ফিরে দেখা নভেম্বর-খালেদ-তাহের: এক সূত্রে গাঁথা দুই মৃত্যু পরোয়ানা! by আমীন আহম্মদ চৌধুরী

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের জের ধরে সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড মারাত্মকভাবে হোঁচট খেয়ে ভেঙে পড়ে। ছয় মেজর সশস্ত্র বাহিনীকে কমান্ড করছেন নাকি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা করছেন—এই গুজবে সর্বত্র অস্থিরতা চলছিল।


ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়েত জামিল সরাসরি সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াকে প্রশ্ন করলেন, তিনি সেনাবাহিনী কমান্ড করছেন, নাকি ছয় মেজর বঙ্গভবন থেকে সেনাবাহিনী কমান্ড করছেন?
কর্নেল শাফায়েত জামিল ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালের ভোর থেকেই হত্যাসহ সেনা আইন ভঙ্গের অপরাধে ছয় মেজরকে অভিযুক্ত করে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। অন্যদিকে, আর্টিলারি ও ট্যাংক রেজিমেন্ট মেজর রশিদ ও ফারুকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশে অবিচল ছিল। ঢাকা সেনানিবাসে তখন তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়নে সেনাসংখ্যা দুই হাজারের মতো। এঁদের মধ্যে প্রায় সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা কর্নেল শাফায়েত জামিলের কমান্ডের প্রতি অনুগত ছিলেন। কর্নেল শাফায়েত জামিল অত্যন্ত সাহসী ও আদর্শবান সৈনিক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসাধারণ অবদান ছিল। সম্মুখ সমরে তিনি আহত হয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বের প্রতি অধীনের সেনাদের অবিচল আস্থা ছিল।
কিন্তু সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় কর্নেল শাফায়েত জামিল ও পরবর্তীকালে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ পাকিস্তান-ফেরত অফিসার ও সেনাদের গণনার মধ্যে আনেননি। তখন পর্যন্ত বদ্ধমূল ধারণা ছিল, এঁরা সবাই কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে অপারগ। তাঁরা বাতাস যেদিকে বইবে, সেদিকে ধাবমান হবেন। নিজের থেকে তাঁরা কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না। ১৫ আগস্টের আগে মেজর রশিদ ও ফারুক সম্পর্কেও একই ধরনের ধারণা পোষণ করা হতো। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান-ফেরত ২৮ হাজার সদস্যকে সশস্ত্র বাহিনীতে আত্তীকরণ করা হয়। এতে একই বাহিনীতে সমান্তরাল দুই মনমানসিকতা লক্ষ করা যায়। পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দী সেনার কাউকে চাকরিতে রাখেনি। আমরা মহানুভবতা দেখাতে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছি।
ডিভাইড অ্যান্ড রুল পদ্ধতি গ্রহণ না করে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে পুরো বাহিনী সাজানো অথবা শুধু পাকিস্তান-ফেরত সেনা দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী গড়া উচিত ছিল। তা না করে মুক্তিযোদ্ধা সেনাদের দুই বছরের সিনিয়রিটি দেওয়া হলো। তাতে করে গোড়াতেই এক সশস্ত্র বাহিনীতে দুই বাহিনী সৃষ্টি করা হলো। পাকিস্তান-ফেরত অনেক সেনা ও অফিসার পাকিস্তানি আমলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে অনড় ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধে যোগ দিতে না পেরে তাঁরাও হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধারা বয়সে ছিলেন নবীন। মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অফিসার পাকিস্তান-ফেরত অফিসারদের মোটেও সহ্য করার কথা নয়। মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তারা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যা অর্জন করেছেন, পাকিস্তান-ফেরত সেনাদের সেই অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে অনেক মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা শুরু থেকেই তাঁদের অবজ্ঞার চোখে দেখতে শুরু করেন। ফলে মনে মনে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান-ফেরতরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। ১৯৭৪ সাল থেকেই তাঁরা সেনাসদর থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থাসহ ডিভিশনাল কমান্ড পদগুলো সুকৌশলে দখল করতে থাকেন।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে ছয় মেজরের কর্মকাণ্ডে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যখন হতভম্ব ও বিহ্বল, তখন পাকিস্তান-ফেরতরা নিজেদের গুছিয়ে ধীরে ধীরে ষড়যন্ত্রের জাল আরও বিস্তৃত করে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে থাকেন। সামরিক আইন ও দৃষ্টিকোণ থেকে এবং আইনের সূক্ষ্ম বিচারেও এ ধরনের কার্যকলাপ অপরাধ। কিন্তু ক্ষমতার লড়াইয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে এটা কোনো দোষের ব্যাপার নয়।
১৫ আগস্টের পর সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্তরে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। সেই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যেও ক্ষমতার লড়াই চলতে থাকে। সেটা ছিল ব্যাটল অব উইট বা বুদ্ধির লড়াই। সেই লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের অধিকাংশই চাকরি হারান। যাঁরা টিকে যান, তাঁরাও নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলতে ভয় পেতেন। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধের সেই অভূতপূর্ব গান শুনতে পর্যন্ত ভয় পেতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরি হারানো বা অকারণে অপঘাতে নিহত হওয়ার ঘটনা শুরু হয় ৩ নভেম্বর থেকে এবং ৬ ও ৭ নভেম্বর তা চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। পরবর্তীকালে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো জিয়া ও মঞ্জুরকে হত্যা করে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে (১৩ জনের ফাঁসিসহ) চাকরিচ্যুত করা হয়। সেই থেকে প্রায় এক যুগ মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীতে করুণার পাত্রে পরিণত হন। এ প্রক্রিয়ার শুরুটা ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সাল থেকেই।
৩ নভেম্বর কর্নেল শাফায়েত জামিলের নেতৃত্বে ও জেনারেল খালেদ মোশাররফের তত্ত্বাবধানে অবৈধ মোশতাক সরকারকে উৎখাত করার জন্য সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া হলো। প্রয়াত মেজর ইকবাল (সিলেটবাসী, পরবর্তীকালে মন্ত্রী) বঙ্গভবন থেকে তাঁর প্রথম ই-বেঙ্গল নিয়ে সরে এসে কর্নেল গাফফার বীর উত্তমের নেতৃত্বে বঙ্গভবন ঘেরাও করে মোশতাককে (তখন কেবিনেট মিটিং চলছিল) হেস্তনেস্ত করে (কথিত আছে যে কর্নেল গাফফার খন্দকার মোশতাককে থাপড় মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেন এবং শাফায়েত জামিল স্টেনগান নিয়ে তেড়ে আসেন। মাঝখানে ওসমানী দাঁড়িয়ে অবস্থান নিয়ন্ত্রণে এনে বঙ্গভবনকে রক্তাক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করেন) পদত্যাগ করতে বাধ্য করান এবং প্রধান বিচারপতি সায়েমকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) বানানো হলো। ৫ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে সেনাপ্রধান করা হলো। ইতিমধ্যে গৃহবন্দী সেনাপ্রধান (৩ নভেম্বর থেকেই গৃহবন্দী) জিয়াউর রহমান ব্রিগেডিয়ার রউফ ও কর্নেল মালেকের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র দেন। ধুরন্ধর মোশতাক পদত্যাগ করলেও ছয় মেজরসহ তাঁদের অন্য সাথিদের নিরাপত্তা বিধানের নিমিত্তে সংলাপ চালিয়ে যান ৩ থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এই সময় দেশে কোনো সরকার ছিল না। কেউই কিছু জানতে পারছিল না। সেনাসদরসহ সবাই যখন অন্ধকারে নানা ধরনের গুজবের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছিল, তখনই ৫ নভেম্বর জেলহত্যার কথা সেনাসদর জানতে পারে। মেজররা ৪ নভেম্বর দেশ ছাড়ার প্রাক্কালে বলা হয়, খন্দকার মোশতাকের ইশারায় মেজর রশিদের নির্দেশে সুবেদার মোসলেমের নেতৃত্বে জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞের একটি এই জেলহত্যা। ঘাতকেরা খন্দকার মোশতাকের জিঘাংসা চরিতার্থ করার জন্যই এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, না এর পেছনে আরও কোনো ষড়যন্ত্র ছিল, তা আজও রহস্যাবৃত। অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগ তথা দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্যই এই জঘন্য হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে খন্দকার মোশতাক প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই ঠান্ডা মাথায় এই হত্যাযজ্ঞের নির্দেশ দেন। এই হত্যাযজ্ঞের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়।
ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, কর্নেল শাফায়েত জামিল ও মেজর হাফিজ যখন রাষ্ট্রপতি ও নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত, সেনানিবাসে তখন পাল্টা অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। ঢাকা সেনানিবাসে দুই হাজার মুক্তিযোদ্ধা পদাতিক সেনার বিপরীতে তখন আর্টিলারি ও ক্যাভলরি সৈনিকসহ অন্যান্য আর্মস ও সার্ভিসেস সেনাসংখ্যা ছিল প্রায় সাত-আট হাজার। যাদের ৯৫ শতাংশই ছিল পাকিস্তান-ফেরত। তদুপরি সিওডি, অস্ত্র তৈরির কারখানা, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি জায়গায় অনেক সিভিলিয়ান কাজ করছিল। আর্মি ক্লার্ক কোরের অনেক সেনা যাঁরা সৈনিকদের ভেতর শিক্ষিত (অন্তত ম্যাট্রিক পাস) তাঁদের অনেকেই তখন রাজনৈতিক দর্শনচর্চায় ব্যাপৃত হয়ে সেনাদের একত্র করার প্রয়াসে লিপ্ত হতে থাকেন। কর্নেল তাহের তাঁর গণবাহিনীর (জাসদ সমর্থিত) বার্তা সেনাসদস্যদের মধ্যে ছড়াতে থাকেন। তিনি রীতিমতো ক্লাস নেওয়া শুরু করেন সেই ১৯৭৪ সাল থেকে। কর্নেল তাহের পাকিস্তান-ফেরত সেনা কমান্ডো, নৌ-কমান্ডো, ফ্রগম্যানসহ সিওডি, অস্ত্র তৈরির কারখানা এবং বড় ভাই ইউসুফ, যিনি পাকিস্তানি বিমানবাহিনীতে করপোরেশনে ছিলেন, তাঁর মাধ্যমে বিমানবাহিনীসহ তিন বাহিনীতে অনুপ্রবেশ করতে প্রয়াসী হন।
৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ ও তাঁর অনুগামীরা বঙ্গভবন ঘেরাও করেন। কিন্তু এর আগে অক্টোবর মাসে তাঁকে এই বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল যে, সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ছয় মেজরকে শায়েস্তা করা কোনো ব্যাপারই নয়, কিন্তু তাঁকে বাদ দিয়ে করতে গেলে সেনাবাহিনীতে বিভাজন দেখা দেবে। ফলাফল নৈরাশ্যজনক হবে। তদুপরি চেইন অব কমান্ড স্থাপন করতে গিয়ে সেনাপ্রধানকে বাদ দিয়ে অপারেশন শুরু করলে তা চেইন অব কমান্ড ভঙ্গেরই শামিল হবে। তাতে অপারেশন শুরু করার আগেই অপারেশন ভেস্তে যাবে। তিনি হেসে বললেন, চিফ ওঁদের (ছয় মেজর) বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবেন না। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে এও বলা হলো যে সিরাজ সিকদার ও জাসদের গ্রুপ বহুদিন থেকে সেনাবাহিনীর ভেতরে তৎপর, তারাও অরাজকতার সুযোগ নিতে পারে। বিশেষ করে কর্নেল তাহের তাঁর সেনা ব্যাকগ্রাউন্ডকে কাজে লাগিয়ে একটা অঘটন ঘটাতে পারেন।
জবাবে আত্মপ্রত্যয়ী খালেদ মোশাররফ বলেন, তাহের একজন আরবান গেরিলা, ব্যাপক আকারে (জাতীয় পর্যায়ে) কিছু করার ক্ষমতা তাঁর নেই। মিসেস খালেদ মোশাররফও জেনারেল খালেদকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, তিনি যেন জিয়ার বিরুদ্ধে কিছু করতে না যান। কর্নেল শাফায়েত জামিলও ব্যক্তিগতভাবে জিয়াকে পছন্দ করতেন। ফলে জিয়াকে গৃহবন্দী করেই তাঁরা তাঁদের অপারেশন শুরু করলেন।
অনেকেই মনে করেন, খালেদ-শাফায়েত গোড়ায় গলদ করে বসেছিলেন। সেনাদের ভেতর জিয়ার ইমেজ ঈর্ষণীয় পর্যায়ে ছিল। কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়ার ভারী গলায় ঘোষণা সেনাসহ সর্বস্তরের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, ফলে তাঁর একটা আলাদা ইমেজ ছিল। কর্নেল আবু তাহের এই সুযোগ আগ বাড়িয়ে গ্রহণ করেন। তাহেরের সঙ্গে জিয়ার যোগাযোগ সব সময়ই ছিল। কর্নেল তাহের রুশ বিপ্লবের তারিখকে স্মরণ করে তাঁর বিপ্লবের তারিখ আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন ৬-৭ নভেম্বর রাত ১২টায়। এর মধ্যে নভেম্বরের অভ্যুত্থান তাঁকে সুবর্ণ সুযোগ করে দেয়। তাহের তার আগ থেকে ওসমানী, জিয়া ও খালেদের মধ্যে জিয়াকে বেছে নিয়েছিলেন তাঁর বিপ্লবের নায়ক হিসেবে। জিয়াকে গৃহবন্দী থেকে উদ্ধার করতে হবে—এই দাবি সামনে নিয়ে এসে ক্যান্টনমেন্টে সেনা ও সিভিল কর্মচারী-কর্মকর্তাদের একত্র করেন তিনি। সঙ্গে রাখেন সৈনিকদের ১২ দফা দাবি। রাত ১২টায় প্রথম গোলাগুলি শুরু হয়।
এ সময় শাফায়েত জামিল বঙ্গভবন থেকে টেলিফোনে জানতে চাইলেন, সত্যিই কোনো ফায়ারিং শুরু হয়েছে কি না। তারপর তিনি বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। জেনারেল খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা ও লে. কর্নেল হায়দার (তিনি চট্টগ্রাম থেকে ছুটিতে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে এক দিনের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছিল) বঙ্গভবন থেকে বের হওয়ার পর হঠকারিতার শিকার হয়ে ১০ বেঙ্গল (শেরেবাংলা নগরে) লাইনে নির্মমভাবে নিহত হলেন। মুক্তিযুদ্ধের কে ফোর্স কমান্ডার কিংবদন্তি এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের এই করুণ পরিণতি সবাইকে ব্যথিত করেছিল। গৃহবন্দী অবস্থা থেকে বের হয়ে জিয়া শক্ত হাতে হাল ধরতে চেষ্টা করতে থাকেন। কর্নেল তাহের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড কাঠামোর একেবারে কোমরে আঘাত করেছিলেন। সেই সময় ব্রিগেডিয়ার আমিনুল হক বীর উত্তম অতন্দ্র প্রহরীর মতো জিয়ার পাশে তাঁর ব্যাটালিয়ন নিয়ে যদি না দাঁড়াতেন, তাহলে জিয়া হয়তো তাঁর ভাগ্য তাহেরের হাতেই সমর্পণ করতেন। সেনাবাহিনীর কাঠামো ও চরিত্র নিয়ে জিয়ার সঙ্গে তাহেরের বিরোধ চরমে ওঠে। জিয়া তাঁকে ২৪ নভেম্বর বন্দী করে ট্রাইব্যুনালে বিচার করে ২১ জুলাই ১৯৭৬ সালে ফাঁসি দিলেন। নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিহাস!
আমীন আহম্মদ চৌধুরী বীর বিক্রম: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত।

No comments

Powered by Blogger.