ব দ লে যা ও ব দ লে দা ও মি ছি ল ব দ লে যা ও মি ছি ল-ইভ টিজিং: আগে পুরুষের মানসিকতার পরিবর্তন by সৈয়দ মামুনুর রশিদ

‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’ ব্লগে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ও নির্বাচিত চারটি ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ ইভ টিজিংমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার একটি বিশ্লেষণাত্মক অভিমতসহ
আরও দুজন লেখকের নির্বাচিত মন্তব্য ছাপা হলো।


ইভ টিজিং কী? শব্দটি গ্রামের অতিসাধারণ মানুষের কাছে সহজে বোধগম্য নয়। সম্প্র্রতি একটি সংস্থার উদ্যোগে ইভ টিজিংয়ের বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শহর ও গ্রামে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা হয়। আমরা সাধারণ নিরক্ষর মানুষের কাছে প্রায়ই এ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি যে ‘ইভ টিজিং’ আসলে কী? কেউ মারছে? না খারাপ কিছু?
এবার ইভ টিজিংয়ের কিছু দৃশ্যপট বলছি, ভোর কাটিয়ে কাঁচা সকালে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি মোড়। ইপিজেডগামী দুটি সিটিবাস যাত্রী তুলছে হাঁকডাক দিয়ে। যাত্রী বলতে ৯০ শতাংশই পোশাকশ্রমিক। অধিকাংশই কিশোরী আর মহিলা। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, বাসের হেলপারও দরিদ্র সম্প্রদায়ের একজন। সিঁড়িতে উঠতে সহায়তার নামে তারা যৌথভাবে নির্বিচারে হাত চালাচ্ছে নারী শ্রমিকদের শরীরে। পুরো তল্লাটে এমন কোনো বিবেকবান নেই যে এই অসংগতি নিয়ে কথা তুলবে, এ যেন স্বাভাবিক একটা নিয়ম।
দুই. আগ্রাবাদ হাজীপাড়া, বেপারীপাড়া, মৌলভীপাড়া, মিস্ত্রিপাড়াসহ বিশাল এলাকাজুড়ে গৃহশিক্ষক হিসেবে দোলন মাস্টারের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। তাঁর হঠাৎ মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবারের হাল ধরতে বাধ্য হয় তাঁর নবম শ্রেণীপড়ুয়া কিশোরী কন্যা। অভিভাবকহীন মেয়েটি যখন সন্ধ্যার পর বাবার পড়ানো ছাত্রছাত্রীকে পড়াতে যায়, তখন আশপাশের বখাটেরা তো ওৎপেতে থাকেই, টিউশনি বাড়ির মধ্যবয়সী গৃহকর্তাও নানা অস্বাভাবিক প্রস্তাব নিয়ে হাত বাড়ায়। মেয়েটি চোখ মুছতে মুছতে সমাজের কাছে অসহায় হয়ে পড়ার বর্ণনা দেয়।
তিন. সিএনজি অটোরিকশার পেছনে লেখা, ‘পাখিরা ফিরে যায় পাখির বাসায়/মেয়েরা বসে থাকে সিএনজির আশায়’। অটোরিকশার পেছনের লেখাটি দেখে বিব্রত হন পথচলা নারী আর সেটাই যেন উপভোগ করেন সিএনজির চালক।
ইভ টিজিং শব্দটিকে আদালত বলেছেন ‘উত্ত্যক্তকরণ’। কিন্তু গণমানুষের কাছে বোধগম্য করে তুলতে যদি বলা হয়, ইভ টিজিং হলো নারীদের প্রতি ‘টিটকারি মারা’ বা যৌন হয়রানি করা, তাহলে বোধ হয় সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টা অনেক সহজ হয়ে আসে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সর্বপ্রথম বাংলাদেশের এ সমস্যাটি রাষ্ট্রীয়ভাবে চিহ্নিত করে আন্দোলন শুরু করেন। তার আগে কিছু কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এ বিষয়ে কাজ শুরু করলেও দাতাদের অর্থছাড় টানাপোড়েন আর অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আমাদের পরম সৌভাগ্য, আজ সর্বস্তরের জনগণ, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমকর্মীরাও নেমে এসেছেন এই আন্দোলনে। প্রথম আলোর মতো পত্রিকা ‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’ নিয়ে সামাজিক জাগরণের ইস্যু হিসেবে গ্রহণ করে এগিয়ে এসেছে। আমরা আশান্বিত হচ্ছি, বদলে দেওয়ার স্বপ্নে।
আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। ইভ টিজারদের হাতে খুন হয়েছেন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক, মা, সহোদর ভাই আর বাবা, লাঞ্ছিত হয়েছেন স্কুল কমিটির সভাপতি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। মানসিক আর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অসংখ্য কোমলমতি কিশোরী-তরুণীর লেখাপড়া চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে।
ইদানীং মুঠোফোন ও ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন সামাজিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনেক বখাটে নিজেদের পরিচয় গোপন করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। সম্পর্কের পর যখন বখাটের মুখোশ উন্মোচিত হয়, তখনই সংঘটিত হয় নৃশংস ঘটনার। এ ধরনের এক দুঃখজনক বন্ধুত্বের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর চট্টগ্রামে খুন হন ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্রী মিদাত সারিমা রহমান।
আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী স্বামী থেকে শুরু করে বন্ধু, সহকর্মী ও নিকটাত্মীয়দের কাছেও নিরাপদ নন। নারী যেন নিজের জীবন বাঁচাতে পলায়নরত আজন্ম ছুটে চলা এক বিপদগ্রস্ত হরিণী। বাস্তবতা বড়ই নির্মম! যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলীয় নারী, সে দেশের নারীরা কত অবহেলিত ও বঞ্চিত! নারীর পক্ষে সভা, সেমিনার যা কিছুই হোক না কেন, বাংলাদেশের নারীরা ভালো নেই, নিরাপদে নেই।
সচেতনতা কিংবা শিক্ষার অভাবে নির্যাতিতরা অনেকেই জানেন না কোথায় ও কীভাবে এর প্রতিকার পাওয়া যায়। কার্যত দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিনা খরচে আইনি-সহায়তা দেওয়ার বিভিন্ন উপায় থাকলেও তা প্রচারের অভাবে গ্রামাঞ্চলের নারীরা জানেন না। এই দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। পরিবর্তন নিজ পরিবার থেকেই শুরু করতে হয়। পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও অনেক ভুল ধারণা বাসা বেঁধে থাকে। নারী না থাকলে সমাজ থাকবে না, সমাজ না থাকলে পৃথিবী টিকবে না। সুতরাং নিজেদের টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে নারীদের সম্মান করতে শিখুন। নারীর প্রাপ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হলেই সত্যিকারভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে মানবাধিকার, প্রতিষ্ঠিত হবে মানবতা। মানবতার মুক্তির জন্য নারীর মুক্তি অনিবার্য।
সৈয়দ মামুনুর রশিদ: বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক।
totalmamun@yahoo.com
যোগ দিন ফেসবুক পেজে : www.facebook.com/bjbdmichil

জনমত জরিপের ফলাফল
বদলে যাও বদলে দাও মিছিলের ওয়েবসাইটে নতুন তিনটি জনমত শুরু হয়েছে চলতি সপ্তাহে। আপনিও অংশ নিন জরিপে।
ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের সাজা দিতে প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট বসা উচিত বলে মনে করেন?

 হ্যাঁ ৮৬%  না ৮%
 মন্তব্য নেই ৬%
২০ জুন, ২০১২ পর্যন্ত
আপনি কি মনে করেন, নৌ-দুর্ঘটনা কমাতে চলতি বাজেটেই নৌ-পুলিশ বাহিনী গঠন করা জরুরি?
 হ্যাঁ ৭২%  না ১৯%
 মন্তব্য নেই ৯%
২০ জুন, ২০১২ পর্যন্ত
শিশুদের জন্য একটি বিশেষায়িত টিভি চ্যানেল অনুমোদন দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন কি?
 হ্যাঁ ৮৫%  না ৮%
 মন্তব্য নেই ৭%
২০ জুন, ২০১২ পর্যন্ত
www.bodlejaobodledao.com

No comments

Powered by Blogger.