স্বাস্থ্য রক্ষায় ভেজাল প্রতিরোধ জরুরি by রাকিবুল হাসান

ভেজাল পণ্য ঠেকাতে সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ নিলেও কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে তা কেউ চোখ মেলে দেখছে না। সচেতনতামূলক প্রচার ও ভেজালবিরোধী আন্দোলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন বেড়েই চলেছে ভেজাল পণ্যের পরিমাণও। বাজারে গেলেই চোখে পড়ে ভেজাল পণ্য। খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে ব্যবহার্য প্রায় সব পণ্যেই ভেজাল মেশানো হচ্ছে।


ভেজালকারীদের দাপট ও দৌরাত্ম্যের কারণে মানুষ আজ অসহায় হয়ে পড়েছে। ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে ওষুধ ও প্রসাধন সামগ্রীতেও ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভেজাল গ্রহণে বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজাল গ্রহণের ফলে খাদ্যে অরুচি, আলসার, ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রিক, লিভার, কিডনি, জন্ডিসসহ মারাত্মক সব অসুখে ভুগছে মানুষ।
জানা গেছে, কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আসায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য আমদানি করছে বিদেশ থেকে। একই সঙ্গে দেশের ভেতরে খাদ্যদ্রব্য তৈরি হচ্ছে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। এদিকে আসন্ন রমজান সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে ভেজাল পণ্য বিক্রিতে সক্রিয় হয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। তবুও যেন হুঁশ ফিরছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। মাঝে মধ্যে বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযান এতই সীমিত যে, ভেজাল রোধে তা কার্যকর ভূমিকাই রাখতে পারছে না। এসব অভিযানে সামান্য কিছু চুনোপুঁটি ধরা পড়লেও তা ভেজাল ঠেকাতে পারছে না। ছোট দোকানগুলোতে অভিযান চালানো হয় মাঝে মধ্যে। যেসব ফ্যাক্টরিতে ভেজাল পণ্য তৈরি করা হয় সেখানে অভিযান কখনোই চালানো হয়নি। ফলে অধরাই রয়ে গেছে রাঘববোয়ালগুলো। এ ছাড়া অসাধু সিন্ডিকেটও ভেজালবিরেধী অভিযানে বাধা দিয়ে থাকে বিভিন্ন পন্থায়।
তাড়াতাড়ি বাজারজাতের জন্য আম, আনারস, কলাসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল পাকাতে বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। তা অন্যান্য মৌসুমি ফলের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। এসব বিষাক্ত কেমিক্যাল প্রতিনিয়ত গ্রহণের ফলে মানবদেহে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পচন রোধের জন্য মাছের গায়ে সিরিঞ্জের মাধ্যমে ফরমালিন পুশ করা হয়। মাছ টাটকা ও সতেজ রাখতে ব্যবহার করা হয় ডিডিটি পাউডার। এ ছাড়া মিয়ানমার ও ভারত থেকে আমদানি করা মাছেও থাকে ফরমালিন মেশানো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব কেমিক্যাল মাছের শরীরে মিশে যায়। এ মাছ খাওয়ার ফলে মানবদেহে সরাসরি বিষক্রিয়া হয়।
দেশের ২৬টি শুল্ক স্টেশন দিয়ে বছরে প্রায় ৫ লাখ টন পণ্য আমদানি করা হয়। অথচ শুল্ক বন্দরগুলোতে টেস্ট ছাড়াই পণ্য খালাস দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে ভেজাল পণ্যে ছেয়ে গেছে দেশের বাজার।
আমদানি করা ফল আঙুর, আপেল, কমলা থেকে শুরু করে চাল, ডাল, শিশুখাদ্য জুস, বিস্কুট, অন্যান্য ভোগ্যপণ্য সাবান, শ্যাম্পু লোশনসহ প্রায় সব ব্যবহার্য পণ্যেই ভেজালের দেখা পাওয়া যায়। চারদিকে শুধু ভেজালের সমাহার। তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। ভেজাল রোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত সময় উপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া।

সরাকিবুল হাসান
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
rakibulju10@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.