দুর্বৃত্তদের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে হবে by মোয়াজ্জেম হোসেন খান

বাজেট ঘোষণা হয়েছে সম্প্রতি। বিশেষ দ্রব্যগুলো থেকে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। সাধারণ অনেক আইটেমও আছে যেগুলো এই ছাড় সুবিধা পেয়েছে। তার পরও দ্রব্যমূল্য বাড়বে কেন? আমার কাছে মনে হয়েছে, সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা কাজ করছে। তা না হলে দেখুন কিবরিয়া সাহেবের আমলের কথা। তিনি ছয়টি বাজেট দিয়েছিলেন।


মনে থাকার কথা, সে সময় বাজার নিয়ন্ত্রণে ছিল। দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা ছিল না। দ্রব্যমূল্য বরাবরই ছিল ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। তখন আমরা দেখেছি অর্থমন্ত্রী খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ আরো কিছু মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সম্পর্ক বজায় রাখতেন। তাদের সঙ্গে বৈঠক করতেন। কোনো দ্রব্যের ঘাটতি হলে সঙ্গে সঙ্গে তা পূরণের ব্যবস্থা করা হতো। বর্তমান অর্থমন্ত্রী অনেক সিনিয়র মানুষ। একজন মুক্তিযোদ্ধাও। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তিনি কেন যে ওভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন না। মন্ত্রণালয় পরিচালনার জন্য অন্যদের পরামর্শ গ্রহণে বাধা কোথায়? সহযোগিতারও প্রয়োজন।
মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয় পরিচালনার পাশাপাশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকা যায় কি না ভেবে দেখতে হবে। হয়তো মন্ত্রিত্ব করার জন্য তিনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসেন না; কিন্তু প্রতিষ্ঠানের প্রতি মমত্ববোধ থাকেই। হয়তোবা বাজারের এই পরিস্থিতির জন্য মন্ত্রীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও একটা ভূমিকা রাখতে পারে।
সরকারের বোঝা উচিত, বিরোধী পক্ষ কার্যকর আছে। তারা প্রচার সুবিধাকে কাজে লাগাতে পারে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ক্ষেত্র যাতে তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে সরকারকেই। সরকারের সুদৃষ্টি না থাকলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এতে জনগণকে ক্ষুব্ধ করার কাজও করতে পারে তারা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি থাকার কোনো বিকল্প নেই।
সরকারের তদারকি থাকলে কোনো দ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ার কারণ নেই। যেমন- চালের দামের কথা বলা যায়। মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। চালের দাম বাড়েনি। প্রচুর সরবরাহ আছে চালের। চাতালে-গুদামে চাল রাখার জায়গা নেই। বাম্পার ফলন হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বারবার বলছেন দুষ্টু লোকের কথা। দুষ্টু লোকের কথা বলেই কি সমাধান আসবে? প্রশ্ন হচ্ছে, দুষ্টু লোক কারা? তাদের দমনের ক্ষেত্রে সাফল্য আছে কি? দুষ্টুরা তো সব সময়ই থাকবে। সাফল্য নির্ভর করবে আমরা সেসব দুষ্টুকে কিভাবে অকেজো করতে পারছি তার ওপর।
দুষ্টু লোকরা অভ্যন্তরীণ গোলযোগও তৈরি করতে পারে। দেখেন না রোহিঙ্গাদের বিষয়টি। এই দেশে থেকে মিয়ানমারে কলকাঠি নাড়ছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, জামায়াতের হাত রয়েছে সেখানে উস্কে দেওয়ার ব্যাপারে। সুতরাং এমন দুষ্টুরা তো তাদের কাজ করবেই। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার তাদের কিভাবে দেখছে তার ওপর।
এ দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারকে পণ্যের মজুদ তদারকি করতে হবে।
টিসিবিকে চালু করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে মেরুদণ্ডহীন করে রাখার মানে কী? দুর্বৃত্তদের হাত থেকে টিসিবিকে রক্ষা করতে হবে। দক্ষ-নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারে তেমন লোক নিয়োগ করতে হবে। নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে। এখন টিসিবি যদি কোনো দ্রব্য বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনে আনে, তাহলে তারা কম মূল্যে সেই দ্রব্য বাজারে ছাড়বে কিভাবে? ভেনিজুয়েলার দিকে তাকান। গ্রামে গ্রামে ন্যায্যমূল্যের দোকান খোলা হয়েছে সেখানে। বাংলাদেশে ৬০ হাজার বা অধিক গ্রাম আছে। প্রতিটি গ্রামে একটি করে ন্যায্যমূল্যের দোকান খোলা হোক। প্রধানমন্ত্রী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন। সরকারকে ভাবতে হবে সামনে নির্বাচন। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের শেষ সময় এটা। যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করার দিকে নজর দিতে হবে। মজুদদারদের চিহ্নিত করতে হবে। সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য।

No comments

Powered by Blogger.