পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শাহাবুদ্দিন?-আট মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন : জারদারি

পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মখদুম শাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পাকিস্তানের জিও নিউজের বরাত দিয়ে এনডিটিভি এ তথ্য জানিয়েছে। এনডিটিভি জানায়, গতকাল বুধবার সকালে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পিপিবির জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠকে আদালতের রায়


মেনে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ বিষয়ে পিপিপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
এদিকে পিপিপির সংসদীয় দলের এক সভায় প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি বলেন, আট মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পিপিপি নেতা সৈয়দ খুরশিদ শাহ গতকাল পাকিস্তানের ডন পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আগামী ২২ জুন শুক্রবার পার্লামেন্টের অধিবেশনে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ওই অধিবেশন বসবে। তবে আজ বৃহস্পতিবারই মনোনয়নপত্র দাখিল করা হবে।
গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট দেশটির প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানিকে প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্টের সদস্য পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দেন। আদালতের রায়ের পর মঙ্গলবার রাতেই শরিক জোটের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে ক্ষমতাসীন পিপিপি। ওই বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আদালতের রায় মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুইজনের নাম প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে একজন মখদুম শাহাবুদ্দিন, যিনি কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী এবং জাতীয় পরিষদ সদস্য। অন্যজন চৌধুরী আহমেদ মুক্তার, যিনি কেন্দ্রীয় পানি ও বিদ্যুৎমন্ত্রী।
বৈঠকে নতুন প্রধানমন্ত্রী পদে মখদুম শাহাবুদ্দিনের ব্যাপারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী গিলানি আপত্তি জানান। গিলানি ও শাহাবুদ্দিন উভয়েই পাঞ্জাবের দক্ষিণাঞ্চলের হওয়ায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিবেচনায় গিলানি আপত্তি জানিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তবে পিপিপি নেতৃত্বাধীন জোটের নেতারা প্রেসিডেন্ট জারদারিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সকালে আবারও প্রেসিডেন্ট জারদারির সভাপতিত্বে পিপিপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে মখদুম শাহাবুদ্দিনকেই প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় পরিষদ বা নিম্নকক্ষের অধিবেশন আহ্বানেরও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির দুর্নীতির মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে গিলানিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু প্রেসিডেন্টের দুর্নীতি মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে সুইস কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাতে রাজি হননি গিলানি। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, দেশের প্রেসিডেন্ট সংবিধান অনুযায়ী দায়মুক্তি পান। এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে আদালত অবমাননার অভিযোগে গত ২৬ এপ্রিল গিলানিকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রতীকী সাজা প্রদান করা হয়।
মঙ্গলবার আদালতকক্ষে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি ইফতিখার চৌধুরী বলেন, আদালত অবমাননা মামলার রায়ের (২৬ এপ্রিল) বিরুদ্ধে এখনো কোনো আপিল নথিভুক্ত হয়নি। সুতরাং সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানি মজলিস-ই-শূরার (পার্লামেন্ট) সদস্য থাকার যোগ্য নন।
ইফতিখার বলেন, 'তিনি (গিলানি) আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নন। প্রধানমন্ত্রীর পদটি এখন শূন্য।' তিনি আরো বলেন, 'এই রায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও গিলানির উপস্থিতি অবৈধ হবে।' একই সঙ্গে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের উদ্যোগ নিতেও প্রেসিডেন্টকে নির্দেশ দেন আদালত।
পাকিস্তানের ইতিহাসে গিলানিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আদালত অবমাননার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। গিলানিকে অযোগ্য ঘোষণা করে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে দেশটির বিচার বিভাগের সঙ্গে পার্লামেন্টের দ্বন্দ্বের নতুন মোড় রচিত হলো বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। অনেকেই বলছেন, বিচার বিভাগের সঙ্গে পার্লামেন্টের দ্বন্দ্বের সুযোগে ফায়দা লোটার চেষ্টা করতে পারে দেশটির সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা- আইএসআই। বিপর্যয় থেকে দেশ রক্ষার নাম করে এরা ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারাও করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.