পবিত্র কোরআনের আলো-যুদ্ধনিষিদ্ধ চার মাসসংক্রান্ত চিরায়ত নীতি ভঙ্গ না করার নির্দেশ

৭. ইন্নামান নাছীউ যিইয়া-দাতুন ফিল কুফ্রি ইউদ্বাল্লু বিহিল্লাযীনা কাফারূ ইউহিল্লূনাহূ আ'-মান ওয়া ইউহার্রিমূনাহূ আ'-মান লিইউওয়া-তি্বঊ ই'দ্দাতা মা হার্রামাল্লা-হু ফাইউহিল্লু মা হার্রামাল্লা-হ্; যুয়্যিনা লাহুম ছূউ আ'মালিহিম; ওয়াল্লা-হু লা ইয়াহ্দিল ক্বাওমাল কা-ফিরীন। ৩৮. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূ মা লাকুম্ ইযা ক্বীলা লাকুম ইন্ফিরূ ফী ছাবীলিল্লা-হি আচ্ছা-ক্বাল্তুম্ ইলাল আরদ্বি; আরাদ্বীতুম্ বিলহায়া-তিদ্ দুনিয়া মিনাল আ-খিরাতি্; ফামা মাতা-উ'ল হায়া-তিদ্ দুনিয়া- ফিল আ-খিরাতি ইল্লা- ক্বালীল।


৩৯. ইল্লা তান্ফিরূ ইউআ'য্যিব্কুম আ'যা-বান আলীমা, ওয়া ইয়াছ্তাব্দিল ক্বাওমান গাইরাকুম ওয়া লা তাদুর্রূহু শাইআ; ওয়াল্লা-হু আ'লা কুলি্ল শাইয়িন ক্বাদীর।
৪০. ইল্লা তান্সুরূহু ফাক্বাদ নাসারাহুল্লা-হু ইয্ আখরাজাহুল্লাযীনা কাফারূ ছা-নিয়াছ্নাইনি ইয্ হুমা- ফিল গা-রি ইয্ ইয়াক্বূলু লিসা-হিবিহি লা-তাহ্যান্ ইন্নাল্লা-হা মাআ'না-; ফাআনযালাল্লা-হু ছাকীনাতাহূ আ'লাইহি ওয়াআইয়্যাদাহূ বিজুনূদিন লাম তারাওহা- ওয়া জাআ'লা কালিমাতাল্লাযীনা কাফারুচ্ছুফ্লা-; ওয়া কালিমাতুল্লা-হি হিয়াল্ উ'লইয়া- ওয়াল্লা-হু আ'যীযুন হাকীম। [সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ৩৭-৪০]

অনুবাদ : ৩৭. এই 'নাসী' (হারাম মাসকে আগ-পিছ করে বদলে নেওয়া) তো কুফরকে আরো জড়িয়ে দেওয়া, এর দ্বারা কাফিরদের আরো বিপথগামীই করা হয়। এ ব্যবস্থায় তারা এক বছর কোনো হারাম মাসকে হালাল করে নেয় এবং কোনো বছর হালাল মাসকে হারাম করে নেয় (তাদের সুবিধা অনুযায়ী), যাতে আল্লাহ যে মাসকে নিষিদ্ধ করেছেন, তার গণনা পূরণ করতে পারে এবং যা হারাম করেছেন তাকে হালাল করতে পারে। তাদের অবৈধ কাজগুলোর ব্যাপারে তাদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ এরূপ অবাধ্য জাতিকে সুপথ দেখান না। ৩৮. হে মুমিনরা, তোমাদের কী হলো, যখন তোমাদের আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হলো, তখন তোমরা মাটির সঙ্গে আঁকড়ে থাকো? তোমরা কি পরকালের চেয়ে পার্থিব জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চাও? (মনে রেখো) পার্থিব জীবনের সহায়-সম্পদ পরকালের তুলনায় অনেক তুচ্ছ।
৩৯. যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের কঠিন শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের স্থলে অন্য কোনো জাতিকে নিয়ে আসবেন। আর তোমরা কিন্তু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সব কিছুই পারেন।
৪০. তোমরা যদি তাঁকে [অর্থাৎ নবী (সা.)]-কে সাহায্য না করো (তবে আল্লাহ তো তাঁর সাহায্যে রয়েছেন) আল্লাহ তো সেই সময়ও তাঁকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিররা তাঁকে (মক্কা থেকে) বের করে দিয়েছিল এবং তখন তিনি ছিলেন দুজনের দ্বিতীয়জন। যখন তাঁরা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল তখন তিনি তাঁর সঙ্গীকে [আবু বকর (রা.)]-কে বলে ছিলেন, চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর ওপর প্রশান্তি বর্ষণ করলেন এবং এমন বাহিনী দিয়ে তাঁকে সাহায্য করলেন, যা তোমরা দেখতে পাওনি। তিনি কাফিরদের কণ্ঠ নিচু করে দিলেন এবং আল্লাহর বাণী ওপরে তুলে ধরলেন। আল্লাহ পরম পরাক্রমশালী ও কুশলী।

ব্যাখ্যা : ৩৭ নম্বর আয়াতে আগের ৩৬ নম্বর আয়াতের প্রসঙ্গ নিয়েই কথা বলা হয়েছে। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সময় থেকেই চারটি চান্দ্রমাসকে সম্মানিত বা নিষিদ্ধ মাস মনে করা হতো। এসব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ বা হানাহানি নিষিদ্ধ ছিল। এটা আরবের সর্বজনীন রেওয়াজ ও নীতিতে পরিণত হয়েছিল। মাসগুলো ছিল জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। আরবের মুশরিকরা নবী ইব্রাহিম (আ.)-এর একত্ববাদী ধর্ম থেকে নানাভাবে বিচ্যুত হয়ে গেলেও সম্মানিত মাসের ওই ঐতিহ্য তারা কোনো প্রকারে ধরে রেখেছিল। কিন্তু এটাকে তারা বিকৃত করে ফেলেছিল নানাভাবে। নিষিদ্ধ মাসগুলোকে তারা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী বদলে ফেলত বা আগ-পিছ করে ফেলত। আগ-পিছ করে ফেলার এই প্রথাকে 'নাসী' বলা হতো। মাসগুলোকে আগ-পিছ করে তারা চার মাসের গণনা পূরণ করে নিত ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত নিষিদ্ধ মাসগুলোকে নিষিদ্ধ হিসেবে পালন না করার ফলে শাস্তি বজায় রাখার চিরায়ত নীতিটা দুর্বল হয়ে পড়ল। ৩৭ নম্বর আয়াতে এই উদ্ভট 'নাসী' পদ্ধতির সমালোচনা করে কাফিরদের বিভ্রান্তির বিষয়টি স্পস্ট করা হয়েছে এবং মুসলমানদের এ বিভ্রান্তিমূলক ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ৩৮ নম্বর আয়াত থেকে এ সুরার পরবর্তী আয়াতগুলো মূলত তাবুক যুদ্ধের পটভূমিতে নাজিল হয়েছে। তাবুক যুদ্ধ হচ্ছে রোমান সম্রাটের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ। আগামী সংখ্যায় আমরা তাবুক যুদ্ধের ব্যাপারে কিছুটা বিস্তারিত বলার চেষ্টা করব।
৪০ নম্বর আয়াতে তাবুক যুদ্ধে মুসলমানদের যোগদানে উৎসাহ প্রদান প্রসঙ্গেই রাসুলের হিজরতে ঘটনাটি উদাহরণ হিসেবে সামনে আনা হয়েছে। আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে তিনি যখন হিজরত করছিলেন তখন আল্লাহ তায়ালা কিভাবে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন, তা এখানে বর্ণনা করা হয়েছে এবং যেকোনো সময় আল্লাহ যে তাঁকে সাহায্য করবেন সে আশ্বাস শোনানো হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী


No comments

Powered by Blogger.