সিরিয়া :জেসমিন ফুলে লেগে থাকা রক্তের দাগ by অভীক দত্ত

সিরিয়ার প্রতিটি শহর, হোমস থেকে হুলো, রাজপথ পেরিয়ে প্রতিটি ঘর কিংবা সিরিয়ানদের প্রিয় ফুল জেসমিন_ সবকিছুতেই আজ বিদ্রোহ আর বিক্ষোভের রঙ। পুরনো রক্তের দাগ না শুকাতেই নতুন রক্তের দাগ আর হাজারটা লাশ। গত বছরের শুরু থেকে সিরিয়ায় স্বৈরতন্ত্রবিরোধী গণআন্দোলন শুরু হয়।


মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ার মতো আর কোনো দেশে গণআন্দোলন এত দীর্ঘায়িত হয়নি। একনায়ক বাশার আল আসাদের দমন নীতির বিপরীতে জনতার প্রতিরোধও সশস্ত্র রূপ ধারণ করছে। সিরিয়ার এ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বহির্শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। সিরিয়া নিয়ে পরাশক্তিগুলো দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় এবং বিবদমান গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনের কারণে সিরিয়া পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া-চীনের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে সিরিয়া ক্রমেই গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে চলেছে। এ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও সংঘাত প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কিনা আঞ্চলিক যুদ্ধ এমনকি বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে। মার্কিন ও তার মিত্ররা স্বৈরাচারী আসাদ সরকারবিরোধী গণবিক্ষোভ ও গণআন্দোলনকে কাজে লাগাচ্ছে। বিদ্রোহী সৈন্য ও শিক্ষিত যুবকদের সশস্ত্র করে 'ফ্রি সিরিয়ান আর্মি' নামক বিদ্রোহী বাহিনী গঠন করে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণ চালাচ্ছে। গত ২৫-২৬ মে হুলা শহরে সহিংসতম ববর্রতায় ২৯টি শিশুসহ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। এ নিয়ে চলছে পারস্পরিক দোষারোপের খেলা। হুলা শহরের সহিংসতার রেশ কাটতে না কাটতেই হোমস শহরে নতুন করে সহিংসতা দেখা দেয়। এই অব্যাহত সহিংসতার কারণে সিরিয়ায় অবস্থানরত জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা গত ১৬ জুন তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। একে অনেক বিশেল্গষক প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন। এভাবে গণবিক্ষোভে ফুটে ওঠা সিরিয়াতে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে সরকার ও বিরোধী পক্ষের সশস্ত্র ভূমিকা গৃহযুদ্ধের আড়ালে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। এভাবে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে জনগণের আন্দোলন-সংগ্রামকে বিভ্রান্ত ও ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের প্রস্তুতি অগ্রসর করা হচ্ছে। কাজেই আজ সিরিয়ার জনগণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা, তারা কি পরস্পর বিবদমান দুই পরাশক্তির স্বার্থের খেলার পুতুল হবে, নাকি সকল খেলার খোলনলচে পাল্টে দিয়ে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।

সঅভীক দত্ত
শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ শাবিপ্রবি
 

No comments

Powered by Blogger.