তেলের মূল্যবৃদ্ধি-বিরূপ প্রতিক্রিয়ার রাশ টানুন

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে সরকার কিংবা অর্থনীতিবিদদের কোনো যুক্তিই আমজনতার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। তাদের কাছে বিষয়টি শুধুই দুর্ভোগের এবং তার মাত্রা বহুমুখী। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলে তার প্রতিক্রিয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক ধরনের পণ্যমূল্য বাড়ে। ভোগ্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়।


আপাতভাবে পেট্রোল ও ডিজেলের ওপর নির্ভরশীল নয় এমন খাতের সঙ্গে যুক্তরাও একে অজুহাত দেখিয়ে ফায়দা লুটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে এবং এ বিষয়টিই সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত। বৃহস্পতিবার সরকারি নির্বাহী আদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি দুই টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পরিণতি আগের চেয়ে ভিন্নতর কিছু হবে বলে মনে হয় না। এ সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় সিএনজির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তও অচিরেই নেওয়া হবে তাতে সন্দেহ নেই। বিশ্ববাজারে গত কয়েক বছর ধরেই পেট্রোল-ডিজেল-কেরোসিন মহার্ঘ। মাঝে মধ্যে দামের হেরফের ঘটে বটে, কিন্তু সার্বিক বিচারে এর প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমান সরকারের আমলে একযোগে সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এবারেই প্রথম নেওয়া হলো। দাম বাড়ানোর কারণে জ্বালানি খাতে সরকারের ভর্তুকির মাত্রা সামান্য কমতে পারে। তবে বিশ্ববাজারে দাম আরও বাড়লে সরকারকে নতুন করে দাম বাড়ানোর কথা ভাবতে হতে পারে এবং তার পরিণতি সরকারের জন্য শুভ হওয়ার কথা নয়। জ্বালানি সচিবের তথ্য অনুযায়ী বর্তমান বিশ্ববাজারের হিসাবে প্রতিলিটার কেরোসিন ও ডিজেলে ৩৩ টাকা, অকটেনে ৮ টাকা ও পেট্রোলে ১৩ টাকা সরকারি ভর্তুকি রয়েছে। সরকার তার সিদ্ধান্তের পক্ষে তাই জোর সওয়াল করতেই পারে। তবে যুগ যুগ ধরে জ্বালানি তেলের আমদানি ও মূল্য নিয়ন্ত্রণের ভার সরকার নিজের হাতে রাখার কারণে এ সংক্রান্ত যে কোনো সিদ্ধান্তের পরিণতি তাকেই ভোগ করতে হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা যায় বিপক্ষে। আমাদের জ্বালানি তেলের উৎস দেশের বাইরে এবং মাঝে মধ্যে ব্যতিক্রম বাদে গত সাড়ে তিন দশক ধরে দাম ক্রমাগত বাড়ছেই। ভারতসহ আশপাশের সব দেশেই জ্বালানি তেলের দাম বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। সরকার শুল্ককর ছাড় দিয়ে দেশের ভোক্তাদের কিছুটা সুবিধা হয়তো দিতে পারে। কিন্তু তাতে রাজস্ব ভাণ্ডারে চাপ সৃষ্টি হয় এবং তা অর্থনীতির অন্য খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। সরকার যা করতে পারে সেটা হচ্ছে ডিজেল-পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির সুযোগে যেন বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি না হয় তার প্রতি কঠোর নজরদারি বজায় রাখা। এ কাজ সহজ নয়। ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে সংঘবদ্ধ। চাল, ডাল ও ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণে শুধু ব্যর্থই হয়নি, নানাভাবে অসহায়ত্বও প্রকাশ পেয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম লিটারে দুই টাকা বাড়ানোর সুযোগে তারা নিজেদের মুনাফা এর চেয়ে বাড়িয়ে নিতে থাকলেও কি এমন অসহায়ত্ব প্রকাশ পাবে? এমনটি ঘটলে জনদুর্ভোগ যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে সরকারের জনবিচ্ছিন্নতাও। সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জ্বালানি তেলের ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করলেও কিছুটা সুফল মিলতে পারে।
 

No comments

Powered by Blogger.