যানজটে নাকাল চকবাজার by মিঠুন চৌধুরী

চক সুপার মার্কেটের সামনে একটি সিটি বাস অন্যটিকে অতিক্রমের চেষ্টা করছে। পেছনে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। কাঁচাবাজারের দিক থেকে আসা রিকশাগুলো আটকে আছে সড়কের মুখে। এ সময় প্যারেড ময়দানের দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেল ট্রাফিক পুলিশের ইশারা অমান্য করে কাঁচাবাজারের দিকে যেতে চায়।


কর্তব্যরত দুই ট্রাফিক পুলিশ সড়ক বিভাজক থেকে নেমে এসে মোটরসাইকেলের চালককে আটকান। চারদিক থেকে আসা যানবাহনে চক সুপার মার্কেটের মোড়ে তখন ভজকট অবস্থা।
এটি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টায় চক সুপার মার্কেট মোড়ের চিত্র। চক সুপার মার্কেটের মোড় থেকে শুরু হওয়া যানজট কয়েক মিনিটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তেলিপট্টির মোড় ও অলি খাঁ মসজিদ পর্যন্ত। অন্যদিকে বাকলিয়াগামী কে বি আমান আলী সড়কে তখন রিকশার দীর্ঘ সারি। সিরাজউদ্দৌলা সড়কে আটকে পড়া যানবহনের সারি পৌঁছে গেছে প্যারেড ময়দানসংলগ্ন অংশ পর্যন্ত।
এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী লোকজন ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এই সড়কে যানজট নিত্যদিনের। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা—দিনের বিভিন্ন সময় এখানে যানজট লেগেই থাকে। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।
নগরের বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘চকবাজার থেকে রিকশা, টেম্পো বা বাস—যে গাড়িতেই যাই না কেন, যানজটে পড়তে হয়। দিনের বেশির ভাগ সময়ই এ অবস্থা হয়। একবার যানজটে পড়লে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা নষ্ট। প্রতি বৃহস্পতিবারে যানজট কাপাসগোলা পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। এ পথে এখন তাই হেঁটেই চলাচল করি।’
তেলিপট্টি মোড়সংলগ্ন শাহেদ ট্রেডার্সে কথা হয় মোহাম্মদ বেলালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে যানজট যেন প্রতিদিনই বাড়ছে। গণি বেকারি থেকে চকবাজার পর্যন্ত সড়কের সংস্কারকাজ চলায় সিরাজউদ্দৌলা সড়কে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেছে। সে তুলনায় সড়ক ছোট। তেলিপট্টি মোড়ে বিপরীতমুখী দুটি বাস এলেই যানজট লেগে যায়।’
যানজটের কারণ সম্পর্কে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বলছেন, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, প্রচুর রিকশা চলাচল, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রশস্ত সড়ক, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা—এসব কারণে চকবাজারসহ আশপাশের এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চক সুপার মার্কেট মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন সার্জেন্ট আমীর ফারুক। তিনি বলেন, ‘সড়কে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে আমরা দূর করতে পারি। কিন্তু এখানে যানজটের মূল কারণ অতিরিক্ত গাড়ি। অন্যদিকে কে বি আমান আলী সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা খুব কম। ওই সড়কে রিকশা, ঠেলাগাড়ি, টেম্পো, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার বেশি চলে। চক সুপার মার্কেটের সামনে দুই পাশের গাড়ি পাঁচ মিনিট বন্ধ রাখলেও কে বি আমান আলী সড়কের রিকশার সমুদ্র থেকে ৩০টির বেশি গাড়ি বের হতে পারে না। তা ছাড়া রাস্তাও খুব অপ্রশস্ত।’
ডিসি সড়কের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘রাহাত্তারপুল থেকে আন্দরকিল্লা, বাকলিয়া ও চকবাজারমুখী গাড়ি কে বি আমান আলী সড়ক ব্যবহার করে। ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এই রাস্তায় রিকশা চলে বেশি। কিন্তু মূল সড়কে ওঠার মুখে চক সুপার মার্কেটে রাস্তা একেবারেই ছোট। সঙ্গে বর্ষায় যোগ হয় জলাবদ্ধতা। এখানকার যানজট থেকে মুক্তির আশা নেই।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) এ কে এম এমরান ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাস্তায় নামলে সবাই আগে যেতে চায়, কেউ তো পরে যেতে চায় না। কাঁচাবাজার, ঘনবসতি ও রিকশা-অটোরিকশার সংখ্যা বেশি হওয়ায় ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট নিয়ন্ত্রণে সেখানে নিয়মিত একজন হাবিলদার, দুজন কনস্টেবলসহ পাঁচ-ছয়জন ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। রাস্তা প্রশস্ত না হলে এখানে যানজট নিরসন কষ্টসাধ্য।’

No comments

Powered by Blogger.