স্বাধীনতার ৪০ বছরেও স্বীকৃতি পাননি তারা

অজিফা খাতুন, বয়স ৬০, গ্রাম কেতকীবাড়ী (কচুয়ারডাঙ্গা), ইউনিয়ন কেতকীবাড়ী, উপজেলা ডোমার, জেলা নীলফামারী। ১৯৭১ সালে বিয়ে হয় মোঃ আইনুল হকের সাথে। স্বামী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করায় স্থানীয় কুখ্যাত রাজাকার আবু তাহের ও আবদুস সামাদদের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয়জনের পাকবাহিনীর একটি দল কেতকীবাড়ীতে স্বামীর বাড়ি ঘেরাও করে বাড়িঘর ভেঙে দেয়।


পাশের বাড়িতে লুকিয়ে থাকা অজিফা খাতুন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা তাকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে, রাতভর শ্লীলতাহানি করে। দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযোদ্ধা স্বামী আইনুল হকের ঘরে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েও ফিরে যেতে পারেননি। পরে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। এখন এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী তিনি। স্বামী অকালে প্রাণ হারান। ফলে মানুষের বাড়িতে কাজ করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

মোছাঃ মর্জিনা বেগম, বয়স ৫৬, গ্রাম পূর্ব বেতগাড়া, ইউনিয়ন মির্জাগঞ্জ, উপজেলা ডোমার, জেলা নীলফামারী। ১৯৭০ সালে আবদুল আজিজের সাথে সংসার জীবন শুরু করেন। মর্জিনা বেগমের ওপর কুনজর পড়ে স্থানীয় রাজাকার নবীর উদ্দিনের। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্থানীয় রাজাকাররা পরিকল্পিতভাবে পাকবাহিনীকে নিয়ে মর্জিনা বেগমের শ্বশুর শহর উদ্দিনের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়। শ্বশুর শহর উদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরের দিন পিতার মৃত দেহ অনুসন্ধানে গেলে নরপশুরা মর্জিনার স্বামী আবদুল আজিজকেও হত্যা করে। মর্জিনা বেগমকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে এসে জানোয়াররা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। যুদ্ধের পর সামাজিক কারণে দ্বিতীয় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই ঘরে এক ছেলে ও তিন মেয়ে তার। স্বামী অকালে প্রাণ হারান। শুরু হয় আরেক যুদ্ধ। দারিদ্রতার বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার যুদ্ধ।

মোছাঃ নূরজাহান বেগম, বয়স ৫৬, গ্রাম গোসাইগঞ্জ, ইউনিয়ন ভোগডাবুড়ী, উপজেলা ডোমার, জেলা নীলফামারী। ১৯৭০ সালে বছির উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয়। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় কন্যাসন্তান ফাতিমার জন্ম হয়। চারদিকে যুদ্ধের ডামাডোল। খানসেনার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ৬ দিনের সদ্য প্রসূতি নূরজাহানের ওপর। এলাকার রাজাকার চৌকিদার মৃত রহমানকে নিয়ে ২ জন পাকসেনা জোরপূর্বক রাতভর নূরজাহানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। নির্যাতনের সময় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে পায়ের বুট দিয়ে তার হাত-পা থেঁতলে দেয়। যুদ্ধশেষে স্বামী তাকে গ্রহণ করতে চায়নি। পরে স্বামীর সংসারে ফিরে এলে দুই ছেলে হয়। স্বামী অকালে প্রাণ হারান। সহায়-সম্বলহীন এই আহত মুক্তিযোদ্ধা নূরজাহানের খবর আজও কেউ নেয়নি।


তরিমা খাতুন, বয়স ৫৮, স্বামী মোঃ মতিয়ার রহমান, গ্রাম মির্জাগঞ্জ (কেরানীপাড়া), ইউনিয়ন জোড়াবাড়ী, উপজেলা ডোমার, জেলা নীলফামারী। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে স্থানীয় রাজাকার আফতার ল্যাংড়া ও মৃত মজিদ মেকার এবং ৫-৬ জন পাকসেনা মতিয়ার রহমানের বাড়িতে হানা দেয়। তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আটকে রেখে জোরপূর্বক তার স্ত্রী তরিমা খাতুনের শ্লীলতাহানি ঘটায়। পরের দিন আবারও জোরপূর্বক শ্লীলতাহানি করলে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। স্বামী মতিয়ার স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেন, বাঁচার স্বপ্ন দেখান ৫ কন্যা ও দুই পুত্র তাদের। কন্যাদের বিয়ে দিতে সমর্থ হলেও ছেলেরা অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
মোঃ আল-আমিন রহমান
 

No comments

Powered by Blogger.