ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়কে বাস ধর্মঘট শুরু

ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়কে গতকাল বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট শুরু করেছেন বাসমালিক ও শ্রমিকেরা। ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে কয়েক হাজার যাত্রী। সড়কে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও শ্রমিক নির্যাতন বন্ধের দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, গাজীপুর জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়ন ও মহাখালী বাস মালিক সমিতিসহ ছয়টি সংগঠন যৌথভাবে এই ধর্মঘট করছে।
ধর্মঘটের ফলে ঢাকা থেকে গাজীপুর হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা সদর পর্যন্ত সড়কে চলাচলকারী জলসিঁড়ি, অনন্যা, অনন্যা ক্ল্যাসিক, সম্রাট, প্রভাতী-বনশ্রী, এগারসিন্দুর, রাজদূত, মাধুলী, ঢাকা পরিবহনসহ মোট ১৪টি পরিবহন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো বাস গতকাল চলাচল করেনি।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই এই সড়কে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী নানা অজুহাতে বাসের চালক ও সহকারীদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা শ্রমিকদের আটকে রেখে মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করে। প্রায়ই বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। অথচ প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশ উল্টো পরিবহন-শ্রমিকদের নানাভাবে হয়রানি করছে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
এই প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার মহাখালী বাস টার্মিনালে মালিক ও শ্রমিকদের একটি যৌথ সভা হয়। মহাখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি হাজি আবুল কালাম ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। সমস্যা সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সভা থেকে গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে পাঁচ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুই জেলা প্রশাসককে তিন দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ওই সময়সীমা গত মঙ্গলবার শেষ হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ অবস্থায় গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
মহাখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি হাজি আবুল কালাম অভিযোগ করেন, সমস্যা সমাধানে গাজীপুর জেলা প্রশাসন মঙ্গলবার বৈঠক করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তা করা হয়নি।
আন্তজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি ও বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, যাত্রীদের সাময়িক কষ্ট হবে জেনেও যাত্রী ও পরিবহন-শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এ ধর্মঘট কর্মসূচি চলবে।
যাত্রীদের দুর্ভোগ: বাস চলাচল বন্ধ থাকায় গতকাল কয়েক হাজার যাত্রীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ওই সড়কের যাত্রীরা এখন গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে বা ঢাকার সায়েদাবাদ হয়ে কিশোরগঞ্জে যাতায়াত করছে। বাধ্য হয়ে অনেকে বেশি ভাড়া দিয়ে ছোট ছোট যানবাহনে চলাচল করছে। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে।
ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে গতকাল সকালে কিশোরগঞ্জের গাইটালে আন্তজেলা বাস টার্মিনালে আসেন যশোদল গ্রামের ইকবাল আহসান। কিন্তু গন্তব্যে যেতে না পেরে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন তিনি।
কিশোরগঞ্জ পরিবহন মালিক সমিতির তত্ত্বাবধায়ক কমিটির আহ্বায়ক মানিক রঞ্জন দে জানান, ধর্মঘটের কারণে কিশোরগঞ্জ সদর ও আশপাশের উপজেলার চার শতাধিক যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে কয়েক হাজার যাত্রী চরম অসুবিধায় পড়েছে।
কাপাসিয়া পরিবহন শ্রমিকনেতা আবদুল কাদির ফকির জানান, ধর্মঘট থাকায় অধিক ভাড়ায় কাপাসিয়ার যাত্রীরা শ্রীপুর ও কালীগঞ্জ হয়ে গন্তব্যে চলাচল করছে। তিনি অভিযোগ করেন, ওই সড়কে পরিবহনে চাঁদাবাজ দমনে পুলিশে অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তবে কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর চাঁদাবাজির ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ওই সড়কে পর্যাপ্ত টহল পুলিশ রয়েছে।
গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের জানান, দাবিদাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সার্বিক বিষয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, সমস্যা সমাধানে বাসমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কাল (আজ) বৃহস্পতিবার বসা হবে।

No comments

Powered by Blogger.