সুপ্রিম কোর্টের রায়-আইএসআইয়ের রাজনৈতিক শাখা অবৈধ, বাতিলের নির্দেশ

পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) রাজনৈতিক শাখা থাকলে তা বাতিলের নির্র্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগ এনে বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ারভাইস মার্শাল আসগর খানের দায়ের করা আবেদনের শুনানি শেষে গত সোমবার


আদালত এ রায় দেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ আদেশে বলেছেন, আইএসআইয়ের যদি কোনো রাজনৈতিক শাখা থেকে থাকে তবে তা অবৈধ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবিধান-বহির্ভূত হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। পাকিস্তানের এঙ্প্রেস ট্রিবিউন পত্রিকা এ খবর জানায়।
সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আসগর খানের অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯৯০ সালের সাধারণ নির্বাচন প্রভাবিত করার জন্য সেনাবাহিনী তৎপরতা চালিয়েছে। ওই নির্বাচনে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) জয় ঠেকাতে সেনাবাহিনী ৪০ কোটি রুপি খরচ করে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ওই অর্থের মধ্যে ১৪ কোটি রুপি সেনা সমর্থিত রাজনৈতিক দল ইসলামী জামহুরি ইত্তেহাদসহ (আইজেআই) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের 'ঘুষ' দেওয়া হয়। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মির্জা আসলাম বেগ ও প্রেসিডেন্ট গোলাম ইসহাক খানের নির্দেশে আইএসআই অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে। এ মামলা পাকিস্তানে আসগর খান মামলা হিসেবে পরিচিত। আসগর খান বর্তমানে তেহরিক-ই-ইসতিকলাল দলের প্রধান।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে আইএসআইয়ের রাজনৈতিক শাখা গঠনের প্রজ্ঞাপনসহ তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্য আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিলেও সরকারের তরফে বরাবরই বলা হয়েছে, আইএসআইয়ের এ ধরনের কোনো শাখার অস্তিত্ব নেই।
১৯৭৫ সালের মে মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর সরকার আইএসআইয়ের এই রাজনৈতিক শাখা খোলে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত সোমবারের শুনানিতে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে আইএসআইয়ের রাজনৈতিক শাখাসংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের পুনর্নির্দেশ দেন। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল ইরফান কাদির এবারও তা দিতে ব্যর্থ হন। কাদির জানান, আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আসাদ দুররানির দেওয়া সারসংক্ষেপেও রাজনৈতিক শাখার সপক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, দুররানি ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আইএসআইয়ের প্রধান ছিলেন। তিনি আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আইএসআইয়ের কোটি কোটি রুপি বণ্টনের কথা স্বীকার করেন।
রায়ে আদালত বলেন, 'গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবিধান-বহির্ভূত হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। সংবিধানে যেভাবে বলা আছে সেভাবেই সব কিছু চলা উচিত।' বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি হচ্ছেন জাওয়াদ এস খাজা ও খিলজি আরিফ হুসাইন। আদালত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহারের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, 'গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকবে। আমরা খুশি যে, দেশে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী এসেছেন। পাকিস্তানে বাংলাদেশের মডেল চালু করতে দেওয়া যাবে না।'
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সচিব নার্গিস শেঠিও এ দিন আদালতে সাক্ষ্য দেন। তিনি আদালতকে জানান, তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আইএসআইয়ের রাজনৈতিক শাখার বিষয়ে জানাতে অনেক অনুসন্ধান চালিয়েছেন। কিন্তু এমন কেনো রাজনৈতিক শাখার অস্তিত্ব তাঁরা পাননি। এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষা বিভাগ ও মন্ত্রণালয় উভয় বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আরো অনুসন্ধান চালাবেন বলে জানান তিনি। তবে তিনি এও বলেন, যেহেতু বিষয়টি ৩৮ বছরের পুরনো তাই এ ধরনের প্রজ্ঞাপন থাকলেও তা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। সূত্র : ডন, জিনিউজ।

No comments

Powered by Blogger.