পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ-বাস্তব পদক্ষেপ চাই

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে_ বর্তমান সরকারের ঘোষিত এ নীতি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে যথেষ্ট উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বিমানবন্দর, সার উৎপাদন, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন, নদ-নদী খনন, মহাসড়ক ও রেলপথ নির্মাণ,


সমুদ্রবন্দর প্রভৃতি খাতের জন্য অনেক উন্নয়ন প্রকল্পও এ জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। পরপর দুই বছরের জাতীয় বাজেটে এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য অর্থও বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু তা বাস্তবে রূপ দিতে প্রশাসনের তরফে যে ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার ছিল, তা এ পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি। প্রকৃতপক্ষে সরকার বেসরকারি খাতের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার জন্য উপযুক্ত নীতিমালাই এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি। এমনকি কার্যকর একটি প্রশাসনিক কাঠামোও গড়ে তোলা যায়নি। যৌথ উদ্যোগের এক একটি প্রকল্পেই কয়েকশ' কোটি টাকা, এমনকি চার-পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়ে যেতে পারে। অথচ সরকার এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন উপ-সচিব ও কয়েকজন অধস্তন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পেরেছে পিপিপির অস্থায়ী অফিসে। একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ প্রদানের বিষয়টি তাদের বিবেচনাধীন; কিন্তু তিনি সাবেক আমলা হবেন, নাকি বেসরকারি খাত থেকে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে সেটা স্পষ্ট নয়। সরকার সবকিছু গুছিয়ে ফিটফাট হবে এবং তারপর বেসরকারি খাতের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, চুক্তি সম্পাদন ও বাস্তবায়নের কাজে নেমে পড়বে, এমনটা আশা করা যায় না। কিন্তু বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ভরসা রাখতে পারে, এমন একটি কাঠামো অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক প্রকল্প নিয়ে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কোনো প্রকল্প চূড়ান্ত করা যায়নি। প্রতিবেশী ভারতে পিপিপির আওতায় অবকাঠামো খাতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এ ধারণা যথেষ্ট পুরনো। আমরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারি। বেসরকারি খাতের যারা মূলধন খাটাবেন, পর্যাপ্ত আর্থিক ও নীতিগত প্রণোদনা না থাকলে তারা এগিয়ে আসবেন না, এটা স্বাভাবিক। বিনিয়োগের ঝুঁকির মাত্রা যেন সর্বনিম্ন থাকে, সে বিষয়েও তারা নিশ্চিত হতে চাইবে। দু'পক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের গতিতেও থাকা চাই সামঞ্জস্য। আমাদের দেশে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জটিল এবং প্রায়ই মন্থর। সরকারি কর্মকর্তারা এমনকি জরুরি কর্মপন্থা গ্রহণ করতে গিয়েও এক পা আগান তো দুই পা পিছিয়ে যান। এ ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করলে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণের জন্য দেশের বা বাইরের কাউকেই আগ্রহী করে তোলা যাবে না। দেশের প্রবৃদ্ধির হার ৬-৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮-১০ শতাংশে নিয়ে যেতে হলে বিনিয়োগ বিপুলভাবে বাড়াতে হবে এবং এ জন্য আধুনিক অবকাঠামো গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এ কাজে বেসরকারি খাত মূল্যবান অবদান রাখতে পারে এবং পিপিপির উদ্যোগ হয়ে উঠতে পারে তা বাস্তবায়নের উপযুক্ত মাধ্যম। এ উদ্যোগ শুধু কাগুজে হয়ে না থাকুক, এটাই কাম্য।
 

No comments

Powered by Blogger.