জনগণের চাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে-নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের শিক্ষা

নারায়ণগঞ্জের সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যে দেশবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। জনগণের শক্তিই যে সবার ওপরে—নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন এই গণতান্ত্রিক চেতনা আরও জোরালো করেছে। ‘অরাজনৈতিক’ স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হলেও এই নির্বাচনের রাজনৈতিক গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ও ফলাফলের শিক্ষণীয় অনেক দিক রয়েছে, যা আমাদের জাতীয় রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনসহ সংসদের কয়েকটি আসনে উপনির্বাচন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সিটি ও পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ এবং সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়া এই সবগুলো নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নির্বাচন কমিশন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়িত্বশীলতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছে বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। তবে শেষ পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সরকার যে আচরণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য। নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে চাওয়ার পরও সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা না করে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের এই আচরণ দেশবাসী ভালোভাবে নেয়নি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের এই আচরণকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিএনপির নির্বাচন বর্জন কিছুটা হলেও এই নির্বাচনের সাফল্যকে ম্লান করেছে। আমরা আশা করব, সরকার এই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেবে।
গণতন্ত্রে জনগণই যে মূল কথা—নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়েছে। অরাজনৈতিক নির্বাচন হলেও প্রার্থীদের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ছিল। জনগণ কোন ধরনের প্রার্থী পছন্দ করে, সে বিষয়টি সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিবেচনায় নিতে হবে। প্রথমত, জনগণ কী চায় সেটা যেমন বিবেচনায় নিতে হবে, তেমনি এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণ বা তৃণমূলের মতামতকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। চাপিয়ে দেওয়া কিছু জনগণ মেনে নেয় না। সামনে জাতীয় নির্বাচনসহ যেকোনো নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি বিবেচনায় নেবে বলে আশা করছি।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী শেষ সময়ে দলের নির্দেশে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই যে বিএনপি কাজটি করেছে, তা স্পষ্ট। বলা যায়, এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং এর গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করতেই কাজটি করা হয়েছে। রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এ ধরনের নেতিবাচক অবস্থান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
স্থানীয় সরকারের একটি নির্বাচনই বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমেরও পুরো মনোযোগ ছিল এই নির্বাচনের দিকে। সবকিছু মিলিয়েই নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। আমরা যদি ভবিষ্যতের জাতীয় নির্বাচনের কথা বিবেচনায় নিই, এটা আমাদের মানতেই হবে যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে সমঝোতার বিকল্প নেই। সামনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতেও এর বিকল্প নেই। আশা করি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এই সত্য স্বীকার করে সে অনুযায়ী কাজ করবে।

No comments

Powered by Blogger.