বাতেনি চিকিৎসক আব্দুস সোবাহান by হুমায়ূন আহমেদ

সাইনবোর্ডে লেখা, 'এইডস, ক্যান্সারসহ যাবতীয় রোগ-ব্যাধি গেরেন্টিসহ চিকিৎসা করা হয়। প্যাকেজ ডিল, বিফলে মূল্য ফেরত। গালে চড়।' মগবাজারে যাবার পথে গাড়ি থেকে কয়েকবার এই সাইনবোর্ড চোখে পড়েছে। 'গালে চড়' লেখা পড়ে মজা পেয়েছি কিন্তু কখনো এইডস-ক্যান্সারের চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা হয় নি।

ঢাকা শহরভর্তি এই ধরনের ধন্বন্তরি চিকিৎসক। তাদের বেশির ভাগই ডাবল গোল্ডমেডালিস্ট এবং গ্যারান্টিসহ ক্যান্সারের মতো দুরন্ত ব্যাধি আরোগ্য করে থাকেন। এই ধরনের চিকিৎসকদের নিয়ে একটি গল্প লিখব বলে কয়েক বছর ধরেই ভাবছি। লেখা হয় নি। কারণ তাদের কারোর সঙ্গেই আমার দেখা হয় নি। তাদের সঙ্গে পরিচয় সাইনবোর্ডের মাধ্যমে।

গত ঈদে বড় ধরনের ঝামেলায় পড়লাম লেখা নিয়ে। বেশ কিছু লেখা লিখতে হবে, বিষয়বস্তু খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু হিমু আর মিসির আলি লিখলে চলবে না, এর বাইরেও কিছু লিখতে হবে। হঠাৎ মনে হলো, ধন্বন্তরি সাইনবোর্ড চিকিৎসক নিয়ে একটা বড় গল্প লেখা যেতে পারে।
বাংলাদেশে প্রকাশিত অনেক পত্রিকার ঈদের আবদার মিটাতে পারি। ঈদ এলেই পত্রিকা সম্পাদক সস্তা জনপ্রিয় লেখকদের লেখার জন্য মহাব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঈদের ঝামেলা শেষ হলে তাদের পত্রিকাতেই সস্তা বাজারি লেখকরা সাহিত্যের কী ক্ষতি করছেন তা বেশ আয়োজন করেই লেখা। অন্য বাজারি লেখকদের বিষয়ে আমি জানি না, নিজের কথা বলতে পারি_ আমি এই ধরনের লেখা পড়ে কি জানি কেন, যথেষ্ট মজা পাই।
নুহাশপল্লীর ম্যানেজারকে সঙ্গে নিয়ে বিফলে মূল্য ফেরত, গালে চড় চিকিৎসকের কাছে এক সন্ধ্যাবেলায় উপস্থিত হলাম।
দুই কামরার অফিস। একটিতে চিকিৎসকের অ্যাসিস্ট্যান্ট বসে আছেন। অন্যটিতে চিকিৎসক। মাঝখানে ট্রান্সলুসেন্ট গ্গ্নাসের দরজা। এই ধরনের গ্গ্নাসের ভেতর দিয়ে পরিষ্কার কিছু দেখা যায় না, নড়াচড়া চোখে পড়ে। আমি গেছি গল্পের সন্ধানে, আমাকে সবকিছু খুঁটিয়ে দেখতে হবে। চিকিৎসকের অ্যাসিস্ট্যান্টকে দেখে অবাক হলাম, মধ্যবয়স্ক হিজাব পরা একজন মহিলা কুস্তিগীর। বিশাল শরীর, গাবদা গাবদা হাত। সাহিত্যের ভাষায় সমীহ জাগানিয়া দেহ।
মহিলা বললেন, নাম রেজিস্ট্রি করতে হবে। রোগী কে?
আমি ম্যানেজারকে দেখিয়ে দিলাম। মহিলা ম্যানেজারের দিকে এক পাতার ফরম এগিয়ে দিলেন। ফরম ফিলাপ করতে হবে। আমি ফরমে চোখ বুলালাম। গল্প লেখার জন্য ফরমের একটা নমুনা আমার প্রয়োজন। ফরমটা এ রকম_
রেজিস্ট্রেশন নং :
(অফিস পূরণ করিবে)
নাম : (পূর্ণ নাম)
ঠিকানা : (মোবাইল নংসহ)
বয়স :
ওজন :
উচ্চতা :
গাত্র বর্ণ : (ফর্সা/শ্যামলা/কৃষ্ণ)
(টিক মার্ক দিন)
পছন্দের স্বাদ : মিষ্টি/তিতা/টক
(টিক মার্ক দিন)
ধূমপান : হ্যাঁ/না
(টিক মার্ক দিন)
পানে জর্দা : হ্যাঁ/না
(টিক মার্ক দিন)
পছন্দের আবহাওয়া : শীত/উষ্ণ
(টিক মার্ক দিন)
পছন্দের খাবার : মাছ/মাংস/সবজি
(টিক মার্ক দিন)
ব্যাধির চিকিৎসায় গাত্র বর্ণ লাগছে, পছন্দের খাবার লাগছে, পছন্দের আবহাওয়া লাগছে দেখে মনে হচ্ছে চিকিৎসা পদ্ধতি হোমিওপ্যাথি।
আমার বাবা এক সময় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে কিছুদিনের জন্য ঝুঁকেছিলেন। তিনি মাত্র বারোটা ওষুধে চিকিৎসা করতেন। প্রায়ই আমাদের জিভে এক ফোঁটা ওষুধ দিতেন এবং সাগুদানার মতো (মিষ্টি) চার-পাঁচটা করে বড়ি খেতে হতো। বারো ওষুধের এই চিকিৎসা পদ্ধতি হোমিওপ্যাথির এক উপশাখা। নাম খুব সম্ভব বায়োকেমিক চিকিৎসা। এই চিকিৎসা শাস্ত্রের জনকের নাম_ 'সুসলার'।
ম্যানেজার চিন্তিত মুখে ফরম ফিলাপ করছে। জরুরি কোনো ফরম (যেমন আমেরিকান ভিসা বা ডিভি ফরম) ফিলাপ করার সময় চেহারা যেমন হয়, তার চেহারা সে রকম।
মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্ট আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, স্যার, আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। আমি আপনার নাটক দেখেছি।
আমি মনে মনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। পত্রপত্রিকা, টেলিভিশনের কারণে নিজেকে আড়াল করা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটা সময় ছিল যখন কেউ আমাকে চিনে ফেললে ভালো লাগত। আগ্রহ, আনন্দ (কিছু অহঙ্কার) নিয়ে আলাপ করতাম। এখন অসহ্য লাগে।
মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্ট বললেন, ডাক্তার সাহেব ধ্যানে বসেছেন। একটু দেরি হবে। এই ফাঁকে এক কাপ চা খান স্যার।
আমি অবাক হয়ে বললাম, উনি ধ্যান করেন নাকি?
জি। অনেক সংবাদ তিনি ধ্যানের মাধ্যমে পান।
কী ধরনের সংবাদ?
এই যেমন আপনারা এসেছেন, আপনাদের কার কী রোগ উনি ধ্যানের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন।
আমি বললাম, ভালো তো। বর্তমানের চিকিৎসকরা নানা যন্ত্রপাতি দিয়ে রোগ নির্ণয় করেন। ধ্যান লাইনে চিকিৎসার কথা তেমন শোনা যায় না।
আমাকে রঙ চা দেওয়া হয়েছে। লেবুর গন্ধ, চা পাতার গন্ধ মিলে চা-টা খেতে ভালো হয়েছে। শুধু ভালো বললে কম বলা হয়। যথেষ্টই ভালো।
ম্যানেজারের ফরম ফিলাপ শেষ হয়েছে। মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্ট বলল, রেজিস্ট্রেশন ফি দিন। নাম রেজিস্ট্রি হবে। সব তথ্য কম্পিউটারে চলে যাবে। বিশ বছর পরে এলেও সব তথ্য পাবেন।
এই প্রথম লক্ষ করলাম, মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্টের সাইড টেবিলে একটা ল্যাপটপ আছে। যে চিকিৎসক ধ্যানের মাধ্যমে চিকিৎসা করেন, তিনি আবার ল্যাপটপও ব্যবহার করেন দেখে আনন্দ পেলাম।
ম্যানেজার বলল, রেজিস্ট্রেশন ফি কত?
মহিলা বললেন, নরম্যাল এক শ' টাকা, সেমি আর্জেন্ট দুই শ' টাকা, আর্জেন্ট পাঁচ শ' টাকা।
ম্যানেজার আমার দিকে তাকাল। আমি বললাম, পাঁচ শ' টাকা দিয়ে দাও। আর্জেন্টই ভালো।
মহিলা ল্যাপটপে টিপাটিপি করতে করতে আমাকে বললেন, স্যার আপনার নাটকে অনেক ভুলভ্রান্তি থাকে। এটা ঠিক না।
আমি বললাম, অবশ্যই ঠিক না।
আপনার একটা নাটক চ্যানেল আই-এ প্রায়ই দেখায়। নাটকটা ভুলে ভর্তি। এটার প্রচার বন্ধ হওয়া দরকার।
আমি বললাম, কোন নাটক?
নাটকের নাম 'পাপ'। সেখানে একজন পাকিস্তানি সোলজার পাঞ্জাবি ভাষায় কথা বলে। ভুল পাঞ্জাবি।
আমি বললাম, আপনি পাঞ্জাবি জানেন?
মহিলা বলল, আমি জানি না তবে যিনি আমাকে ভুলের কথা বলেছেন তিনি পাঞ্জাবি জানেন। অনেকদিন পাঞ্জাবে ছিলেন।
নাটক নিয়ে হয়তো আরও আলোচনা হতো তার আগেই চিকিৎসকের ঘরে আমাদের ডাক পড়ল। মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্ট বললেন, স্যার, আপনারা জুতা এই ঘরে রেখে খালি পায়ে ঢুকবেন। উনার ঘরে জুতা পায়ে ঢোকা নিষেধ।
আমরা খালি পায়ে ঘরে ঢুকলাম। এখন চিকিৎসকের বর্ণনা দেই। চেহারা অনেকখানি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহম লিংকনের মতো। দাড়ি কেটে ফেলার পর। গাল ভাঙা। নাক থেকে ঠোঁটের দূরত্ব অনেকখানি। মাথার সব চুল এবং ভুরু পাকা। বয়স নিশ্চয়ই ষাট থেকে সত্তরের মধ্যে। তাঁর গা থেকে পাকা তেঁতুলের টক গন্ধ আসছে। টক গন্ধি মানুষ আমি জীবনে প্রথম দেখলাম।
ঘরে চেয়ার-টেবিল নেই, কার্পেট পাতা। কার্পেটের ওপর শাদা রঙের একটা উলের আসনে চিকিৎসক পদ্মাসনের ভঙিতে বসা। তার পরনে শাদা লুঙ্গি, শাদা ফতুয়া। কাঁধে সিল্কের একটা উড়নির মতো ঝুলছে। উড়নির রঙও শাদা। চিকিৎসক এই উড়নি দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর নাক-মুখ চেপে ধরেছেন। কেন এটা করছেন তা বুঝা যাচ্ছে না। চিকিৎসক চাপা গলায় বললেন, ধ্যানের মাধ্যমে পেয়েছি আপনারা ক্যান্সার ব্যাধির তদবিরে এসেছেন। ঠিক আছে?
ম্যানেজার আমার দিকে তাকাল। আমরা কোনো ব্যাধির তদবিরেই আসি নি। গল্পের ব্যাকগ্রাউন্ডের সন্ধানে এসেছি। যাই হোক, আমি বললাম, জি জনাব। আপনার অনুমান সঠিক।
চিকিৎসক নাক-মুখ থেকে সাদা উড়নি নামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি আপনাদের চিনেছি। আপনার নাম মোঃ হুমায়ূন কবীর। ঠিক হয়েছে?
পুরোপুরি ঠিক বলা চলে না। আমার নামের আগে মোহাম্মদ নেই, শেষেও কবীর নেই। তার পরেও ঝামেলা এড়ানোর জন্য বললাম, জি। এইবারও আপনার অনুমান সঠিক।
চিকিৎসক বললেন, আপনি নাটক লেখেন, নাটকে অনেক ভুল-ভ্রান্তি থাকে। আমি অবশ্যি দেখি না। আমার মেয়ে আমাকে বলেছে। মেয়ের সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছে। সে-ই আমার অ্যাসিস্টেন্ট।
আমি বললাম, ভালো তো।
চিকিৎসক বললেন, চিকিৎসা শুরু করার আগে ক্যান্সার ব্যাধি বিষয়ে জানা দরকার। আপনারা কি জানেন?
আমি বললাম, কিছুটা জানি। সাধারণ জীবকোষ যখন মিউটেট করে তখনই ব্যাধির শুরু।
চিকিৎসক বললেন, আপনি যা জানেন তা হলো জাহেরি জানা। এই জ্ঞানে কিছু সত্য আছে তবে মূল সত্য নাই। মূল সত্য আছে বাতেনি জ্ঞানে। বাতেনি হলো অপ্রকাশ্য। বাতেনি জ্ঞান, অপ্রকাশ্য জ্ঞান। বুঝলেন?
আমি এবং ম্যানেজার দু'জনই হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লাম।
চিকিৎসক উড়নি দিয়ে নাক ঘষতে ঘষতে বললেন, বাতেনি জ্ঞান বলে ক্যান্সার ব্যাধির সৃষ্টিকর্তা হলো খারাপ ধরনের কিছু জি্বন। এরা জি্বন সমাজেও অভিশপ্ত বলে মানুষের শরীরের ভেতর লুকিয়ে থাকে। কেউ লিভারে বসে থাকে, কেউ ফুসফুসে বসে থাকে। আমাদের সবার শরীরে এ রকম একাধিক জি্বন বাস করে।
ম্যানেজার আঁতকে উঠে বলল, বলেন কী হুজুর!
চিকিৎসক বিরক্ত গলায় বললেন, আমাকে হুজুর বলবেন না। আমি হুজুর না। আমার গালভর্তি দাড়ি নাই, মাথায় পাগড়িও নাই। আমি চিকিৎসক।
ম্যানেজার বলল, সরি।
চিকিৎসক বললেন, সরি হবার কিছু নাই। অনেকেই এই ভুল করে। যাই হোক যে কথা বলছিলাম, দুষ্ট এই জি্বন শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বসে থাকলেও আমাদের কোনো ক্ষতি হয় না। যখন এই সব পুরুষ জি্বনের সঙ্গে মেয়ে জি্বন শরীরে ঢুকে তখনই সমস্যা।
আমি বললাম, কী রকম সমস্যা?
চিকিৎসক বললেন, মনে করেন একটা দুষ্ট জি্বন আপনার ফুসফুসে বাস করে। একা একা থাকে। হঠাৎ সেখানে একটা মেয়ে জি্বন এসে গেল। তখন তারা ঘর বানিয়ে সংসার পাতে। জাহেরি জ্ঞানে এই ঘরকেই বলে টিউমার। পুরুষ এবং নারী জি্বন একসময় সন্তান সৃষ্টি করতে থাকে। সন্তানরা হয় অনেক। ঘরে তাদের জায়গা হয় না। তারা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আলাদা বাসা বানায়। জাহেরি জ্ঞানে একে বলে মেটাসটেসিস। বুঝলেন?
আমি বললাম, বুঝার চেষ্টা করছি।
চিকিৎসক বললেন, আপনার শরীরে দুষ্ট জি্বন তার সঙ্গিনী পেয়েছে, তারা ঘর বানানো শুরু করেছে তবে এখনো সন্তান উৎপাদন শুরু করে নাই।
আমি একবার ভাবলাম বলি, রোগী আমি না। আমার ম্যানেজার। তার নামই রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। তারপর ভাবলাম কথা বাড়িয়ে লাভ কী। এই ভদ্রলোকের সঙ্গে আজই প্রথম দেখা, আজই শেষ। আমার প্রয়োজন গল্প। গল্প পেয়ে গেছি।
চিকিৎসক বললেন, আমার প্রধান কাজ হবে জি্বন-দম্পতির সন্তান উৎপাদন বন্ধ করা।
আমি বললাম, জি্বনের ফ্যামিলি প্ল্যানিং করাবেন? চিকিৎসক আহত গলায় বললেন, আপনি লেখক মানুষ বলেই বাতেনি কিছু কথা আপনাকে বললাম, এই নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করবেন না। আপনি আগামী সোমবার থেকে রোজ সন্ধ্যায় আসবেন চিকিৎসা শুরু হবে। মেয়ে জি্বনটাকে তাড়ালেই হবে।
আমি বললাম, আপনার অশেষ মেহেরবানি।
গল্প কি এখানে শেষ হয়?
শেষ হয় না। কিছু বাকি থাকে। সেই বাকিটা কী তা ধরতে পারছি, কিন্তু লেখায় আনতে পারছি না বলে ঈদসংখ্যায় কোনো পত্রিকাতেই এই গল্প ছাপা হল না।
ঈদের লেখালেখির ক্লান্তি দূর করতে বেড়াতে গেলাম সিঙ্গাপুর। মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে হার্টের রুটিন চেকআপ করতে গিয়ে ধরা পড়ল ক্যান্সার। সেই ক্যান্সারও নাকি থেমে নেই। ছড়িয়ে পড়েছে শরীরে। আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায় মেটাসথিসিস।
বাতেনি চিকিৎসকের ভাষায় জি্বনের সন্তান-সন্ততিরা ছড়িয়ে পড়েছে।
আমি আধুনিক মানুষ। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য পৃথিবীর সেরা আমেরিকার ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্র মোমেরিয়েলস্লোন ক্যাটারিং-এ নাম লেখালাম।
আমার আমেরিকান চিকিৎসক পৃথিবীর সেরা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের একজন।
তিনি জাহেরি অর্থাৎ জাগতিক চিকিৎসক।
আরেকজন আছেন বাতেনি চিকিৎসক। তাঁর নাম আব্দুস সোবাহান। ইনি চিকিৎসা করেন ধ্যানের মাধ্যমে।
আমি যতবার আমার অনকলজিস্টের সঙ্গে কথা বলি, ততবারই পরোক্ষভাবে বাতেনি চিকিৎসকও উপস্থিত থাকেন।
একবার আমি ড. স্টিফান ভিচকে (ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, আমার চিকিৎসক।) বললাম, ক্যান্সার বিষয়ে আমরা কি সবকিছু জানি?
ডাক্তার ভিচ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, না।
আমি বললাম, আমাদের শরীরের সাধারণ কোষের মতো ক্যান্সার কোষও যে জীবন্ত তা জানি। আচ্ছা এমন কী হতে পারে যে এদের চিন্তা করার ক্ষমতা আছে? এরা আলাদা একা প্রাণ!
ডাক্তার ভিচ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, এদের ভাব-ভঙ্গি সে রকমই।
কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো ডা. ভিচের চেহারাটা বাতেনি চিকিৎসক আব্দুস সোবাহানের মতো হয়ে গেল।
তোমার চারপাশে যা ঘটছে সবসময় তার ব্যাখ্যা চাইবে না। সব ব্যাখ্যা যার কাছে আছে তিনি কখনো তা প্রকাশ করেন না। তিনি নিজেকে লুকিয়ে রাখেন বলে সব ব্যাখ্যা লুকানো।

প্রাচীন চৈনিক দার্শনিক_ 'লি সুন'।

No comments

Powered by Blogger.