গবেষণা প্রতিবেদন-আলসেমি 'ধূমপানের মতোই' ভয়ংকর

ধূমপানজনিত কারণে বিশ্বে প্রতিবছর যত লোক মারা যায়, তার প্রায় সমপরিমাণ মারা যায় শরীরচর্চাসহ কায়িক পরিশ্রম না করার কারণে। এ দাবি করা হয়েছে গতকাল বুধবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে। গবেষকরা বলেছেন, সমস্যাটি এতই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, একে মহামারী বলে বিবেচনা করা উচিত।


তাঁদের মতে, মানুষকে শরীরচর্চার গুণাগুণ প্রচারের চেয়ে এখন তা না করার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানানোই জরুরি হয়ে পড়েছে।
ল্যানহেট চিকিৎসা সাময়িকীতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই কায়িক পরিশ্রম করেন না। এ কারণে বিশ্বে প্রতিবছর ৫৩ লাখ মানুষ মারা যায়। এতে বলা হয়, ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী লোকের প্রতিসপ্তাহে যত ঘণ্টা শরীরচর্চা বা কায়িক পরিশ্রম করা দরকার তা করেন না প্রতি ১০ জনের তিনজন। অঙ্কের হিসাবে এদের সংখ্যা ১৫০ কোটি। কিশোরদের অবস্থা আরো ভয়াবহ। দেখা গেছে, ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের প্রতি পাঁচজনের চারজনকেই তেমন একটা শারীরিক কর্মকাণ্ড চালাতে দেখা যায় না।
গবেষকরা জানান, কয়েক দিনের মধ্যেই লন্ডনে বসছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর অলিম্পিক। টেলিভিশনে সেরা সব ক্রীড়াবিদের ক্রীড়াশৈলী বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক দেখলেও তাঁদের বেশির ভাগই শারীরিকভাবে থাকবেন নিষ্ক্রিয়। তাঁরা ঘরে শুয়ে-বসেই তা প্রত্যক্ষ করবেন। এমন সময়ই লোকদের সামনে জীবনে শরীরচর্চার আবশ্যকীয়তার বিষয়টি ওঠে এলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ব্রেস্ট ও কোলন ক্যান্সারের মতো রোগে মৃত্যুর প্রতি ১০টি ঘটনার মধ্যে একটি হচ্ছে কায়িক পরিশ্রম না করা। এই সমস্যা রোধে নতুন করে ভাবতে হবে। শরীরচর্চার গুণাগুণ সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার বদলে এখন এর অভাবে কী করুণ পরিণতি হতে পারে, তার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি বলে মনে করছেন গবেষকরা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩৩ জন গবেষক বিষয়টি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করেন। তাঁদের মতে, সরকারগুলোর উচিত, শরীরচর্চাজনিত কর্মকাণ্ডকে আরো সুবিধাজনক, সহজলভ্য ও নিরাপদ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা।
প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টা হাঁটা, সাইকেল চালানো কিংবা বাগান পরিচর্যার মতো মাঝারি ব্যায়াম করা দরকার বলে মনে করেন গবেষকরা। প্রতিবেদনে দেখা যায়, উচ্চ আয়ের দেশগুলোর লোকের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রমের প্রবণতা কম। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক লোকের দুই-তৃতীয়াংশই তেমন কায়িক পরিশ্রম করেন না। তবে গবেষকরা এ কথাও স্বীকার করেছেন, এ বিষয়ে দেশভিত্তিতে তুলনা করা কঠিন। কারণ, স্থানভেদে শারীরিক কর্মকাণ্ড হিসাবের উপায়ও ভিন্ন হতে পারে।
দলের অন্যতম গবেষক পেদ্রো হালাল বলেন, 'বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ আজ স্পষ্ট। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে শারীরিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে হবে।'
যুক্তরাজ্যের ফ্যাকাল্টি অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক লিন্ডসে ডেভিসও গবেষকদের এ মতের সঙ্গে একমত, 'জনগণকে তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া ও দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় করার বিষয়টি যাতে আরো সহজ করা যায় সে ব্যাপারে আমাদের যা প্রয়োজন সেটা করতে হবে।' তিনি জানান, এ ব্যাপারে পারিপাশ্বর্িক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্থানীয় বিভিন্ন পার্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথার জানান তিনি।
অনেকেই অনেক সময় নির্দিষ্ট কোনো পার্কে হাঁটতে কম নিরাপদ বোধ করেন।
গবেষকরা শরীরচর্চা না করার কারণে মৃত্যুর ঘটনা ধূমপানজনিত মৃত্যুর সমান হওয়ার বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার গবেষণা সংস্থার চিকিৎসক ক্লেয়ার নাইট বলেন, 'ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রধান কাজটি হলো ধূমপান থেকে বিরত থাকা।' সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.