১২ পেরিয়ে জয়া by কামরুজ্জামান

‘আমরা শিল্পীরা নিজেদের কষ্টগুলোকে সহজে প্রকাশ করি না। কিন্তু যখন একটি কষ্টের দৃশ্যে অভিনয় করি, তখন নিজের ব্যক্তিজীবনের কষ্টটাকে অনুভব করে কাঁদি। এ কান্নাটা সত্যিকারের কান্না। ফলে অভিনয়টা অনেক প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। আমরা শিল্পীরা এই একটা কাজ করি। গোপন কথাটা আজ বললাম।’ বলছিলেন জয়া আহসান। প্রশ্ন করেছিলাম, কষ্ট পেলে কী করেন? উত্তরে জয়া এভাবেই কথাগুলো বললেন।


আমরা জয়ার শিল্পীজীবন সম্পর্কে সবাই কমবেশি জানি। তার পরও জয়া নামটি শুনলেই অমিতাভ রেজার মায়া ও মৃত্যুর গল্প, নূরুল আলম আতিকের বিকল পাখির গান, মেজবাউর রহমান সুমনের ফেরার পথ নেই থাকে না কোনোকালে, কিংবা তার পরও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে, রবিউল আলমের পঞ্চম বিবাহবার্ষিকী, মাহমুদ দিদারের চেরিফুলের নামে নাম ধরনের নাটকগুলোই চোখে ভাসে। আর অনিমেষ আইচের পথ গেছে বেঁকে ধারাবাহিকটির কথাও মনে না পড়ে পারে না। বাইরে থেকে জয়াকে দেখে কে কী মনে করে, জয়া তা জানেন না। নিজের সম্পর্কে তথ্য দিতে গিয়ে জানালেন, রাগ, হিংসা এসব তার নেই বললেই চলে। যদি খুব বেশি রাগ ওঠে, তখন নিজের ওপর রাগ করেন। শোরগোল নয়, নীরবতাই তার কাছে প্রিয়। একাকিত্বকে খুবই পছন্দ করেন, ‘এ জন্য বিষণ্নতা আমাকে পেয়ে বসে।’
জয়ার কাছে প্রশ্ন ছিল, নিজেকে এতটা ঈর্ষণীয় জায়গায় নিয়ে গেলেন কীভাবে?
জয়া হাসেন। নিজেকে খুব উঁচু মাপের অভিনয়শিল্পী বলতে একদমই নারাজ তিনি। উল্টো জয়ার দুঃখবোধ হচ্ছে, ‘চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে যদি আরও কয়েকজন থাকত, তাহলে আমি হয়তো ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যেতাম না। আমি কাজ কম করি। যে কাজটা করি, সেই কাজের প্রতি আমার চেষ্টা থাকে শতভাগ; থাকে সততা। আমি চাইলে মাসের ৩০ দিনই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারতাম, কিন্তু তা করি না। একটি কাজ করার পরে মাঝে বিরতি নিই। যে কাজটা করব, সেটার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করি। এভাবেই আমি কাজ করে চলছি দীর্ঘ ১২ বছর।’
১৯৯৭ সালের দিকে জয়া বিনোদন-ভুবনে এসেছেন। কখনো মডেলিং, কখনো বা অভিনয়। ২০০০ সাল থেকে অভিনয়কে পেশা হিসেবেই নিলেন। অভিনয়ের কোনো শিক্ষা ছিল না তাঁর। তবে অনেক নান্দনিক ছবি দেখেছেন, এখনো দেখেন। একেকটি চরিত্র কীভাবে কথা বলে, তা তিনি ধরার চেষ্টা করেন।
পেশাদার অভিনেত্রী হিসেবে এক যুগ পার করেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে নতুনদের ভিড়েও তিনি এখনো অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী। তাঁর সময়কার অনেকেই হারিয়ে গেছেন। এর পেছনে রহস্য কী?
জয়া হাসেন। কোনো রহস্য নাকি নেই। পর্দায় কম আসা। নিজেকে ‘না’ বলতে শেখা। ‘আমি যখন একটি গল্প পাই, তখন দেখি গল্পটি খুবই সুন্দর, চরিত্রটি ভালো। কিন্তু আমি যদি মনে করি কাজটা সে ভালো করে করতে পারবে না, তখন আমি “না” বলে দিই। এই “না” বলতে পারাটাও একটা বড় কাজ এই মাধ্যমে। তার পরও কিছু মন্দ কাজ করি, তখন আবার “না” বলতে শুরু করি।’
ছোটপর্দা জয় করে বড়পর্দার দর্শকদেরও মন জয় করেছেন তিনি। ২০১১ সাল জয়ার জন্য ছিল বেশ আনন্দের একটি বছর। এ বছরই তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্র গেরিলা অর্জন করে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার। তিনি অভিনয় করেছেন চোরাবালি চলচ্চিত্রে। আসছে ফেব্রুয়ারিতে জয়া যাবেন কলকাতার অরিন্দম শীলের আবর্তন চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে।
‘ছোটপর্দায় আমি অনেক দিনই অভিনয় করছি না। এর কারণ হচ্ছে, ভালো কাজ পাই না। আর কাজ করে ভালো না লাগলে সেটা করতে চাই না। আমাদের দেশে সিনেমাকে একটা সম্ভাবনাময় শিল্প মনে হয়। এখানে ভালো কাজ করার সুযোগ আছে। আমি সেখানে কাজ করতে চাই। ভালো চলচ্চিত্র হলে কাজ করব। কলকাতার চলচ্চিত্রনির্মাতা অরিন্দম শীল আমার নাটক দেখেছেন। দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ১৩ জানুয়ারি তিনি আসবেন। সেখানকার ছবিতে আমি আছি; পাওলি দামসহ আরও কয়েকজন শিল্পী থাকবেন। একটি ভালো ছবি হবে, এ প্রত্যাশা করছি।’ বলছিলেন জয়া।
এক যুগ পার করে নিজেকে আরও নিখুঁত অভিনয়ের মাধ্যমে সংস্কৃতিজগতে স্থায়ী আসন নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা কাজ করে তাঁর মনেও। তিনি এগিয়ে যান কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে—এই তো চায় তাঁর গুণমুগ্ধ দর্শক-শ্রোতারা।

No comments

Powered by Blogger.