঠে নেন সেই প্রিয় সুরÑ শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথ যামিনী রে।/ কূঞ্জপথে, সখি, কৈসে যাওব অবলা কামিনী রে...। দ্বৈত পরিবেশনা থেকে ফের সমবেত কণ্ঠ। এবারও মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতা। এভাবে একক ও সমবেত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে পরিষদের শিল্পীদের পাশাপাশি গান করেন আমন্ত্রিত শিল্পীরা। এমন আকুল করা বর্ষায় প্রিয়জন পাশে না থাকার বেদনা ঝরে ইফ্ফাত আরা দেওয়ানের কণ্ঠে। তিনি সুরে সুরে বলেনÑ অনেক কথা বলেছিলেম কবে তোমার কানে কানে/ কত নিশীথ-অন্ধকারে, কত গোপন গানে গানে...। ফাহিম হোসেন চৌধুরীর কণ্ঠেও একই রকম বিয়োগ ব্যথা। স্মৃতিচারণ। তিনি গেয়ে শোনানÑ পূব হাওয়াতে দেয় দোলা আজ মরি মরি।/ হৃদয় নদীর কূলে কূলে জাগে লহরী।/ পথ চেয়ে তাই একলা ঘাটে বিনা কাজে সময় কাটে,/ পাল তুলে ওই আসে তোমার সুরেরই তরী...। আজিজুর রহমান তুহিনের কণ্ঠে ছিল প্রেম। সুরে সুরে তিনি বলেনÑ আমার প্রিয়ার ছায়া/ আকাশে আজ ভাসে, হায় হায়!/ বৃষ্টিসজল বিষণœ নিশ্বাসে, হায়...। অন্যদের মধ্যে সুতপা সাহা পরিবেশন করেন ‘আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে’। সুমাইয়া ইমাম ইমা পরিবেশন করেন ‘আজি গোধূলী লগনে’। সুকান্ত চক্রবর্তী ও সেমন্তী মঞ্জরী দ্বৈত কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা’। ইলোরা আহমেদ শুক্লার কণ্ঠে ছিলÑ ‘বন্ধু রহো রহো’। এভাবে নবীন প্রবীণ শিল্পীদের পরিবেশনায় দারুণ উপভোগ্য হয়ে ওঠে আয়োজন। তবে পূর্ণতা পায় নৃত্য যোগ হলে। এদিন বর্ষার গান ছাড়াও ছিল মনোমুগ্ধকর নৃত্যের পরিবেশনা। ‘মোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় নৃত্যটি নিয়ে আসেন তাঁরই মেয়ে তাথৈ। প্রতিভাবান এ শিল্পী নাচেন ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ গানটির সঙ্গে। দলীয় পরিবেশনার সময় পুরো মঞ্চ ছিল ভরপুর। মা মেয়ের সঙ্গে এ সময় যোগ দেন আরও তিন শিল্পী সানজানা হক, অর্কপ্রিয়া ও ইরাবালা। সব মিলিয়ে অনবদ্য বর্ষা বন্দনা।

No comments

Powered by Blogger.