সিডনির মেলব্যাগ- প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে উজ্জীবিত by অজয় দাশ গুপ্ত

বিশ্ব মূলত দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে উন্নয়নশীল দেশ, অন্যদিকে ধনী বা উন্নত নামে পরিচিত বাঘা দেশগুলো। তাদের কথা শুনে চললে বা আদেশ মান্য করলে তারা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে দান খয়রাতের পরিমাণও দেয় বাড়িয়ে। সে দান অনুদান বা সাহায্যের পরিণাম যে কি তার জ্বলন্ত উদাহরণ পাকিস্তান।


দীর্ঘকাল আমেরিকাও পাশ্চাত্যের সহচর অনুগামী ক্ষেত্রবিশেষে খাদেম এই দেশটির অবস্থা এখন ত্রিশঙ্কু। হাত পেতে খয়রাত নিতে নিতে নিজেদের দেউলিয়া করে ফেলা রাষ্ট্র বা জাতি কেউই মেরুদ- সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। নানা দিক থেকে ঐশ্বর্যপূর্ণ ও সম্পদশালী হবার পরও পাকিস্তান আজ তাই পঙ্গু। এই পঙ্গুত্ব রাজনীতির মতো জটিল বিষয়েও কার্যকর। দাতা দেশ নামে পরিচিত ‘বড়’ দেশ বা শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর এই পলিসিও পুরনো। ছলে বলে কৌশলে ঢুকে পড়তে পারলে তাদের থাবা নির্দিষ্ট কিছুতে থেমে থাকে না। দারিদ্র্যের কঠিন অভিশাপ বা শৃঙ্খলে মোড়ানো মানুষদের কতভাবে প্ররোচিত করা যায়, কত ভাবেই না তাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা সম্ভব। সে বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশ্ব মোড়ল বা ব্যাংক বা দাতা সংস্থার কবলে পড়ার অর্থই হচ্ছে মান খোয়ানো। জীবন নিয়ে সংশয়ে ডুবে থাকা। সংশয় এই কারণে প্রতিশ্রুতি, খয়রাত বা পিঠ চাপড়ানো সবই শর্তসাপেক্ষ। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত আমরা পড়েছি তাদের নজরে। এককালে যখন আমাদের চাল চুলো ছিল না, মাথার ওপর খোলা আকাশ, পায়ের তলায় শক্ত মাটিতে দাঁড়িয়ে বাঙালী যুদ্ধ করছিল তখন তাদের সময় ছিল না। স্বাধীন দেশের পরিশ্রমী নেতা নেত্রী বা উদ্যমী জনগণের প্রতিও অনুরাগ বা ভালবাসা ছিল না তাদের। ঝড়ঝঞ্ঝা দুর্দিন আর কঠিন সময় পার হয়ে বাংলাদেশ যখন প্রায় আত্মনির্ভর, তার পালে মন্দ মধুর হাওয়া লাগতে শুরু করেছে, দাতারাও ভালবাসার (?) বাহু বাড়িয়ে আলিঙ্গনে অধীর হয়ে উঠেছেন। গরিব দেশের সামান্য একটি সেতুর গল্প আজ তাই আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করেছে।
পৃথিবীতে বিশ্বব্যাংক এডিবি বা অন্য দেশের সাহায্য ছাড়াও সেতু নির্মিত হয়েছে। হবেও কিন্তু এখনও পদ্মাকে নিয়ে আজ আবার অন্য ধরনের গল্প আর আন্তর্জাতিক গুজব অথবা অভিযোগে বিশ্ববাঙালীর মন ভারি হয়ে আছে। আমাদের দেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুলের কবিতা ও গানে পদ্মাকে সব কিছু ভাসিয়ে নেয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।খরস্রোতা পদ্মা কি আমাদের মানসম্মানও ভাসিয়ে নিয়ে যাবে? হঠাৎ ফুঁসে ওঠা ঢেউ, অর্থ বিতর্ক বিশ্বব্যাংকের খবরদারি মিলে অবস্থা যখন ত্রাহি ত্রাহি, ঠিক এখনই রুখে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এই রুখে দাঁড়ানোর খুব প্রয়োজন ছিল। এটা যে সময় উত্তীর্ণ ও কালজয়ী পদক্ষেপ সময়ই তার প্রমাণ দেবে। আমরা দূর দেশে থেকেও দেখছি দেশে একদল মানুষ নানা কারণে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের মু-পাত করে ব্যাপক আনন্দে মশগুল। ভাল মন্দ বা সবকিছু বিবেচনা করা ব্যতিরেকেই সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আগ্রহী। এরা জ্ঞানপাপী। এরা নিশ্চিত জানেন বড় ধরনের কোন ইশারা বা লবিং ব্যতীত সাহায্য বন্ধ হবার কথা নয়। সবচেয়ে বড় কথা বিশ্বব্যাংক বা অভিযুক্ত কেউই খোলাসা করে এখনও সব কিছু বলেনি। তার পরও হৈ চৈ আর নিন্দার স্রোতে ভেসে চলেছি আমরা। দেশ ও জাতির ইমেজের প্রতি কটাক্ষ আর মানহানির কঠিন সময়ে রুখে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী দেশের তো বটেই প্রবাসী বাংলাদেশীদেরও সম্মান বাঁচিয়েছেন। বাঙালী তার প্রতি আরো একবার কৃতজ্ঞভাজন হয়ে উঠেছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ সব সময় আসে না। বিশেষত দুর্যোগ বা দুঃসময়ে একতাবদ্ধ হবার প্রয়োজনীয়তা শীর্ষে থাকলেও নেতৃত্বের অভাবে তা হয়ে ওঠে না। অথচ সঠিক নেতৃত্ব আর দিকনির্দেশনা থাকলে যে কি হয় মুুক্তিযুদ্ধই তার উজ্জ্বল উদাহরণ। ফলে শেখ হাসিনার স্বনির্ভর সেতু নির্মাণের আহ্বান ব্যাপক সাড়া জাগাবে এটাই স্বাভাবিক। প্রবাসীদের আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস দেখে এটুকু নিশ্চিত বলা যায়, তাঁরা থাকবেন পাশে। কিন্তু আমি কিছু মিশ্র পতিক্রিয়া দেখছি।
প্রবাসীরা বর্তমান সরকারের স্বচ্ছতা আর গণতন্ত্রের স্বার্থেই সুষ্ঠু তদন্ত আর দোষীর বিচার চায়। মন্ত্রী আমলা বা ক্ষমতাবান হলেই ছাড় পেয়ে যাবেন এমনটি যেন না হয়। সত্যি কথা বলতে কি এই একটা জায়গাতেই অবস্থান পরিষ্কার করার প্রয়োজনীয়তা আজ শীর্ষে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী দুটি পৃথক ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ বা অনুমোদন দেয়াতেও প্রবাসীরা সন্তুষ্ট। বৈদেশিক মুদ্রায় প্রেরিত অর্থ বা সহায়তার ন্যায্য হিসাব চায় তাঁরা। তাঁরা নিশ্চিত জাতির জনকের কন্যার সদিচ্ছা ও বিশ্বস্ততার জুড়ি নেই। কিন্তু মধ্যস্বত্ব¡ভোগী বা ফড়িয়ারা চিরকাল তৎপর। তাদের জ্বালায় বা অত্যাচারেই দেশ দল ও জনগণের যত দুর্দশা। প্রবাসীরা পদ্মা সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের টাকায় চাঁদাবাজি বা নয়ছয় দেখতে চায় না। তাদের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে সেতু নির্মাণের অর্থব্যয় আর দোষী বা অভিযুক্তদের বিষয়ে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির বহির্প্রকাশ। এদিকে প্রবাসে বিশেষত অষ্ট্রেলিয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষ শক্তির সাংগঠনিক ক্ষমতা যেমন প্রবল তেমনি সমর্থনও অধিক। এই কারণে তার অস্তিত্ব ঘিরে ঘুরপাক খাওয়া সুবিধাবাদীদের সংখ্যাও কম নয়। সাধারণ মানুষ কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই অনুদান প্রদানে আগ্রহী। ফলে তারা কি সরাসরি টাকা বা ডলার পাঠাবেন, না সরকার স্থানীয়ভাবে কাউকে বা কোন প্রতিষ্ঠানকে কিংবা সংগঠনকে সমন্বয়ের ভার বুঝিয়ে দেবেন তারও একটা উত্তর প্রয়োজন বৈকি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আন্তর্জাতিক মুরব্বি নামে পরিচিতদের গোস্বা বা মান অভিমানের পেছনের কারণগুলো তুলে ধরা। আমরা বিজয়ের মাসে লক্ষ্য করি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি তথা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অপপ্রচার বা নিন্দা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় বিবেক আর বুদ্ধির তোড়ে ভাসা ভাসমানদের কথার স্রোত। এর যোগ্য উত্তর এমনকি জানা প্রত্যুত্তর দিতেও সময় ক্ষেপন করি আমরা। বিশ্বব্যাংক যাই বলুক না কেন তার সঙ্গে দেশ ও প্রবাসের বাংলাদেশীদের সম্মান জড়িয়ে। উত্তরটা যেন সবাই মিলে দিতে পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হবে কাজের কাজ। আশা করি এমন একটি জরুরী বিষয়ে বড় কোন ভুল বা গাফিলতি হবে না। তবে একথা মানতেই হবে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে ফোন নাম্বার ই-মেইল আইডি জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছতা ও আস্থার দিক থেকে এক শ’ ভাগ এগিয়ে রইলেন।
dasguptaajoy@hotmail.com

No comments

Powered by Blogger.