চারদিক-মন ভালো হয়ে যায় by জাহীদ রেজা নূর

৩ নভেম্বর সকালে হাঁটার জন্য সোজা চন্দ্রিমা উদ্যান। হাতের সঙ্গে পেঁচিয়ে নেওয়া একটা ডিজিটাল ক্যামেরা। চন্দ্রিমায় রাজকীয় চালে হেলেদুলে হাঁটে কয়েকটি রাজহাঁস। ওদের ছবি তুলে বাচ্চাদের দেখাব—এই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু রাজহাঁসগুলোর দেখা মেলে না। অবশ্য একটি দৃশ্য দেখে মন ভালো হয়ে যায়।


গণভবনের পেছন দিক দিয়ে চন্দ্রিমার সোজা হাঁটা পথটা ডানে বাঁক নেওয়ার পর বেশ কয়েকটি মুদির দোকান। তারই একটির সামনের বেঞ্চিতে বসে আছেন দুজন তরুণ। তাঁদের হাতে প্রথম আলো পত্রিকা। নিবিষ্ট মনে পড়ছেন। পুরো উদ্যান একবার ঘুরে আসার পরও দেখি তাঁরা পত্রিকা পড়ছেন। একজনের হাতে মূল পত্রিকা, অন্যজনের হাতে ক্রোড়পত্র।
তাঁদের পাশে বসি।
শীত আসেনি এখনো। কিন্তু দীর্ঘাঙ্গি গাছগুলোর শ্যামল ছায়ায় বসে শীতের আগমনী বার্তা টের পাওয়া যায়। তরুণ দুজনের সঙ্গে কথা বলি।
পত্রিকা পড়ছেন?
‘হ্যাঁ।’
আপনাদের সঙ্গে একটু কথা বলি?—বলে পরিচয়টি দিতে হয়। বলি, আগামীকাল আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সকালেই আপনাদের হাতে প্রথম আলো দেখে মন ভরে গেল। কবে থেকে পত্রিকাটি পড়েন?
উত্তর দেন জুয়েল নামের তরুণটি। এবার এইচএসসি পাস করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ‘বুঝ হওয়ার পর থেকেই প্রথম আলো পড়ি। যখন পড়ে বোঝা শুরু করেছি, তখন থেকেই পড়ি।’
পত্রিকা তো আরও অনেক আছে। প্রথম আলোই পড়েন কেন?
‘সব দিক থেকেই প্রথম আলোকে সেরা মনে হয়।’
কী পড়ছেন এখন?
‘স্বপ্ন নিয়ে পাতার একটা ফিচার। জেমস ক্যামেরনকে নিয়ে লেখা। ভালো লাগছে পড়তে। বেশ অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। প্রথম আলো অনেককে নিয়ে লেখে। এখানে শেখার বিষয় আছে। অন্য কাগজে এ রকম পাই না।’
আমাদের তো অনেক ফিচার পাতা আছে, কোনগুলো আপনার ভালো লাগে?
‘ছুটির দিনে আর রস+আলো বেশি ভালো লাগে। মূল পত্রিকায় মাদক, ইভ টিজিং ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে প্রথম আলোর কাজ ভালো লাগে। বন্ধুসভার পাতাও আমার ভালো লাগে। আমি বন্ধুসভার সদস্য হতে চাই।’
পাশের বন্ধুটির নাম মো. রুবেল খান। দুজন একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন। তিনি কয়েক মাস প্রথম আলো না পড়ে অন্য একটি পত্রিকা পড়েছেন।
প্রথম আলো পড়া ছেড়ে দিলেন কেন? ভালো লাগে না?
‘মনে হয়েছিল, নতুন পত্রিকাটি প্রথম আলোর চেয়ে ভালো করবে। তাই আর কি! কিন্তু পড়ে এতটা ভালো মনে হয় নাই। তাই আবার প্রথম আলো পড়া শুরু করলাম।’
প্রথম আলোর কোন পাতা সবচেয়ে ভালো লাগে আপনার?
‘খেলাধুলার পাতা। ছবিগুলো সুন্দর, লেখাও সুন্দর।’
‘ভালো লাগল আপনাদের কথা শুনে’—বলার পর রুবেল বলেন, ‘আপনারা একটু চন্দ্রিমা উদ্যান নিয়ে লিখবেন। সন্ধ্যার পর এখানে এলে সমস্যায় পড়তে হয়। কাউকে নিয়ে বেড়াতে এলে লজ্জায় পড়তে হয়।’

২.
গণভবনের সামনেই পত্রিকা বিক্রি করেন সুজন। আসলে ফুটপাতে সাজিয়ে রাখা পত্রিকাগুলোর সামনে বসেন বড় ভাই গৌতম অথবা সুজন। গৌতম গেছেন গ্রামের বাড়ি, তাই সুজন একাই সামলাচ্ছেন। তাঁর হাতেও একতাড়া পত্রিকা। সবচেয়ে ওপরের পত্রিকাটি প্রথম আলো।
মনে করার চেষ্টা করি, কিছুদিন আগেও অন্য পত্রিকার ভিড়ে লুকিয়ে রাখা হতো প্রথম আলো। সিগন্যাল পয়েন্টে থেমে থাকা গাড়িগুলোর দিকে প্রথমে যে পত্রিকাগুলো বাড়িয়ে দেওয়া হতো, তাতে প্রথম আলো থাকত না। কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলে গৌতম বলতেন, প্রথম আলো এমনিতেই বিক্রি হয়ে যায়। বিজ্ঞাপন করতে হয় না।
সুজনকে জিজ্ঞেস করি, কয়টা প্রথম আলো বিক্রি করেন?
‘আমি আনি ১০০টা। সব বিক্রি হইয়া যায়।’
তাহলে বেশি আনেন না কেন?
‘আমি তো আরও বিক্রি করতে চাই, কিন্তু প্রথম আলো রিটার্ন নেয় ১০০টায় তিনটা। আমি মনে হয় দেড় শটা বিক্রি করতে পারমু। কিন্তু গরিব মানুষ, ঝুঁকি নিতে সাহস হয় না।’
মানুষ কী বলে প্রথম আলো নিয়ে?
‘প্রথম আলো ভালো চলে। লোকজন কয়, এইটার লেখক ভালো।’
কোন পত্রিকা সবচেয়ে বেশি চলে?
‘প্রথম আলোই বেশি চলে।’
আমাকে দেখে বলছেন, নাকি সত্যিই সবচেয়ে বেশি চলে?
‘সত্যিই সবচেয়ে বেশি চলে। শুধু আমার এখানেই না, সবখানেই প্রথম আলো বেশি চলে।’
মন ভালো হয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.