নুহাশপল্লীতে দাফন আজ

নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদকে আজ মঙ্গলবার তাঁরই গড়া নুহাশপল্লীতে সমাহিত করা হবে। সকাল ৯টায় লেখকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে বারডেমের হিমঘর থেকে। দাফন হবে জোহরের নামাজের পর। লেখকের ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল গতকাল সোমবার রাত ২টা ১০ মিনিটে এ কথা জানান।


এর আগে পরিবারের সদস্যরা দফায় দফায় বৈঠক করেও দাফনের স্থানের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছিলেন না। হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন নুহাশপল্লীতে স্বামীকে সমাহিত করতে চাইলেও লেখকের প্রথম পক্ষের সন্তানরা নুহাশপল্লীতে বাবার কবর হোক, তা চাইছিলেন না।
হুমায়ূন আহমেদের দাফনের স্থান নিয়ে পরিবারের সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে গভীর রাতে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে নিয়ে ধানমণ্ডিতে লেখকের বাড়ি দখিন হাওয়ায় যান ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ওই বাড়িতে ছিলেন মেহের আফরোজ শাওন। নানক ও জাফর ইকবালের সঙ্গে ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও শাইখ সিরাজ। রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের জানান, কোথায় দাফন হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রাতের মধ্যেই সিদ্ধান্ত হতে পারে। এরপর আবার তাঁরা নানকের বাসায় যান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাত ৯টার পর সংসদ ভবন এলাকায় নানকের বাড়িতে এক দফা বৈঠক হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে দখিন হাওয়ায় যান তাঁরা। ওই বাসায় বৈঠকে হুমায়ূনের প্রথমপক্ষের তিন সন্তান নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ ও নুহাশ হুমায়ূন থাকলেও দখিন হাওয়ায় তাঁরা যাননি।
প্রতিমন্ত্রীর বাসায় যাওয়ার আগে সন্ধ্যার পর মিরপুরে চাচা আহসান হাবীবের বাড়িতে নোভা সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর বাবা বেঁচে থাকতেই বলেছেন, নুহাশপল্লী কবরস্থান হোক- তা তিনি চান না। নোভা বলেন, 'এ বিষয়ে ডকুমেন্ট আমাদের কাছে রয়েছে। আমরা চাই মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান বা অন্য কোথাও কবর হোক, নুহাশপল্লীতে নয়। আমরা চাই এমন একটা জায়গায় কবর হোক, যেখানে সবাই যেতে পারে।'
তবে স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন হুমায়ূনকে নুহাশপল্লীতে দাফন করার জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। শাওন বলেছেন, এটাই ছিল লেখকের শেষ ইচ্ছা।
গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, জাতীয় ঈদগাহে জানাজা হওয়ার পর হুমায়ূনের মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুসারে মঙ্গলবার তাঁর লাশ দাফন করা হবে।
হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ কোথায় সমাহিত করা হবে, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব চলাকালেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এক দফা বৈঠক হয়। শহীদ মিনারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ওই বৈঠকে মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব, শাওনসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হুমায়ূন আহমেদের শ্রদ্ধা নিবেদন মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে শোকগ্রস্ত শাওন একটি টেলিভিশনকে বলেন, 'আমি শুধু একটা কথাই জানি, নুহাশপল্লীকে সে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসত। প্রতিটি গাছ তার নিজের হাতে লাগানো। এসব গাছের সঙ্গে সে কথা বলত।' তিনি আরো বলেন, 'আমাকে সে বলেছে, যদি আমার কিছু হয়, সবাই আমাকে নিয়ে টানাটানি করবে। তুমি আমাকে নিয়ে টানাটানি করতে দিয়ো না। তুমি আমাকে নুহাশপল্লীতে নিয়ে যেয়ো। ওই গাছগুলোর কাছে আমাকে দিয়ে এসো।' মৃত্যুর আগে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর কোনো অচেনা জায়গায় তাঁকে দাফন করতে নিষেধ করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন শাওন। তিনি বলেন, 'নিউ ইয়র্কে অস্ত্রোপচারের আগের রাতে হুমায়ূন তাকে নুহাশপল্লীতেই দাফনের কথা বলে। তার সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। সে নুহাশপল্লীতেই শুয়ে থাকতে চেয়েছে।' হুমায়ূনের মরদেহের সঙ্গে গতকাল সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার পরও আবেগকাতর কণ্ঠে শাওন একই কথা বলেন।
গত শনিবার জানানো হয়েছিল, মঙ্গলবার বাদ জোহর গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদকে সমাহিত করা হবে। কিন্তু রবিবার নিউ ইয়র্ক থেকে দেশে ফিরে মুহম্মদ জাফর ইকবাল জানান, সমাহিত করার স্থান নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে নুহাশপল্লী নয়, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান কিংবা বনানী কবরস্থানে কবর দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। পরিবর্তিত এ সিদ্ধান্ত হুমায়ূনের স্ত্রী শাওনের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানানো হয়েছিল।
স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী শহীদ মিনারে সাংবাদিকদের জানান, সরকারি কোনো কবরস্থানে হুমায়ূন আহমেদকে দাফনের সিদ্ধান্ত হলে সরকারই সব খরচ বহন করবে।

No comments

Powered by Blogger.