'সুতরাং' কবরী

সুভাষ দত্তের 'সুতরাং' ছবির মধ্য দিয়ে রূপালি পর্দায় এসেছিলেন কবরী। এখন তিনি সংসদ সদস্য। সেলুলয়েড থেকে বাস্তবের রাজনীতিক। জনগণের প্রতিনিধি হওয়ার পর জীবনের অনেক কিছু পাল্টে গেছে তার। তারকা জীবনের নানা অভিজ্ঞতা তিনি কাজে লাগাচ্ছেন রাজনীতির মাঠে। আজ তার জন্মদিন।


এদিকে এ বছর তার অভিনীত কালজয়ী ছবি 'তিতাস একটি নদীর নাম'-এর চার দশক পূর্তি হলো। ব্যক্তি ও পর্দা জীবন নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ। সত্যি বলতে ব্যস্ততার কারণে জন্মদিনের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম! আমি জন্মদিনে তেমন কোনো আয়োজন করি না। পরিচিতজনরা বাসায় এসে কিংবা মুঠোফোনে শুভেচ্ছা জানায়। এভাবেই প্রতিটি জন্মদিন কেটে যায়।
এখন অবসর পেলে কী করেন?
সেইভাবে অবসর এখন পাই না। ভালো লাগে বই পড়তে, গান শুনতে। চলচ্চিত্র দেখা আমার খুব প্রিয় একটি কাজ। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্য ও প্রাচীন নির্দশনের প্রতি ভীষণ আগ্রহ আছে। হয়ে যাওয়া জিনিসগুলোর প্রতিও অনেক আকর্ষণ। সে টানেই ঘুরে বেড়িয়েছি ফ্রান্সের লুভর জাদুঘর, স্পেনের প্রাডা, রেনেসোফিয়া মিউজিয়ামসহ আরও অনেক বিখ্যাত জাদুঘর।
আপনার জীবনের সেরা ঘটনা কোনটি?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সত্যজিৎ রায়, উত্তম কুমারের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়গুলো আমার কাছে স্মরণীয়। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার দিনটি আজও স্পষ্ট ভাসে। ওইদিন কাজ শেষে চট্টগ্রাম থেকে উড়োজাহাজে ঢাকায় ফিরছিলাম। ঢাকায় নামার কিছু সময় আগে বঙ্গবন্ধু আমার আসনের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, 'কবরী, আমরা এসে গেছি।' আমার তো তখন হাত-পা অবশ হওয়ার মতো অবস্থা! আনন্দ আর বিস্ময় একত্র হয়ে আমার এমন অনুভূতি হলো যে, কিছুই বলতে পারিনি। কারণ বঙ্গবন্ধু একই উড়োজাহাজে আছেন_ জানতাম না।
ঋতি্বক ঘটক পরিচালিত 'তিতাস একটি নদীর নাম' ছবি মুক্তির ৪০ বছর পূর্ণ হয়েছে।
এ উপলক্ষে চ্যানেল আইয়ে একটি আড্ডার আয়োজন করেছিল ছবির প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সেখানে যেতে পারিনি। মনে পড়ে, ১৯৭২ সালে মুক্তি পাওয়ার পর ছবিটি বাংলাদেশের পাশাপাশি কলকাতাতেও প্রশংসিত হয়েছিল। 'তিতাস একটি নদীর নাম' দেখলে এখনও ভালো লাগে।
চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে?
যেহেতু আমি চলচ্চিত্রের মানুষ, তাই আমাকে এ অঙ্গন নিয়ে বিশেষভাবে ভাবতেই হয়। চলচ্চিত্রের যে সম্মান ছিল, তা ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই পুরনো সম্মান ফিরিয়ে আনতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। এ ক্ষেত্রে ভালো নির্মাতাদের সুযোগ দিতে হবে। এ সরকার চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর পাশাপাশি ফিল্ম আর্কাইভ, প্রেক্ষাগৃহ_ সবকিছুরই উন্নয়ন দরকার। এগুলো আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনতে হবে।
আর কি অভিনয় করবেন না?
প্রায় প্রতিদিনই নতুন ছবির প্রস্তাব আসে। রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে এখন আর আগের
মতো অভিনয়ে সময় দিতে পারি না। দু-একটি ছবিতে অভিনয়ের কথা চলছে। জনসেবার পর যে সময়টুকু থাকে তা চলচ্চিত্রের সঙ্গেই কাটানোর চেষ্টা করি।
আপনি তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এ কমিটির ভূমিকা কতটুকু?
এখন পর্যন্ত এ কমিটির তিনটি সভা হয়েছে। সংস্কৃতিতে এর ভূমিকা অনেক। যেমন বাজেট থেকে শুরু করে পুরো পরিকল্পনা করা হয় এ কমিটির মাধ্যমে।
বিটিভি ছাড়া আর কোনো চ্যানেলকে টেরিস্ট্রিয়াল সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। কারণ অন্য কোনো চ্যানেলকে এ সুবিধা দেওয়া হলে সবাই চাইবে। আর বেসরকারি খাতে এমন সুবিধা পেলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে বেশি।
শুনেছি, ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন?
হ্যাঁ, ১৯৯১ সালে দাউদকান্দি আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম; কিন্তু পাইনি। তারপর ১৯৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জের একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। সেটাও হয়নি।
নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে আপনার পরিকল্পনা কী?
প্রথমে নারায়ণগঞ্জে আমার নির্বাচনী এলাকার পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে চাই। মানুষের কল্যাণে যেন রাজনীতিকে ব্যবহার করা হয়। আমি সবচেয়ে অবাক হই, যখন দেখতে পাই মারামারি ছাড়া রাজনীতি চলে না। নারায়ণগঞ্জ-৪-এর মানুষ যখন ৫-এ যায়, তখন তাকে মারধর করা হয়। এটা কী ধরনের রাজনীতি? এগুলো পরিবর্তন করে সুস্থ পথে সবার চলার অভ্যাস করতে হবে।
তারকা জীবন ও রাজনীতি_ এ দুটি মিলে আপনি তো দারুণ ব্যস্ত।
রাজনীতি আর শিল্পী জীবনের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। তারপরও একটি দিক দিয়ে মিল কিন্তু রয়েছেই। রাজনীতি যেমন মানুষের জন্য, অভিনয়ও তেমনি মানুষের জন্যই। দুটি মাধ্যমেই মানুষের মন জয় করতে হয়। আর এতে যে বেশি সফল হবে সে-ই সবার প্রিয় হয়ে উঠবে। তবে একটা দিক দিয়ে ভিন্নতা রয়েছে। তা হলো, রাজনীতি মানে মানুষের সঙ্গে সরাসরি কাজ করা আর অভিনয়শিল্পীরা পরোক্ষভাবে মানুষের জন্য কাজ করে যান। এই দুটি মাধ্যমেই আমি আছি। তাই অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। হ

No comments

Powered by Blogger.