হুমায়ূনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা ॥ লাখো চোখে জল-০ শহীদ মিনার লোকারণ্য ০ কান্না ছুঁয়েছে সবার চোখকে ০ মরদেহ হিমঘরে by মোরসালিন মিজান

খুব চেনা মুখগুলো কাঁদছে। অজানা অচেনা চোখে জল। কার কান্না কে থামাবে? তাই জল শুকোয়। শুকনো জলের ধারা আবার ভিজিয়ে গড়িয়ে পড়ে নতুন জল। সকলের একটাই ব্যথা। ব্যথার নামÑ হুমায়ূন আহমেদ। দেশের জননন্দিত এই লেখককে সোমবার চোখের জলে শেষ শ্রদ্ধা জানায় শোকগ্রস্ত জাতি।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে দেশের সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাঁকে সমাহিত করা হবে। তবে কোথায় সমাহিত করা হবে সে সিদ্ধান্ত সারা দিনেও নিতে পারেনি পরিবার।
গত কয়েক দিন ধরে প্রিয় সন্তান হুমায়ূন আহমেদের জন্য প্রতীক্ষা করছিল গোটা দেশ। দীর্ঘ সেই প্রতীক্ষার অবসান হয় সোমবার। এদিন সকালে নিউইয়র্ক থেকে লেখকের মরদেহ ঢাকায় পৌঁছে।
এর আগে সকাল ৮টার দিকে একসঙ্গে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় দুই কন্যা নোভা, শীলা ও পুত্র নুহাশ। হুমায়ূন আহমেদের দুই ভাই লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, দুই বোন সুফিয়া হায়দার ও মমতাজ শহীদ তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। সকলেরই বিষণœ মুখ। বুকের ভেতর কান্না ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। কিছুক্ষণ পরপরই যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছিলেন দুই মেয়ে। আর তারপর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলেন। দুই ফুপু ও চাচি ইয়াসমিন হক তাঁদের জড়িয়ে ধরে সান্ত¡না দিচ্ছিলেন। কান্না তবু থামছিল না। বরং যত সময় যাচ্ছিল ততই প্রকাশ হচ্ছিল ভেতরের হাহাকার। তবে কত কান্না তখনও ভেতরে জমা হয়েছিল তা বোঝা গেল সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে। এ সময় সান্ত¡না দেয়ার সত্যিই কেউ ছিলেন না। বিমানবন্দরের রানওয়ের দিকে তাকিয়ে ডুকরে কাঁদছিলেন সবাই। কারণ ততক্ষণে স্বদেশের প্রিয় মাটি স্পর্শ করেছে হুমায়ূন আহমেদকে বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানটি। ৯টা ৮ মিনিটে বিমানের পেট থেকে বের করা হয় কফিন। দৃশ্যটি চোখের সীমানায় ধরা পড়লে আবারও শুরু হয় কান্না। এ কান্না মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। বাধভাঙা কান্নার মধ্য দিয়েই মরদেহ বুঝে নিতে বিমানের দিকে এগিয়ে যান লেখকের দুই ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব। ভালবাসার ফুল দিয়ে সাজানো গাড়ি সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। মরদেহবাহী সে গাড়িতে তোলা হয় হুমায়ূনের কফিন।
এদিকে একই বিমান থেকে নামেন লেখকের শেষ জীবনের সঙ্গী স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। তাঁর সঙ্গে ছিল দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত হুমায়ূন এবং শাওনের মা বেগম তহুরা আলী। তবে শাওনের দিকে যেন তাকানো যায় না। বিপর্যস্ত একটি মুখ। এলোমেলো চুল। শরীর এত দুর্বল ছিল যে নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতেও কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। প্রয়াত লেখকের দুই শিশুপুত্র নিষাদ ও নিনিত হুমায়ূন অবশ্য শুধু তাকিয়ে ছিল ফ্যাল ফ্যাল করে। বিমানবন্দরে হুমায়ূনের স্বজন ছাড়াও পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস, সংস্কৃতি সচিব সুরাইয়া বেগম, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, লেখকের নাটকের দুই অভিনেতা ডা. এজাজ মুন্না ও ফারুক আহমেদ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অল্প সময় পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে রওনা দেয় হুমায়ূনের মরদেহবাহী গাড়ি। পেছন থেকে এ গাড়ি অনুসরণ করেন অন্যরা। বনানী, ক্যান্টনমেন্ট, জাহাঙ্গীর গেট, ফার্মগেট, শাহবাগ হয়ে এগোতে থাকে কফিন। এ সময় গলায় হুমায়ূনের ছবি ঝুলিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এক ভক্তকে। অন্যান্য জায়গায়ও এমন বেশ কিছু দৃশ্য চোখে পড়ে। কোন কোন রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে শোক প্রকাশ করেন ভক্তরা। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাঁদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি।
মরদেহ পৌঁছার আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় পুরো শহীদ মিনার এলাকা। যে দিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। দীর্ঘ লাইন। লাইনের শেষ কোথায় তা চাইলেই উঁকি দিয়ে দেখা যায় না। প্রচ- রোদে দাঁড়িয়ে সকলেই প্রতীক্ষা করছিলেন হাজার হাজার মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একদিকে লাইন গিয়ে ঠেকেছে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত। অন্যদিকে ছুঁয়েছে ঢাকা মেডিক্যালের জরুরী বিভাগের গেট। প্রিয় লেখককে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সকলে। তাঁদের কারও হাতে গোলাপগুচ্ছ। কেউ হাতে করে নিয়ে এসেছেন বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল। এ অবস্থায় সকল প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ মাইকে ঘোষণা করেনÑ আমাদের ভালবাসার ধন হুমায়ূন আহমেদ এসেছেন। পরের কথাগুলো আর শোনা যায় না। জনসমুদ্রের ঢেউয়ে হারায় সকল কথা। উপস্থিত ভক্ত-অনুরাগীরা এদিক-ওদিক তাকাতে থাকেন। এ সময় মঞ্চের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায় হুমায়ূন আহমেদের কফিনটিকে। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী, ফরিদুর রেজা সাগরসহ লেখকের ঘনিষ্ঠজনরা কফিন নিয়ে শহীদ মিনারের উল্টো দিকে স্থাপিত মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন। শহীদ মিনারে আগেই উপস্থিত হওয়া ছোট ভাই জাফর ইকবাল ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে থাকেন কফিনের দিকে। এ সময় প্রথমবারের মতো হুমায়ূনের অস্তিত্ব অনুভব করেন সকলে। বহু মানুষ ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন। দেখতে দেখতে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। হুমায়ূনের মরদেহ গ্রহণ করে মঞ্চে স্থাপন করেন শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দীন ইউসুফ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। এর পরপরই কফিনের পেছনে এসে দাঁড়ান লেখকের বড় মেয়ে নোভা, মেজ মেয়ে অভিনেত্রী শিলা ও ছেলে নুহাশ। বাবার সৃষ্ট চরিত্র হিমুর হলুদ পাঞ্জাবি পরে এসেছিলেন নুহাশ। শোকের রং ছিল মেয়েদের শাড়িতে। কফিনের ওপর দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে নুহাশ। একই সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে বাবার অতি আদরের দুই মেয়ে। তাঁদের মা গুলতেকিনের চোখ দিয়েও গড়িয়ে পড়ে জল।
কিছু পরে পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। প্রথমে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফখরউদ্দীন আহমেদ। পরে সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা জানান তাঁর দুই কর্মকর্তা মাহবুবু হক শাকিল ও সাইফুজ্জামান শেখর। আওয়ামী লীগের পক্ষে লেখককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ প্রমুখ। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবীর খোকন, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ। ফাঁকে ফাঁকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অসংখ্য সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রিয় লেখককে।
হুমায়ূনের স্পর্শ এবং...
তবে হুমায়ূন আহমেদের সাধারণ পাঠক ও ভক্ত অনুরাগীদের চেহারা দেখেই বোঝা গেছে। লম্বা পথ হেঁটে ক্লান্ত তরুণ-তরুণীরা কফিনের কাছে কাছে এসে অঝোর ধারায় কেঁদেছেন। হাতে শুকিয়ে যাওয়া ফুল খুব বিনম্র শ্রদ্ধায় তুলে দিয়েছেন প্রিয় লেখকের কফিনের ওপর। অনেকেই কফিনে আছড়ে পড়ে চুমু খেয়েছেন। তাঁদেরই একজন ঢাকা বিশ্ব¦বিদ্যালয়ের এনথ্রপলজি প্রথম বর্ষের ছাত্রী প্রীতি। প্রিয় লেখকের কফিনে ফুল দিয়ে সে ছুটে যায় লেখকের ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে। তাঁকে বলে, স্যার, হুমায়ূন আহমেদের দেড় শ’র মতো বই আমি পড়েছি। প্রিয় লেখকের সঙ্গে বহুবার দেখা করার চেষ্টা করেছি। একবার নুহাশ পল্লীতে গিয়েও তাঁকে পাইনি। তবে কোনদিন ভাবিনি শেষ বিদায়ের দিন তাঁকে দেখতে হবে। প্রীতি এর পর জাফর ইকবালের হাত ধরে বলে, স্যার, আপনি হুমায়ূন আহমেদের ভাই। তাঁর স্পর্শ আছে আপনার হাতে। আমি সেই হাতটি একটু ধরতে চাই। জাফর ইকবাল হাত বাড়িয়ে দেন। হুমায়ূন ভক্তের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সান্ত¡না দেন। বলেন, তোমার প্রিয় লেখকের জন্য দোয়া কর শুধু।
দেখা হলো মায়ের সঙ্গে
হুমায়ূনের সঙ্গে মায়ের শেষ দেখা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরু হওয়ার এক পর্যায়ে সেখানে পৌঁছেন মা। তাঁকে ধরে ধরে কোন কফিনের পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিকভাবে তিনি দুর্বল হওয়ায় পরে চেয়ার এনে সেখানে তাঁকে বসতে দেয়া হয়। তবে মানসিকভাবে এই মা শক্ত বলেই মনে হয়েছে।
ক্লান্ত শ্রান্ত শাওন
শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরু হওয়ার অনেক পড়ে উপস্থিত হন লেখকের স্ত্রী শাওন। তাঁকে কয়েক জন অভিনেত্রী ধরে কফিনের কাছে নিয়ে যান। প্রথমে একটু দূরে বসানো হয়েছিল শাওনকে। পরে তিনি হুমায়ূনের কফিনের পাশে যেতে চাইলে হুমায়ূনের মা আয়েশা ফয়েজের ডান পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেয়া হয় তাঁকে। অন্য পাশে ছিলেন শাওনের এক সময়ের বান্ধবী শিলা। তবে লম্বা সময় পাশাপাশি থাকলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোন কথা হয়নি। চোখাচোখিরও সুযোগ ছিল না।

বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল
পুরো আয়োজনটি সুশৃঙ্খলভাবে শেষ করতে কঠোর শ্রম দিচ্ছিলেন সাংস্কৃতিক জোটের কর্র্মীরা। অধিকাংশ সময় সুশৃঙ্খলভাবে চললেও মাঝে মধ্যেই সব কিছু নষ্টদের অধিকারে গেছে। দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মী বেশ বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি করেন। প্রথমেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন যুব লীগ ঢাকা মহানগরের একদল নেতা-কর্মী। হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি করতে করতে এগিয়ে আসতে থাকেন তারা। এ সময় দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একই অবস্থা করেন আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগরের নেতা-কর্মীরা। কোন ভিন্নতা ছিল না বিএনপির বেলায়ও। এ দলের কর্মীরাও সকল লাইন ভেঙে হুলস্থ’ূল করতে করতে এগিয়ে আসে মঞ্চের দিকে। দুই দলের এসব কর্মীর ফুল দেয়ার সময়ও বিরাট বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। মাইকে বার বার অনুরোধ করেও তাঁদের থামানো যায়নি।
তৎপর মিডিয়া
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় এত মিডিয়ার উপস্থিতি এর আগে আর দেখা যায়নি। দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেল বহু আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। অধিকাংশ টিভি সেখানে অস্থায়ী অফিস খুলে বসে। হুমায়ূনের কফিনের পেছন থেকে আকাশ দেখা যায়নি। বিভিন্ন টেলিভিশনের ক্রেন দেখা গেছে। ক্যামেরা নিয়ে দারুণ ছুটছিল সেগুলো। শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করতেই এ আয়োজন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ক্যামেরা বসানো হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনপর্ব ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাতকার প্রচার করে টিভিগুলো। ফলে ঘরে বসে থাকা মানুষও হুমায়ূন আহমেদের শেষ শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত থাকতে পেরেছেন।

হুমায়ূনের জন্য প্রার্থনা
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হলে ছোট্ট করে কথা বলেন ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শান্ত এবং আশ্চর্য় রকম বিনয়ী কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি জানি অনেকেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাননি। এ জন্য আমি হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। প্রয়াত ভাইকে হারানোর ব্যথার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আসলে হুমায়ূন আহমেদ আপনাদের। আজ তিনি নেই। কিন্তু নিশ্চয়ই তিনি অনুভব করছেন আপনাদের ভালবাসা। আমার ভাই উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র দিয়ে আপনাদের আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আপনারা দোয়া করবেন যেন, সেই আনন্দ তিনিও পান।
পরে সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষে সমাপনী বক্তৃতা করেন এর সভাপতি নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। তিনি বলেন, কিভাবে একজন সাহিত্যিক শিল্পী গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন তার সবেচেয়ে ভাল উদাহরণ হুমায়ূন আহমেদ। তিনি আমাদের ঐক্যের প্রতীক। অগণিত মানুষের মনের মানচিত্র নিজ কলমে এঁকেছিলেন তিনি। এ বক্তৃতার মধ্য দিয়ে শেষ হয় শহীদ মিনার পর্ব। এখান থেকে জানাজার জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় ঈদগাহে।

জাতীয় ঈদগাহে জানাজা
ঢাকায় হুমায়ূন আহমেদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ঈদগাহে। এতে অংশ নেন আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। জানাজায় পাশাপাশি দাঁড়ান আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানাক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রমুখ। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও অংশ নেন জানাজায়। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বহু মানুষ জানাজায় অংশ নেন। জানাজার পূর্বে হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নুহাশ সবার কাছে তাঁর বাবার জন্য দোয়া কামনা করে।
জানাজা শেষে হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে। এ সময় পরিবারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন তাঁর ছেলে নুহাশ আহমেদ, স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোতাহার হোসেন। মঙ্গলবার তাঁকে সমাহিত করা হবে। তবে রাত ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দাফনের স্থান নির্ধারণ করতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা।

No comments

Powered by Blogger.