ভারতের বাঙালি রাষ্ট্রপতি-গভীর মিত্রতার প্রত্যাশা

ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে প্রথম বাঙালি হিসেবে প্রণব মুখার্জি নির্বাচিত হওয়ায় বিশ্বের তাবৎ বাঙালি গর্বিত। বাংলাদেশের মানুষও তাদের একজন কাছের মানুষকে বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিতে প্রথম ব্যক্তির আসনটি অলঙ্কৃত করায় আনন্দিত। তার এ সম্মানে প্রতিবেশী দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণ, গভীর মিত্রতা ও অমীমাংসিত সমস্যাগুলো ত্বরিত সমাধানে অবদান রাখার প্রত্যাশা পল্লবিত হওয়া স্বাভাবিক।


পররাষ্ট্রমন্ত্রী, এমনকি অর্থমন্ত্রী থাকার সময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে তার প্রচেষ্টা স্মরণযোগ্য। তাই ভবিষ্যতেও তিনি দু'দেশের সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন বলেই বিশ্বাস। দক্ষিণ এশিয়ার ইন্টিগ্রেশনেও তার ভূমিকা প্রত্যাশা করাটা অতিশয়োক্তি হবে না। তার রয়েছে সকল মত ও পথের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে চলার মতো অদ্ভুত এক প্রণোদনামূলক ক্ষমতা। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কোন্নয়নে বিভিন্ন সময় ও পর্যায়ে তিনি তার এই প্রভাবদায়ী অবস্থানকে ব্যবহার করেছেন। যখনই দেখা গেছে বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তখনই তাকে ত্বরিত গতিতে ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধান, এমনকি বাংলাদেশের পণ্যকে ভারতের বাজারে বিশেষ সুবিধা সংবলিত প্রবেশাধিকার প্রদানের মতো বিষয়গুলোতে তাকেই ইতিবাচক ভূমিকায় দেখা গেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির একগুঁয়েমির কারণে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন সম্ভব না হওয়ায় তিনি নিজেও বিব্রত হয়েছিলেন। এতে যাতে দুই দেশের সম্পর্কে স্থায়ী কোনো নেতিবাচক প্রভাব দেখা না দেয় সে চেষ্টাও তার তরফ থেকেই আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। মমতা ব্যানার্জিকে তিস্তার পানি বণ্টন প্রশ্নে রাজি করানোর তার চেষ্টার কথাও জানা। এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জর্ি শেষ পর্যন্ত প্রণব মুখার্জিকে সমর্থন করার মধ্য দিয়ে উভয়ের দিক থেকে সম্পর্কে গরফ গলার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মেলায় তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে একটা ইতিবাচক ফলাফল আশা করা যায়। তিনি তার প্রভাবকে এই উদ্দেশ্যে কাজে লাগাবেন বলে আমরা আশা করি। টিপাইমুখ প্রশ্নে এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি প্রশ্নে তার ভূমিকা বাংলাদেশের পরিবেশ ও উন্নয়নে প্রভাবদায়ী। ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশের স্বার্থের ক্ষতি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না বলে তাদের প্রতিশ্রুতি যেন পালিত হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার প্রভাব কাজে লাগাবেন বলে বাংলাদেশ আশা করে। বস্তুত দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে গভীর মিত্রতা গড়ে তোলায় তার সদয় অভিপ্রায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের একজন হিতাকাঙ্ক্ষী এবং প্রথম বাঙালি হিসেবে ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় প্রণব মুখার্জিকে অভিনন্দন।

No comments

Powered by Blogger.