নতুন মুদ্রানীতি লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি হ্রাস

আর্থিক খাতের পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে প্রাধান্য দিয়ে বছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য সংযত মুদ্রানীতি ঘোষণা করল বাংলাদেশ ব্যাংক। ঘোষিত এ মুদ্রানীতিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিচক্ষণ মুদ্রানীতি হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, এই মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি কমানোর পাশাপাশি বেসরকারী খাতে ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করার সবরকম ব্যবস্থা


রাখা হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে বাজেটে ঘোষিত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বুধবার গবর্নর ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নতুন মেয়াদের এই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
মুদ্রানীতি ঘোষণা করে গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গড় মূল্যস্ফীতিকে সিঙ্গেল ডিজিটে (৭ দশমিক ৫ শতাংশ) নামিয়ে আনাই ঘোষিত মুদ্রানীতির বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চাহিদা প্রবৃদ্ধির পরিমিতির পাশাপাশি যোগান প্রসারের দিকেও ঘোষিত মুদ্রানীতির সমর্থন থাকবে। এই লক্ষ্যে বেসরকারী খাতে ঋণ যোগানে অনুৎপাদনশীল কর্মকা-ে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করার ধারা অব্যাহত থাকবে। কৃষি এবং উৎপাদনমুখী ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত ঋণ যোগানের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা ও ঋণনীতি আগের মতোই সক্রিয় থাকবে।
তিনি বলেন, এই মুদ্রানীতি অর্থনীতির বহিঃখাতের সামর্থ্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় সক্রিয় থাকবে। বিদেশী মুদ্রার একটা স্বস্তিজনক মজুদ এবং তা বছর শেষে সামগ্রিক লেনদেনের ওপর একটা স্বস্তিকর ভারসাম্য রক্ষায় মুদ্রানীতির দৃষ্টি সর্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। তবে বিশ্ববাণিজ্যে মন্থর প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন তেমন উচ্চভিলাষী মাত্রায় ধরা হয়নি বলে জানান গবর্নর। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ টাকার বিনিময়হারে বাজারভিত্তিক নমনীয়তা বজায় রাখা ও অস্বাভাবিক অস্থিতিশীলতা এড়াবার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রায় সীমিত রাখা হবে।
মুদ্রানীতিতে খাতভিত্তিক যোগান ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা জানিয়ে গবর্নর বলেন, এ বছর ডিসেম্বরে রিজার্ভ মুদ্রার যোগানে ১৪.৫ শতাংশ এবং ব্যাপক মুদ্রার যোগানে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। এতে বেসরকারী খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির হার হবে ১৮.৩ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছর শেষে অর্থাৎ জুনে রিজার্ভ মুদ্রার যোগানে প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ, ব্যাপক মুদ্রার যোগান বাড়বে সাড়ে ১৬ শতাংশ হারে। এছাড়া বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ১৮ শতাংশ, যা জাতীয় বাজেটে প্র্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পর্যাপ্ত হবে বলে আশা করছি।
মূল্যস্ফীতি বিষয়ে তিনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, গত অর্থবছরের শেষ মাসে মূল্যস্ফীতি কমে এলেও বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরেই ছিল। ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ। এই হারকে বাজেটের প্রত্যাশা অনুযায়ী ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনাই নতুন মুদ্রানীতির অন্যতম লক্ষ্য।
সরকারের ঋণ সম্পর্কিত বিষয়ে মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, সরকারের ঋণ যাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তারল্য কমিয়ে না দেয়Ñসেদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষভাবে নজর রাখবে। এছাড়া বিদেশী মুদ্রা বিনিময় হারের ‘অতি অস্থিরতা’ রোধ করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সরকারী বন্ডের প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকের ওপর চাপ কমাবে বলেও মুদ্রানীতিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
মুদ্রানীতিকে ঘিরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক কর্মকা- উল্লেখ করে গবর্নর বলেন, অর্থবছরের মুদ্রানীতি কার্যক্রম অনুযায়ী আর্থিক খাত সংহতকরণের প্রয়োজনে নতুন ঋণ শ্রেণীবিন্যাস এবং প্রভিশনিং অনুশাসন প্রবর্তিত হয়েছে, যা চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন ব্যবস্থায় প্রভিশনিং ব্যাংকগুলোকে সম্পন্ন করতে হবে। এই পদক্ষেপ ব্যাংক মুনাফায় সাময়িক প্রভাব ফেললেও তা সামগ্রিক তারল্য ও ঋণ যোগানে বিরূপ কোন প্রভাব ফেলবে না। সরকারী সিকিউরিটিজের নিলামগুলোয় প্রাইমারি ডিলারদের ওপর ডেভেলপমেন্টজনিত তারল্য চাপ উপশমে বাংলাদেশ ব্যাংক অচিরেই কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করবে। আমানত ও ঋণের স্প্রেড কমানোর চাপও অব্যাহত থাকবে নতুন মুদ্রানীততে।

No comments

Powered by Blogger.