আলোচনার ভিত্তিতে সুরাহা করুন-ঘাটশ্রমিকদের কর্মবিরতি

র্ণফুলী নদীতে আমদানি পণ্যসমেত ৯০টি ছোট আকারের জাহাজ আটকা পড়ে আছে। কারণ, শ্রমিকেরা ১৬টি ঘাটে কর্মবিরতি পালন করছেন। তাঁদের দাবি, শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের নিয়োগপত্র দিতে হবে, চিকিৎসা ও আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, প্রতি দুই বছর পর আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে তাঁদের মজুরি পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।


এ রকম নয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তাঁরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন। কারণ, তাঁদের এসব দাবির প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যৌক্তিকভাবে সাড়া দিচ্ছে না। পণ্য খালাসের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ঘাটশ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ঘাটশ্রমিকেরা তাতে আশ্বস্ত হননি।
ফলে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, দেশের পণ্যবাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব অনিবার্য হয়ে উঠবে। কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটে প্রতিদিন গড়ে সাত-আট হাজার টন পণ্য খালাস হয়। প্রতিদিন এই পরিমাণ পণ্য আটকা পড়ে থাকলে পণ্যবাজারে সংকট সৃষ্টি হবে। দ্বিতীয়ত, ছোট আকারের এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস আরও কিছুদিন বন্ধ থাকলে বহির্নোঙরে বড় জাহাজগুলোর পণ্য খালাসও একসময় বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমদানি করা পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে এই অচলাবস্থা সৃষ্টির ঝুঁকি আমদানিপণ্যের বাজারকেও অস্থিতিশীল করে তুলবে এবং ভোক্তাসাধারণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়বে।
ঘাটশ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে কিছু দাবি নিশ্চয়ই যৌক্তিক। যেমন—তাঁরা বলছেন, বর্তমানে যে মজুরি তাঁরা পাচ্ছেন, তা দিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ খুব কঠিন হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম ঘাট ও গুদামশ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের ভাষা, ‘এই মজুরি দিয়ে শ্রমিকেরা চলতে পারছেন না।’ পণ্য খালাস, বোঝাই, সেলাই ও ট্রাকে তুলে দেওয়া পর্যন্ত চারটি ধাপের কাজের জন্য তাঁরা মজুরি পাচ্ছেন বস্তাপ্রতি সাত টাকা। তাঁরা দাবি করছেন, এই মজুরি বাড়িয়ে বস্তাপ্রতি ১৪ টাকা করা হোক। বিষয়টি নিশ্চয়ই বিবেচনার যোগ্য। তা ছাড়া তাঁদের চিকিৎসা ও নিয়োগপত্রসংক্রান্ত দাবিও বিবেচনা করে দেখা উচিত।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পণ্য খালাসের এই অচলাবস্থা যেন দীর্ঘায়িত না হয়, তা নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের সঙ্গে আমদানিকারক ও পণ্য খালাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আলাপ-আলোচনা করে শ্রমিকদের কর্মবিরতির অবসান ঘটানো।

No comments

Powered by Blogger.