সব অভিযোগই আমলে নিন-নরসিংদীর মেয়র হত্যা

শ্রেষ্ঠ মেয়র হিসেবে দুবার স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত নরসিংদীর পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন হত্যার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। এমন একজন জনপ্রিয় নেতার অকালপ্রয়াণে তাঁর শোকার্ত পরিবারের প্রতি জানাই সমবেদনা। এই বর্বরোচিত হত্যা প্রমাণ করে যে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা কত ভঙ্গুর। হত্যার খবরে মেয়রের সমর্থক নেতা-কর্মীদের ক্ষুব্ধ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।


কিন্তু প্রতিবাদের নামে ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা, মহাসড়কে অবরোধ, ট্রেন চলাচল বন্ধ এবং শহরে ভাঙচুরের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ঘটনার পর মেয়র লোকমানকে চিকিৎসার জন্য যাঁরা ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের একজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলের কমিটি গঠন নিয়ে কোন্দল ছিল। তার জের ধরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।’ তবে তাৎক্ষণিকভাবে এ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। সরকার বা আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নরসিংদীর ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কেন তাঁকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হলো, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও কোনো ব্যাখ্যা নেই। নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবিরের সমর্থকদের সঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর সমর্থকদের রাজনৈতিক বিরোধ ছিল, এ কথা সবার জানা। আবার কমিটি গঠনের কোন্দলে মন্ত্রীর সমর্থকদের সঙ্গে মেয়র-সমর্থকেরাও বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। দুই সপ্তাহ আগে উভয় গ্রুপের মধ্যে মারামারি ও গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটে।
সন্দেহের বশে কাউকে গ্রেপ্তার করার প্রয়োজন পড়লেও সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকতে হবে। অন্যথায় এ বিষয়ে রাজনৈতিক হয়রানির যে অভিযোগ বিএনপির তরফ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, তা জনসাধারণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে। অদৃশ্য হুকুম থাকুক বা না-ই থাকুক, গ্রেপ্তার-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব।
আমরা মনে করি, নিহত পৌর মেয়র সাম্প্রতিক কালে যাঁদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন, তাঁদের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। তিনি নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদ এবং ভবিষ্যতে সংসদ সদস্য পদে দলীয় টিকিট পেতে আগ্রহী ছিলেন বলে তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা, এমন কথাও শোনা যায়।
আমাদের দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দৃষ্টান্ত অত্যন্ত বিরল। ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলজনিত হলে তা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
আমরা আশা করব, নরসিংদীর পৌর মেয়রের হত্যাকারীরা অবিলম্বে গ্রেপ্তার হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। যে কারণেই এ ঘটনা ঘটুক না কেন, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সব ধরনের অভিযোগ আমলে নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.