চিরকুট ও চিরকুটনামা by মেহেদী মাসুদ

জেন এক্স। চ্যানেল নাইনের একটি অনুষ্ঠান। এখানে প্রতি পর্বে আমন্ত্রণ জানানো হয় একজন শিল্পীকে। আর তাঁর সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রে কিংবা মাঝেমধ্যে কণ্ঠ দিয়েও সহযোগিতা করেন এ প্রজন্মের পাঁচজন তরুণ—ইমন (গিটার), রোকন (বেস), পাভেল (ড্রামস), পিন্টু (কণ্ঠ, বেহালা, বাঁশি, ডারবুকা) এবং সুমী (কণ্ঠ)।


তাঁদের ব্যান্ডের নাম চিরকুট। এই একটি মাত্র অনুষ্ঠান চিরকুট ব্যান্ডকে দর্শকদের কাছে পরিচয় করে দিয়েছে আলাদাভাবে।
বাংলা একাডেমীর বাংলা অভিধানে ‘চিরকুট’ শব্দের অর্থ কাগজের ছোট টুকরা, ছোট চিঠি। আর চিরকুট ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য সুমীর মতে, ‘আমরা আমাদের গানের মধ্য দিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা, কিছু ভাবনা পৌঁছে দিতে চাই সবার মাঝে। সঙ্গে থাকবে বিনোদন।’
হ্যাঁ, চিরকুটের গানের কথার মধ্যে রয়েছে এমন কিছু বিষয়, যা একদিকে যেমন শ্রোতা অন্য রকম গান শোনার আনন্দ পাবেন, আবার অন্যদিকে থাকছে ভাবনার অবকাশ। আর সুর? তা একান্তই চিরকুটের। গত রোববার বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ে চিরকুট ব্যান্ডের সদস্যদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা হলো।
চিরকুটের বয়স এখন দশ। এই ব্যান্ডের শুরুটা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গোড়াতে কয়েকজন বন্ধু মিলে শখের বশে গড়ে তোলেন ব্যান্ডটি। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁরা। তাঁদের অনেকেই এখন নেই। যুক্ত হয়েছেন কয়েকজন।
বছর দুয়েক আগে এসেছে চিরকুটের প্রথম অ্যালবাম চিরকুটনামা। খুব ভালো কিছু গান ছিল এই অ্যালবামে। কিন্তু আধখানা মিউজিকের যথাযথ পরিবেশনার অভাবে বেশির ভাগ গান শ্রোতাদের না শোনাই থেকে যায়। ব্যাপারটি বুঝতে পেরে নিজেদের উদ্যোগে অ্যালবামের ‘খাজনা’ আর ‘কাটাকুটি’ গান দুটির মিউজিক ভিডিও তৈরি করেন চিরকুটের সদস্যরা। এরপর বিভিন্ন টিভি চ্যানেল আর ইউটিউবের মাধ্যমে দারুণ জনপ্রিয় হয় এই দুটি গান। মঞ্চ এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সরাসরি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়েছে আরও দুটি গান—‘দয়াল’ ও ‘বন্ধু’।
ইমন বললেন, ‘চিরকুটনামা কিন্তু তৈরি হয়েছে রান্নাঘরে।’
এ আবার কেমন কথা! পাভেল বললেন, ‘সত্যি কথা। বাসায় একটা রান্নাঘর ছিল। তার অর্ধেকটাতে রান্নার কাজ হতো, বাকি অংশে স্টুডিও করা হয়েছিল। আর এখানেই সব কটি গান আমরা তৈরি করেছি।’
এখন তাঁদের দুজনেরই দুটি বড় স্টুডিও আছে ঢাকার মগবাজারে। পাভেলের স্টুডিওর নাম ‘বাটার রেকর্ড’ আর ইমনের ‘স্টুডিও চিরকুট’। এখন আর রান্নাঘরে নয়, চিরকুটের ব্যান্ডের সদস্যদের বেশির ভাগ সময় কাটে এই দুটি স্টুডিওতেই।
চিরকুট এখন গান করছে চলচ্চিত্রে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নতুন ছবি টেলিভিশন। এই ছবির জন্য চিরকুট তিনটি গানে কণ্ঠ দিয়েছে। একটি গানের কথা ও সুর চিরকুটের, অন্য দুটি গানের সুর করেছেন আইয়ুব বাচ্চু ও হূদয় খান। সুমী বললেন, ‘জেন এক্স অনুষ্ঠানটি দেখে ফারুকী ভাই আমাদের ব্যাপারে জানতে পারেন। পরে জানতে পেরেছি, তিনি নতুন কিছু খুঁজছিলেন।’
চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরে শুরু হয়েছে পরিচালক নুরুল আলম আতিকের ধারাবাহিক নাটক যাদুর শহর। এই ধারাবাহিকের শিরোনাম গান ‘কবি হাসে টাকা ভাসে, গঙ্গা বুড়ির শহরে’ চিরকুটের গাওয়া।
এই ব্যান্ডের দুজন কণ্ঠশিল্পী সুমী এবং পিন্টু। তাঁরা কেউই গানের ওপর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেননি। কিন্তু তাঁদের গান শুনে তা বোঝার উপায় নেই। পিন্টুর কণ্ঠে সুফি গান কিংবা গানের সঙ্গে উচ্চাঙ্গসংগীতের তানের ব্যবহার শুনে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।
চিরকুটের আরেকটি বড় অর্জন হলো গত ১৪ এপ্রিল রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র মিলনায়তনে এবং পরদিন স্যাফরনে নরওয়ের প্রথম সারির ব্যান্ড ওকে ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে গান গাওয়া। বাংলাদেশ ও নরওয়ের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নরওয়ে দূতাবাস আয়োজন করে কনসার্ট দুটি।
এসবই চিরকুটের পেছনের গল্প। এবার শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। নিজেদের অনেকগুলো নতুন গান জমা হয়েছে। আর দেরি নয়, এবার দ্বিতীয় অ্যালবাম তৈরি করতে হবে। সুমী বললেন, ‘কাজ শুরু হয়ে গেছে। প্রথমটার জন্য তো আট বছর সময় নিয়েছিলাম। এবার অল্প কিছুদিন।’

No comments

Powered by Blogger.