প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে- খোলা চিঠি by মোনায়েম সরকার

মান্যবর প্রধানমন্ত্রী, সালাম নেবেন। আপনার কাছে অভিযোগ জানানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আপনার কয়েকটি মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা প্রকাশ করার পর থেকে অনেকের সঙ্গেই আপনার সরাসরি কথা হচ্ছে। এটা একটি ভালো উদ্যোগ।


যাত্রাবাড়ীর একজন নারী বাসযাত্রী যাতায়াতের সমস্যার কথা আপনাকে জানানোর পর ওই রুটে নারীদের পৃথক দুটি বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে পত্রিকায় খবর পড়ে আমার মতো অনেকেই খুশি হয়েছে। মানুষের সমস্যার কথা জেনে তাৎক্ষণিক তার সমাধান করার ব্যাপারে আপনার যে আন্তরিকতা তার প্রশংসা করতেই হয়। এই ধারা অব্যাহত রাখুন। টেলিফোনে আপনার সঙ্গে যাঁরা কথা বলছেন তাঁরা নানা ক্ষেত্রে যে-সব সমস্যা ও অসঙ্গতি বিরাজ করছে সে-সব কথা কতটুকু বলছেন, আর কতটুকু আপনার প্রশংসা করছেন সেটা অন্যদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আপনার মিডিয়া সহকারী গণমাধ্যমকে যতটুকু তথ্য সরবরাহ করে ততটুকুই প্রকাশ প্রায়, মানুষ জানতে পারে। তবে দেশের বেশিরভাগ মানুষ যে টেলিফোনে বা ই-মেইলে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না কিংবা করতে চায় নাÑ সেটাও ঠিক। সঙ্কোচ আছে, সুযোগের অভাব আছে, এমনকি আছে ভয়ভীতিও। নানাদিক বিবেচনা করে আমি আজ আপনার কাছে এই খোলা চিঠি লেখার গরজ বোধ করছি। চিঠিটি আপনার গোচরে এলে এবং সময় করে এটা আপনি পড়লে আমার ভালো লাগবে।
আপনি জানেন যে, আমি একজন সামান্য রাজনৈতিক কর্মী। সেই ষাটের দশক থেকেই দেশের রাজনীতির নানা উত্থান-পতনের ঘটনা অত্যন্ত কাছ থেকে দেখে আসছি। দীর্ঘকাল সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও এখন আর তা নেই। তবে বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহায়ক বিবেচনা করে কিছু কিছু কাজকর্ম নিজ উদ্যোগেই করে থাকি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমার রয়েছে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাবোধ। কারণ তিনি আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না বলে বিশ্বাস জাগিয়েছেন এবং সর্বোপরি তাঁর নেতৃত্বেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের সঙ্গে নিজেকে নিবিড়ভাবে জড়িত রাখাই আমার স্বপ্ন-সাধনা। সে জন্যই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এবং দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের ভালোমন্দের সঙ্গেও নিজেকে সব সময় অবিচ্ছিন্ন মনে করি। আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আপনার হাত ধরেই বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই যে-কোন ক্ষেত্রে আপনার সাফল্য যেমন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মতো আমাকেও অনুপ্রাণিত করে, তেমনি কোন ক্ষেত্রে সামান্য ব্যর্থতাও যথেষ্ট বিচলিত করে তোলে। আপনার একজন নিত্য শুভার্থী হিসেবে কয়েকটি কথা আপনার কাছে পেশ করা জরুরী মনে করছি।
এক. ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে আপনার নেতৃত্বে মহাজোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে। আপনার জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। আপনাকে রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করার অশুভ অপতৎপরতায় যারা লিপ্ত ছিল, দেশের মানুষই তাদের গালে চপেটাঘাত করেছে। দেশের গণমাধ্যমগুলোও ছিল আপনার পক্ষে, আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু আজ সাড়ে তিন বছর পর পরিস্থিতি আর সেই জায়গায় নেইÑ এটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে। অনেকেই আজ বলছেন যে, দেশের গণমাধ্যমের সঙ্গে আপনার এবং আপনার সরকারের একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আপনাকে ‘মিডিয়াবান্ধব’ প্রধানমন্ত্রী বলা হয়। তারপরও কেন মিডিয়া আজ আপনার সরকারের প্রতি কিছুটা বৈরী, সেটা এখনই খুঁজে বের করা দরকার। দ্রুত মিডিয়ার সঙ্গে দূরত্ব কমাতে না পারলে আগামী নির্বাচনের সময় চরম মূল্য দিতে হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক লেখকের কাছেই আমি শুনেছি যে, তাদের লেখা দৈনিক পত্রিকাগুলো ছাপতে চায় না, বিশেষ করে সরকারের পক্ষের লেখা ছাপতে অনেক পত্রিকাই অনীহা প্রকাশ করে। আওয়ামী লীগের মতো এত পুরনো একটি দলের একটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা নেইÑ এটা কি ভাবা যায়? আপনি সরকারে এসে যে-সব দলীয় এমপি-মন্ত্রী কিংবা সমর্থকদের নামে টিভি লাইসেন্স দিয়েছেন, সে-সব টিভি চ্যানেল দেখলে অনেকেরই মনে হয় যে, ওগুলো বোধহয় বিরোধী দলের মুখপত্র। তথ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত তথ্য কর্মকর্তাবৃন্দ আসলে কি করেন? গণমাধ্যমের মালিক-সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিকসহ অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে তাদের কি কোন ধরনের যোগাযোগ আছে? সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরও কি তেমন কোন যোগাযোগ বা সুসম্পর্ক আছে? মাননীয় নেত্রী, আপনার প্রতি সবিনয় অনুরোধ, মিডিয়ার প্রতি নজর দিন, মিডিয়ার সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নিন।
দুই. পরবর্তী নির্বাচনের আর বেশি সময় বাকি নেই। আপনি নিজেই সম্প্রতি দলীয় এক সভায় বলেছেন যে, ১৭০-১৭৫ আসনে পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। আপনি নিজে এই তথ্য প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলে যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, সেটা খুব ভালো নয়। এমন কথাও শোনা যাচ্ছে যে, পরবর্তী নির্বাচনে আপনি যেমন ফলাফল আশা করছেন, সে রকম না হওয়ার সম্ভাবনাই নাকি বেশি। কেউ কেউ ২০০১ সালের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাও করছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তেমন মনে করি না। আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি, দেশের মানুষ পরবর্তী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটকেই ভোট দেবে। কারণ বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে দেশের অবস্থা কী দাঁড়িয়েছিল সেটা মানুষের জানা আছে। হাওয়া ভবনের দৌরাত্ম্যের কথা ভুলে মানুষ আবার তারেককে নেতা মানবেÑ এতটা বোকা আমাদের জনগণ নয়। মানুষের মনে নানা কারণে কিছু ক্ষোভ ও হতাশা আছে, কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়েছে, সেটা এখন পর্যন্ত ঠিক নয়। তবে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতার কথা অস্বীকার করা যাবে না। বিভিন্ন নির্বাচনে মানুষের মনোভাবের পরিবর্তনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এখনই যদি কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তাহলে মানুষ আর বিএনপি-জামায়াতের দিকে ঝুঁকবে না বলেই আমার বিশ্বাস। কি কি পদক্ষেপ এখনই নেয়া প্রয়োজন?
ক. কয়েকজন মন্ত্রী-উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে নানা কারণে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে আছে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। আবার কারও বিরুদ্ধে আছে অযোগ্যতা-অদক্ষতার অভিযোগ। কেউবা অতিকথন বা অপ্রয়োজনীয় কথা বলে মানুষের মনে বিরক্তির উদ্রেগ করছেন। মানুষের অভিযোগ কোনভাবেই আমলে না নিলে মানুষ অপমান বোধ করে এবং নির্বাচন এলে নেতিবাচক ভোট দিয়ে থাকে। তাই যে-সব মন্ত্রী-উপদেষ্টার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণে সমালোচনা ও অভিযোগ উঠেছে তাদের এখনই বাদ দিতে হবে। ব্যক্তি বিশেষের জন্য দল ও সরকারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। সমালোচিত ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সরকার থেকে দূরে সরিয়ে দিলে মানুষের মনে খুবই ভালো প্রতিক্রিয়া হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে তার সুফল পাওয়া যাবে।
খ. আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করে দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। গত কাউন্সিলে যাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়েছে, তারা যে যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি, সেটা সারাদেশে দলের বর্তমান অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। সরকারের মধ্যে দল হারিয়ে গেছে। আন্দোলন-সংগ্রামে পোড় খাওয়া আওয়ামী লীগের মতো অভিজ্ঞ একটি রাজনৈতিক দলের বর্তমান স্থবিরতা অপ্রত্যাশিত। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এমন একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে, যার সারাদেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সম্পর্ক আছে, যার প্রতি সব স্তরের মানুষের আস্থা আছে এবং যিনি মন্ত্রিসভার সদস্য না হয়ে দলের জন্যই সর্বক্ষণিক কাজ করবেন। এক বছরের মধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করে সারাদেশে দলকে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযুক্ত করে গড়ে তুলবেন। অভিজ্ঞতা থেকে এটা বলা যায়, চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্ব আর যাই হোক কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। আরেকটি বিষয় দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করতে হবে, তা হলো দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। নির্বাচনে ভালো ফল পেতে হলে ‘আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের শত্রু’Ñ এই অপবাদ ঘোচাতেই হবে।
গ. আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ যে-সব সংগঠনের যে-সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের দল থেকে বের করে দিতে হবে। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল। দলের যে সব কর্মী-সমর্থক দুর্বৃত্তপনায় লিপ্ত তারা দলের এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ করছে। তাদের প্রতি কোনভাবেই নমনীয়তা দেখানো চলবে না। সিলেটের এমসি কলেজের শতবর্ষের পুরনো ছাত্রাবাস যারা ভস্মীভূত করেছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। চাঁদাবাজদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। এদের দমন করতে না পারলে ভোটারদের মন বিগড়ে না গিয়ে পারে না।
ঘ. পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা ধরনের অভিযোগ আছে, তাদের কোনভাবেই মনোনয়ন দেয়া যাবে না। বিতর্কিত ব্যক্তিদের আবার প্রার্থী করলে ভোটারদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছবে। তারা মনে করবে, আওয়ামী লীগ ভালোর পক্ষ নিতে ভুলে গেছে। বিতর্কিত নেতাদের মনোনয়ন না দিয়ে গত নির্বাচনে যেমন সুফল পাওয়া গেছে, পরবর্তী নির্বাচনেও তেমনি বিতর্কিত-সমালোচিতদের বাদ দিয়ে ‘ক্লিন’ ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন দিলে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ঙ. মহাজোটের ঐক্য যাতে আগামী নির্বাচনেও অটুট থাকে তার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা রাখতে হবে। শরিক দলগুলোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ-অবিশ্বাস কিছু থাকলে সেগুলো অবিলম্বে দূর করতে হবে। বিরোধী পক্ষ যখন শক্তি বৃদ্ধির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে তখন আপনাকেও ভেতরের সমস্যা দূর করে ঘর গোছাতে মনোযোগী হতে হবে।
চ. একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারী ঘৃণ্য ঘাতক-দালালদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা দূর করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে বিচারের রায় কার্যকর করা হলে মানুষের মধ্যে বড় ধরনের উদ্দীপনা ও জাগরণ তৈরি হবে। বিচারের গতি শ্লথ হওয়ায় এ নিয়ে কারও কারও মনে কিছু সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। বিচার কাজ নিয়ে মানুষের মনে কোন ধরনের সংশয় সৃষ্টি হয়Ñ এমন কিছু করা চলবে না। দেশের বাইরে এটা নিয়ে অপপ্রচার-ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমাদের দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে লবিস্ট নিয়োগ করতে হবে। এটা বুঝতে হবে যে, পরবর্তী নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে পারা না পারা হবে আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় ইস্যু। বিচার সম্পন্ন করতে পারলে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ও তালেবানী রাজনীতির নৈতিক পরাজয় ঘটবে, তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো তাদের জন্য কঠিন হবে। এই অপশক্তির আছে বহু ছদ্মবেশ ও বহু ফ্রন্ট। ক্ষমতায় থাকলে এরা স্বৈরাচারী-ফ্যাসিস্ট। ক্ষমতা হারালে গণতন্ত্র ও দেশপ্রেমের সোল এজেন্ট। ১৯৭৫-এর মতোই এদের সম্মিলিত চক্রান্তের মুখে আওয়ামী লীগ এখন একা। আপনার প্রচার শক্তিও অত্যন্ত দুর্বল। বঙ্গবন্ধু সার্বিক জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠন করেছিলেন। ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্র ভেঙ্গে নির্বাচিত জেলা গভর্নর প্রথা চালু করতে চেয়েছিলেন। সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে পেশাগত বৈষম্য ও শ্রেণীভেদ দূর করে আর্থ-সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, এই সত্যটিকে সম্পূর্ণ চাপা দিয়ে আজও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়।
তিন. আজ আবার পদ্মা সেতু নিয়ে নতুন করে দেশে বিদেশে শোরগোল শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে দোলাচল চিত্তবৃত্তি পরিহার করে সরকারকে দৃঢ়তার সঙ্গে একমুখী নীতি নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। বিশ্বব্যাংকের কাছে নতজানু না হয়ে নিজস্ব সম্পদে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে আপনি জাতির আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তুলেছেন। আপনার এই অবস্থান মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু আপনি এক কথা বলবেন, আপনার মন্ত্রী-উপদেষ্টারা বলবেন ভিন্ন কথা, তাহলে মানুষ বিভ্রান্ত হবে। বৈদেশিক সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা নিশ্চয়ই অব্যাহত থাকবে। কিন্তু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ কাজ শুরু করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলে চলবে না। এ লক্ষ্যে সব দলমতের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আপনার নেতৃত্বে একটি পরামর্শ কমিটি করে কমিটির পক্ষ থেকে অর্থ সহায়তার আহ্বান জানালে তা খুবই ফলপ্রসূ হবে বলে আমার মতো অনেকেরই বিশ্বাস।
মাননীয় নেত্রী, কথায় আছে, ‘মানুষের মুখে জয়, মানুষের মুখেই ক্ষয়।’ কাজেই মানুষকে উপেক্ষা করা, মানুষের মতামতের প্রতি অবজ্ঞা দেখানো কোনভাবেই সমীচীন নয়। পরবর্তী নির্বাচনে যদি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে হয়, দেশকে যদি জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত রাখতে হয়, যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হয়, তাহলে উপরের বিষয়গুলো নিয়ে আপনাকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কালক্ষেপণ হবে আত্মঘাতী। আমার প্রস্তাবনা যদি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত নাও হয়, তাহলেও আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, এটা যেন আপনার মনে কোন রকম বিরূপতা তৈরি না করে।
আপনার সাফল্য, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

লেখক : রাজনীতিক, কলাম লেখক

No comments

Powered by Blogger.