পবিত্র কোরআনের আলো-আ'রাফবাসী উঁচু স্থান থেকে জান্নাতি ও জাহান্নামিদের দেখতে পাবে

৪৫. আল্লাযীনা ইয়াসুদ্দূনা আ'ন ছাবীলিল্লা-হি ওয়া ইয়াবগূনাহা য়ি'ওয়াজা; ওয়া হুম বিলআ-খিরাতি কা-ফিরূন।
৪৬.ওয়া বাইনাহুমা হিজা-বুন ওয়া আ'লাল আ'রা-ফি রিজা-লুন ইয়া'রিফূনা কুল্লাম্ বিছীমা-হুম; ওয়া না-দূ আসহা-বাল জান্নাতি আন ছালা-মুন আ'লাইকুম; লাম্ ইয়াদ্খুলূহা ওয়া হুম ইয়াত্বমাঊ'ন।


৪৭. ওয়া ইযা সুরিফাত্ আবসা-রুহুম তিলক্বা-আ আসহা-বিন না-রি ক্বা-লূ রাব্বানা লা-তাজআ'লনা মাআ'ল ক্বাওমিয্ যা-লিমীন।
৪৮. ওয়া না-দা আসহা-বুল আ'রা-ফি রিজা-লান ইয়া'রিফূনাহুম বিছীমা-হুম ক্বা-লূ মা আগ্না আ'নকুম জামউ'কুম ওয়া মা কুনতুম তাছতাকবিরূন।
[সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ৪৫-৪৮]

অনুবাদ : ৪৫. যারা আল্লাহর পথে চলতে মানুষকে বাধা দিত এবং এর মধ্যে (আল্লাহর নির্দেশের মধ্যে) বক্রতা খুঁজে বেড়াত এবং যারা পরকালকে অস্বীকার করত।
৪৬. আর এ দুই দলের (জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসী) মধ্যে একটা আড়াল থাকবে। আর আ'রাফে অর্থাৎ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী উচ্চতর স্থানে কিছু লোক থাকবে, যারা দলের লোকদের তাদের নির্দিষ্ট চিহ্নের কারণে চিনতে পারবে। তারা জান্নাতবাসীদের ডেকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। (এই আ'রাফবাসীরা) তখনো জান্নাতে প্রবেশ করেনি, তবে তারা সেখানে পেঁৗছার জন্য অপেক্ষা করছে।
৪৭. আর যখন তাদের দৃষ্টি জাহান্নামের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তখন তারা বলবে, হে প্রভু, আমাদের ওই জালিমদের সঙ্গী বানিয়ো না।
৪৮. অতঃপর আ'রাফবাসীরা যেসব জাহান্নামি লোককে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনবে, তাদের ডাক দিয়ে বলবে, তোমাদের দলবল ও ঐক্যবদ্ধতা তোমাদের কোনো কাজে এল না, আর তোমরা যে বড়াই করতে তাও না।

ব্যাখ্যা : ৪৫ নম্বর আয়াতটি আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসেছে। সেখানে কাফেরদের লক্ষ করে বলা হয়েছিল, হাশরের ময়দানে জাহান্নামের ফয়সালা হয়ে যাওয়ার পর তাদের জিজ্ঞেস করা হবে। আল্লাহ তায়ালা তাদের উদ্দেশে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা তারা সত্য পেয়েছে কি না। তারা তখন স্বীকার করবে যে প্রতিশ্রুতি সত্য হয়েছে, অর্থাৎ তারা জাহান্নামে নিপতিত হয়েছে। এরপর এক ঘোষক ঘোষণা করবে, আল্লাহর লানত জালিমদের প্রতি। এই আয়াতে সেই 'লানত'প্রাপ্তদের তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। সেই বৈশিষ্ট্যগুলো হলো, তারা আল্লাহর পথে মানুষকে বাধা দেয়, আল্লাহ ও রাসুলের বাণীতে বক্রতা খুঁজে বেড়ায় এবং পরকাল অস্বীকার করে।
৪৬ নম্বর আয়াতে আ'রাফবাসীদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়েছে। এর পরবর্তী কয়েকটি আয়াতেও আ'রাফবাসীদের ব্যাপারে আরো বিস্তারিত বর্ণনা আছে। আ'রাফ হচ্ছে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি উঁচু স্থান। বিভিন্ন তাফসিরকারের মতে, আ'রাফে অবস্থান করবে এমন সব লোক, যাদের সৎকাজ ও পাপকাজের পরিমাণ সমান সমান। তারা সাময়িকভাবে এখানে অবস্থান করবে। কোনো কোনো তাফসিরকারের অভিমত ভিন্ন। তাঁরা বলতে চেয়েছেন, আ'রাফ হচ্ছে উঁচু স্থান, অর্থাৎ উচ্চ মর্যাদার স্থান। এখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা। যেমন- নবী-রাসুল, আল্লাহর ওলি ও মহৎ নেতৃস্থানীয় লোক। এখানকার বিবরণে তাদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তাতেও মনে হয়, তারা উঁচু মর্যাদাসম্পন্ন আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে ঝুলে থাকা সমস্যাগ্রস্ত মানুষ বলে মনে হয় না। আ'রাফবাসীরা জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের সরাসরি দেখতে পাবে। যদিও জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে আড়াল থাকবে, তবু আ'রাফবাসীরা তাদের দেখতে পাবে ওপর থেকে। তারা জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের চিনতে পারবে তাদের চিহ্ন দেখেও, যেমন তারা দুনিয়ায় তাদের দেখে চিনত। ৪৭ ও ৪৮ নম্বর আয়াতেও আ'রাফবাসীদের কথাই বলা হয়েছে, যারা জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের দেখে তাদের ডেকে কথা বলবে। তাদের এসব কথাবার্তা থেকেও বোঝা যায়, তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত নয়, বরং দুই ধরনের লোকের বেলায়ই আল্লাহর প্রতিশ্রুত পরিণতির বাস্তবায়ন দেখে উৎফুল্ল। তারা জান্নাতবাসীদের ডেকে সালাম দেবে এবং জাহান্নামবাসীদের দুনিয়ার আচরণের জন্য বিদ্রূপ করবে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.