এই প্রজন্মের জীবনবোধ by ইসমাত জেরিন খান

এই তো সেদিন আড্ডায় আলোচনা হচ্ছিল আমরা যারা এ প্রজন্মের সন্তান তাদের মূল্যবোধ দিন দিন কমে যাচ্ছে কেন? এই কেনÑএর উত্তর খুঁজতে অনেক কেন-এর উত্তর বের হয়ে এল। শুরুটা হয়েছিল আসলে জীবনের মানে কি। তাই নিয়ে আড্ডা জমে উঠল। সবার সমন্বয়ে শেষ পর্যন্ত আড্ডায় স্বীকৃতি পেল জীবন মানে চাওয়া-পাওয়ার খেলা।


একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সারাদিনের কর্মব্যস্ত জীবন শেষে সে যখন বিছানায় ঘুমাতে যায় তখন চোখ বন্ধ করে কোন কিছু না ভেবে এক নিঃশ্বাসে বলতে পারাÑ আমি সুখী।
‘সুখী’ শব্দটির সাথে অনেক শব্দের সংমিশ্রণ রয়েছে। কেউ অল্প কিছুতে সুখী আবার কারও জীবনে কোন কিছুর অভাব না থাকলেও সে সুখী না।
জীবন এবং সুখের পরে মানুষের জীবনে সক্ষমতা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু সক্ষমতা শব্দটির স কেটে দিলে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে ক্ষমতা। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় ক্ষমতা শব্দটি এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে সমাজে টিকে থাকতে হলে ক্ষমতার অপব্যবহার খুব বেশি দরকার।
কিছু কিছু মানুষের জীবনে ক্ষমতার চেয়ে টাকা খুব বেশি গুরুত্ব পায়। কারণ টাকা থাকলে ক্ষমতাকে কিনে নেয়া যায়।
কিন্তু টাকা এবং ক্ষমতার প্রভাবে মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বোধ নামক শব্দটি। তাই জীবনে ভাল থাকার জন্য বোধ ক্ষমতাকে বিসর্জন দিয়ে অনেকেই কৃত্রিম হাসির ফাঁদে আটকে রাখছে মানুষের জীবন।
কিন্তু সুখের পাশাপাশি যে শব্দটি অলঙ্কার হিসেবে কাজ করে তা হচ্ছে দুঃখ।
বর্তমান সমাজব্যবস্থায় এই প্রজন্ম হারিয়ে যাচ্ছে সাফারিং, সেডনেস, স্ট্রাগেল, লো অফ সেলফ স্টান, ডিপ্রেশন, মিজারি ফিয়ার অব রিজার্ভেশন, গিলটি ফিলিংস এ রকম হাজারো শব্দের ভিড়ে।
তাই এ প্রজন্ম কোন কিছু চাইলে তা পরিবর্তন না করে মেনে নেয়ার প্রবণতা প্রবল। তাই মনোবিজ্ঞানীরা সব সময় একটি কথা বলেনÑ হ্যাঁ বলতে শিখুন। তাহলে জীবনটি অনেক বেশি সুন্দর হবে। সেই সঙ্গে কিছু পেতে চাইলে প্রবল ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে জয় করা।
অনেক সময় না শোনার ভয়ে অনেক কথা না বলাই থেকে যায়। কিন্তু এমনও হতে পারে হয়ত সেই না বলা কথাটি হ্যাঁ হতে পারত।
নতুন প্রজন্মের প্রতি কিছু পরামর্শ
* আমি কি তা প্রমাণ করার জন্য হাতে ট্যাটু, চোখে কালো চশমা, ছেঁড়া জিন্সের প্যান্ট আর দামী গ্লাক্সি মোবাইলের খুব বেশি দরকার নেই। নিজেকে প্রথমে বোঝা আমি কি এবং আমি কি চাই।
* বিষণœতাকে জয় করা। নতুন প্রজন্মের সহ্য ক্ষমতা অনেক কম বলে অনেকেই বলে থাকে। কিন্তু কেন সহ্য ক্ষমতা কম তা কারও খুঁজে দেখার সময় হয়নি। ওয়েস্টার্ন কালচারে নিজেদের গা ভাসিয়ে দিয়ে নিজেদের ঐতিহ্যকে ভুলে যাওয়া আজকের সমাজে প্রতিদিনের ঘটনা। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ।
মেকানিক্যাল লাইফ আটকে আছে কম্পিউটার, আইপ্যাড, আইফোন, মোবাইল, টেলিভিশন এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে। মানুষ এত বেশি কৃত্রিম জীবনযাপন করছে যে সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে গেছে। বর্তমানে যেসব সন্তান ড্রাগে বা মাদকাসক্তে আসক্ত এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের সঙ্গে বন্ধন কমে যাওয়া অন্যতম কারণ, টাচ বা স্পর্শ যেমন ছোট শিশুটির মুখে হাসি আনে, তেমনি স্পর্শের বন্ধন একটি পরিবারের একটি সন্তানকে পরিবর্তন করতে যথেষ্ট।
এ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট

একটি পরিবারের সন্তান তখনই নিজেকে বিপদের দিকে নিয়ে যায় যখন সে রাগকে ম্যানেজ করতে পারে না। আর এ কারণেই পরিবারে অশান্তি বাড়তে থাকে। কিভাবে রাগকে কন্ট্রোলে রাখা যায়? কিভাবে বিষণœতাকে কাটানো যায়, কিভাবে জীবনটাকে সুন্দর করে গোছানো যায় এ সহজ প্রশ্নগুলোর সমাধান কিন্তু আমাদের নিজেদের কাছেই আছে। পরিবারেই যদি রি-ওয়ার্ড এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়।
পরিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মন খুলে নিজের কথা বলা যায় তাহলে সমস্যাগুলো অনেকাংশেই কাটানো সম্ভব। একটি মানুষ নিজেকে সুখী করতে চাইলে সবার আগে তার জমানো কথাগুলো কোন বিশ্বস্ত মানুষের কাছে শেয়ার করা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যখন কেউ মনোযোগ দিয়ে সমস্যাগুলোর কথা শুনবে তখন অনেকাংশেই কেটে যাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশী কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা আছে। প্রয়োজনে কাউন্সিলিং করা। মানুষ তার নিজের জীবনের অনেক কিছু নিজেই পরিবর্তন করতে পারে। তবে শেয়ার করার সময় অবশ্যই সঠিক মানুষের সাথে শেয়ার করতে হবে। একজন পিতা পারে ভাল বন্ধু হতে। একজন মা পারে তার মেয়ের সবচেয়ে ভাল বন্ধু হতে। ভাই তার বোনকে এবং বোন তার বোনকে পারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। তাই বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি দরকার পারিবারিক সম্পর্ককে আরও বেশি বাড়ানো, সবশেষে একজন মানুষ নিজেই পারে নিজেকে পরিবর্তন করতে এবং নিজের বোধকে জাগ্রত করতে।
ছবি : নিয়াজ, মডেল : নবীনা, প্রমীলা, ইমরান

No comments

Powered by Blogger.