ফতোয়াবাজির কবলে সমাজ

সভ্যতার মুখোশ পরে মানুষ এখনো বর্বরদেরই অনুসরণ করে। সামগ্রিক চিত্র না হলেও এও সম্ভব আমাদের দেশে। তাই বলতে হয়, ফতোয়া কার্যকর হওয়ার কারণে শরীয়তপুরের কিশোরী হেনার মৃত্যুর পর। এ কেমন পাশবিকতা? পুরুষের বর্বরতার শিকার এই কিশোরী প্রথমত ধর্ষণের শিকার হয়ে তাকেই কি না আবারও নির্যাতনের শিকার হতে


হলো? আবারও সেই পুরুষেরই কাছে। পুরুষের ফতোয়া কার্যকর হয় দুর্বল নারীর ওপর। ধর্ষক আত্মীয় পার পেয়ে যায় অবলীলায়। কী দুর্বিষহ চিত্র! দোররা মারতে মারতে বেহুঁশ করে ফেলার পরও থামে না জল্লাদের আঘাত। ১০০ ঘা পূরণ করতে বাকি আরো ২০টি। লুটিয়ে পড়ে হেনা মাটিতে। কিন্তু হাত কাঁপে না হন্তারকের। নারী নির্যাতনের সহজ পদ্ধতি এই ফতোয়ায় ধর্ষণের অপরাধের দায় পড়ে ধর্ষিতার ওপর। দোররা কিংবা অন্য কোনো দণ্ডও যেন শুধু নারীর জন্যই নির্ধারিত থাকে। তারই প্রমাণ পাওয়া গেল শরীয়তপুরের এই ঘটনায়। পলাতক মাহবুবকে ২০০ দোররা ফতোয়া দেওয়ার পর তা কমিয়ে আনা হলো। তাও পলাতক দেখিয়ে। কিন্তু হেনার যে পালানোর জায়গা নেই। আর পালাবেই বা কেন? কিন্তু হেনা জানে না সমাজের এ প্রভাবশালীরা নিজেদের প্রভাব খাটানোর প্রয়োজনে দুর্বল নারীকে বেছে নেয় যুগের পর যুগ। দুনিয়া এগিয়ে গেলেও হেনাদের জগৎকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রাখে এসব মানুষ। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা বলে যে প্রবাদ প্রচলিত, সেই প্রবাদও যেন হার মানে এখানে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এরা আবার ধর্মীয় নেতার মুখোশ পরে থাকে। কেউ মসজিদের ইমাম, কেউ মাদ্রাসার শিক্ষক কেউবা স্থানীয় মাতব্বর-মেম্বার। রাষ্ট্র তাদের ব্যাপারে কঠোর হতে গেলে তারা আবারও সেই ধর্মকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। আইনের মারপ্যাঁচে উচ্চ আদালতের রায়ও কার্যকর করা যায় না। প্রশ্ন আসে_এর কি কোনো প্রতিকার নেই? কথিত ধর্ষক মাহবুব (৪০), ফতোয়াদানকারী মসজিদের ইমাম, আবুল বাসার মাদ্রাসার শিক্ষকসহ পাঁচ সদস্যের বিচারকরা কি জিজ্ঞাসিত হবেন কোন ক্ষমতাবলে তারা এভাবে মানুষ মারার নির্দেশ প্রদান করতে পারে? হেনার মতো অসংখ্য কিশোরী-যুবতী এভাবে ফতোয়ার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে; কিন্তু হত্যাকারীদের বিচার হতে শোনা যায়নি তেমন একটা। হেনার হত্যাকারী এসব ফতোয়াবাজও কি একইভাবে বিনা বিচারে পার পেয়ে যাবে? হেনাকে হত্যা করা হলো প্রকাশ্যে এবং ঠাণ্ডা মাথায়। এই হত্যাকাণ্ডের কঠোর বিচার করা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া সম্ভব হলে ভবিষ্যতে এভাবে খুন বন্ধ হতে পারে। ফতোয়াবাজদের গডফাদারদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.