খুলনার ডুমুরিয়া-পাউবোর ভুল সিদ্ধান্ত নদী গিলছে সড়ক!

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভুল সিদ্ধান্ত ও ঠিকাদারের অনিয়মের কারণে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়ায় ভদ্রা নদীর ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ওই এলাকার যে সড়ক রক্ষার জন্য ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, ওই সড়কের বেশ কিছু অংশই নদীতে চলে গেছে।


এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা জানান, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খর্নিয়া সেতু থেকে উত্তর দিকে খর্নিয়া-শোলগাতিয়া সড়কের পাশেই ভদ্রা নদী। ওই সড়কের পাশে নদীর তীরের ১০০ গজে বেশ কয়েক বছর ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে কিছুদিন আগে ওই ১০০ গজে পাউবো ৩০ হাজার ইটের বস্তা ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। পাউবোর বিশেষ সিদ্ধান্তে এ কাজের দায়িত্ব দেয় খর্নিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক পরিতোষ হালদারকে। এ জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ওই স্থানে ৩০ হাজার বস্তা ইট ফেলার কথা ছিল। কিন্তু পরিতোষ হালদার সেখানে ওই পরিমাণ বস্তায় ইট ফেলেননি। প্রয়োজনীয়সংখ্যক বস্তা না ফেলায় এবং পাউবোর ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সেখানে এখন ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর বিভাগ-১) আবদুর রব হাওলাদার পাউবোর ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ভাঙন বাড়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ওখানে কিছু বস্তা ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এখন স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নকশা তৈরি হয়ে গেছে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।
গত রোববার সরেজমিনে নদীর তীরে কিছুসংখ্যক ইটের বস্তা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বস্তা ফেলায় ভাঙন থামেনি। ইতিমধ্যে শোলগাতিয়া সড়কের একটি অংশ ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। ওই অংশের সড়কের ৭০ শতাংশই এখন নদীতে চলে গেছে।
ভাঙন এলাকার বাসিন্দা রশিদা বিবি (৫০) বলেন, ‘মাস খানেক আগে গাছিকটে (বেশ কয়েকটা) বস্তা ফেলতি দেহিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। এহন তো যেকোনো সময় ভাঙে আমাগে গিরাম তলায়ে যাবেনে।’ এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোল্লা আবদুল মতিন বলেন, পরিতোষ নদীতে হাতে গোনা কিছু ইটের বস্তা ফেলেছে। খর্নিয়ার পল্লিচিকিৎসক আবদুল আজিজ বলেন, ভাঙন থামাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তে ভুল ছিল। কারণ শুধু ইটের বস্তা ফেললেই ভাঙন থামার কথা না।
কাজ তদারকের দায়িত্ব পাওয়া শোলগাতিয়া পাউবোর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ শাখার কর্মকর্তা হাসনাতুজ জামান বলেন, জরুরি ভাঙন রোধে কোনো প্রকার টেন্ডার ছাড়াই কিছু কাজ করার যে নিয়ম আছে, সে অনুসারে খর্নিয়ার ওই কাজটি করানো হয়েছে। নামমাত্র কাজ হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, সেখানে পাঁচ লাখ টাকায় ৩০ হাজার বস্তা ইট ফেলা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পরিতোষ হালদার বলেন, ‘ওখানে ৩০ হাজার ইটের বস্তা ফেলার কথা। আমি ট্রলারে (নৌকায়) করে তা নদীর ভেতরে ফেলেছি।’
ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী আবদুল হাদী বলেন, ‘ওই কাজ নিয়ে কিছুদিন আগে খর্নিয়া ইউনিয়ন পরিষদে এলাকার সাংসদ, পাউবো কর্মকর্তা ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বসেছিলাম। সেখানে যে পর্যালোচনা হয়েছিল তাতে দেখা গেছে, ভাঙন রোধে পাউবো তেমন কোনো কাজই করেনি। অল্প কিছু বস্তা ফেলার বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’ পাউবোর ডুমুরিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করানো হয়েছে। আমাদের বিভাগীয় উচ্চপর্যায় থেকে ওই কাজের একটা সমীক্ষা হবে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিল দেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.