চরাচর-অর্ধবঙ্গেশ্বরীর রাজপ্রাসাদ by আলম শাইন

নাটোরের নাম মুখে এলে বনলতা সেনের নামটি যে কারোর মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর 'বনলতা সেন' কাব্যে একটি কাল্পনিক নাম ব্যবহার করে নাটোরকে বিখ্যাত করে গেছেন। সেই থেকে পাঠকের ধারণা, 'বনলতা' সেন নামের কেউ নিশ্চয়ই নাটোরের অধিবাসী ছিলেন। না হলে কবি কোন দুঃখে একজন নারীর নাম কাব্যে স্থান দিতে যাবেন। আসলে বিষয়টি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। নামটি শুধু কবির কাব্যরসের সঙ্গী হয়েছে মাত্র।


তো নাটোরে বনলতা সেনের অস্তিত্ব না থাকলেও ওখানে অস্তিত্ব ছিল একজন বিখ্যাত নারীর। তিনি শুধু নারীই নন, ছিলেন নাটোরের রানিও। নাম তাঁর 'রানি ভবানী'। তাঁর রাজত্বকালে নাটোরের রানি অর্ধেক বঙ্গ শাসন করতেন বলে তাঁকে বলা হতো 'অর্ধবঙ্গেশ্বরী'। ইতিহাস জানায়, তিনি বেশ দক্ষ এবং সাহসী শাসক ছিলেন। পলাশী যুদ্ধের সময় রানি ভবানী নবাব সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে যোগ দিয়ে সৈন্য পাঠিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর সৈন্য-সামন্ত পলাশীর আম্রকাননে পেঁৗছার আগেই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এ হচ্ছে রানি ভবানীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়। অথচ এই বিখ্যাত রাজপরিবারটির এখন আর কোনো হদিস নেই। নেই সেই বংশের কোনো দাবিদার পর্যন্ত। তবে রাজপরিবােেরর কেউ না থাকলেও স্মৃতিবিজড়িত হয়ে আছে রানি ভবানীর রাজপ্রাসাদটি। মরি মরি করে এখনো টিকে আছে প্রায় ১২০ একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত সুরম্য রাজপ্রাসাদটি। এটি নাটোর জেলা শহরের বঙ্গজ্জল এলাকায় নির্মিত। ব্রিটিশ স্থাপত্যের আদলে গড়া রাজপ্রাসাদটি দুই ভাগে বিভক্ত। 'বড় তরফ' ও 'ছোট তরফ' নাম সেগুলোর। দুই তরফের দুটি কারুকার্যময় প্রাসাদ ছাড়াও হানি কুইন ভবন, বৈঠকখানা, মালখানাসহ রয়েছে বিভিন্ন আকারের সাতটি ভবন। যা চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি। এ কারুকার্যময় প্রাসাদের ভবনগুলোর বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। যা দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে প্রাসাদটির। উল্লেখ্য, প্রাসাদের বেষ্টনীর ভেতরে রয়েছে তিনটি মন্দির। তন্মধ্যে আকর্ষণীয় হচ্ছে শিব মন্দিরের 'পঞ্চানন নাগমূর্তি'। জানা যায়, পুঠিয়ার রাজা ১৭০৬-১৭১০ সালের দিকে রাজা রামজীবনকে প্রায় ১৮০ বিঘার একটি বিল দান করেন। সেখানে রাজপ্রাসাদটি গড়ে তোলেন রাজা রামজীবন। তাঁর একমাত্র ছেলে কালিকা প্রসাদ মারা গেলে দত্তক ছেলে রামকান্তের সঙ্গে ১৭৩০ সালে রানি ভবানীর বিয়ে হয়। ১৭৪৮ সালে রামকান্তের মৃত্যুর পর রানি নিজেই ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রায় অর্ধশতক তিনি রাজত্ব কায়েম করেন। বর্তমানে প্রাসাদটির তিনটি ভবন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় রয়েছে। তবে ১৯৮৬ সাল থেকে এটি জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শহরবাসীর জন্য বিনোদনকেন্দ্র (যুব পার্ক) বানিয়েছে। এর ফলে পার্কটি নাটোরবাসীর বিনোদনের খোরাকে পরিণত হয়েছে।
আলম শাইন

No comments

Powered by Blogger.