ন্যান্সি নির্জনে by রুহিনা তাসকিন

তিন বছর পর বের হচ্ছে ন্যান্সির দ্বিতীয় একক অ্যালবাম। ভালোবাসা দিবসে বাজারে আসছে তা। শ্রোতাদের ভালোবাসা, খ্যাতি নিজের জীবনের স্বপ্ন—এসব নিয়ে কথা হয় ন্যান্সির সঙ্গে।  প্রায় তিন বছর পর আসছে ন্যান্সির দ্বিতীয় অ্যালবাম। তা নিয়ে একগাদা প্রশ্ন গোছানোই ছিল। কিন্তু কম কথাতেই সারলেন ন্যান্সি, ‘অ্যালবামের ব্যাপারটা আমি একদম হাবিব ভাইয়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।


তিনি আমার রুচি বোঝেন, কোন গানটা আমার গলায় মানাবে, তিনিই ভালো জানেন। কাজেই অ্যালবাম নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই। আটটা গান থাকছে। শ্রোতারা তাঁদের চেনা ন্যান্সিকেই পাবেন এতে। একটু সুফি ধাঁচের ডুয়েট গানও আছে। হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে আছে আরেকটি ডুয়েট।’ ডেডলাইন মিউজিকের ব্যানারে আসা এই অ্যালবামটির নাম হাবিব ফিচারিং ন্যান্সি।
বরং উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন ন্যান্সি তাঁর পরের পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে। গান নয়, মানে এতটা বাণিজ্যিক ধরনের গান আর নয়। এসব ছেড়েছুড়ে সরে যেতে চান তিনি।
অন্তত ২০০ শতক জমি। তার মাঝে ছোট্ট একটা কুঁড়ে। আশপাশে বাগান। চালে উঠে যাবে লতানো লাউশাক। একটু দূরে ফলের বাগান। বাগানের মাঝে পুকুর। তাতে জাল ফেললেই উঠে আসবে বড় বড় মাছ। ভোরে পাখির ডাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভেসে আসবে তাঁর রেওয়াজের আওয়াজ।
আর হয়তো বছর খানেক। তারপরই ন্যান্সি চলে যাবেন তাঁর স্বপ্নের এই জায়গায়; ঢাকা শহরের কোলাহল, কর্কশতা ফেলে।
‘নেত্রকোনায় আমাদের বাড়িটা ছিল এ রকম। সাভারেও অনেকটা এমন পরিবেশেই থেকেছি। একসময় ঢাকায় আসতেই হলো। কিন্তু মন টিকছে না। সব গুটিয়ে আর বছর খানেকের মধ্যেই চলে যেতে চাই ঢাকা থেকে। এখানকার এত চাপ আর ভালো লাগছে না,’ বললেন ন্যান্সি।
অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দা দিয়ে আসছে দুপুরের নরম রোদ। মেয়ে রোদেলা খেলছে সেখানে। একঝলক সেদিকে তাকিয়ে ফোনটা বন্ধ করে ফেললেন ন্যান্সি, ‘ফোন ধরতে ভালো লাগে না। সবাই তো কোনো না কোনো কাজেই ফোন করে। এখানে আমার কোনো বন্ধু নেই। চারপাশটা এখন খুব কৃত্রিম। কেউ আসে না কথা বলতে, অথচ আমার বাসায় কী হচ্ছে, কে আসছে-যাচ্ছে তা নিয়ে কৌতূহল।’
ভক্তদের এত ভালোবাসাই কি চাপ হয়ে ছোট করে দিচ্ছে ন্যান্সির পরিধি? ‘এখন কোনো কিছু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভয় লাগে। না জানি কে কী ভাবে। কেউ যদি বলে বসে, ও তো কিছুই পারে না। ভালোবাসা থেকেই কিন্তু জবাবদিহির ব্যাপারটাও চলে আসে। ইচ্ছে হয় নজরুলসংগীত করতে, সেমি ক্লাসিক্যাল ধাঁচের কোনো গান করতে। কিন্তু কে কী বলবে, সেই ভয়েই কিছু করা হচ্ছে না। গানের জগতে তো বেশিদিন হয়নি আমার। অনিচ্ছাতেই কোনো ভুল হয়ে গেলে কীভাবে সেটা সামলাব আমি?’
২০০৯-এ বেরিয়েছিল তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ভালবাসা অধরা। এই লম্বা বিরতি কি তবে প্রস্তুতির জন্যই? ‘আমি তো আরও আগেই অ্যালবাম করতে চেয়েছিলাম। প্রস্তাব পাচ্ছিলাম কই? একক অ্যালবাম বের করা যে কী কঠিন আমাদের দেশে!’
একের পর এক জনপ্রিয় গান, অনুষ্ঠানে আসার এত এত আমন্ত্রণ, শোকেস-ভর্তি নানা পুরস্কার—এসব ছেড়ে চলেই যাবেন ন্যান্সি? ‘আমাকে সত্যিই মানুষ ভালোবাসে? কই, আমি তো কিছু টের পাই না। সেদিন এক ফেসবুকের পাতায় দেখলাম, কে একজন মন্তব্য করেছে— ন্যান্সি তো সফটওয়্যার সিংগার। হাসব না কাঁদব বুঝিনি। সফটওয়্যার সিংগার কথাটার অর্থ বুঝে কি মন্তব্য করেছেন তিনি? আর গানের অনুষ্ঠান? আমাদের দেশে অনেকেই গান শুনতে আসে না, দেখতে আসে। আমি কেমন গান করি, সেটা জেনেই তো মানুষ আমাকে অনুষ্ঠানে নিয়ে যায়। তবে কেন শ্রোতাদের থেকে চিরকুট আসে নাচার জন্য? কেন অনুরোধ আসে ‘শিলা কি জওয়ানি’ গাওয়ার জন্য? ওসব গান ভালো না, তা বলছি না। কিন্তু আমি তো তেমন গান করি না। ডেকে নিয়ে গিয়ে তবে কেন এমন অনুরোধ?’
শহরটা হয়তো ছাড়বেন, কিন্তু গান ছাড়ছেন না ন্যান্সি। বরং আরও চর্চা, নিজেকে আরও ঝালাই করার পর্ব শুরু হচ্ছে ‘সুজিত মোস্তফার কাছে নজরুল আর উচ্চাঙ্গসংগীতের চর্চা করব,’ জানালেন তিনি।
কয়েকটা দিন ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়েছেন। বাড়িতে বসে বই পড়ছেন প্রচুর, ‘সেবা প্রকাশনীর বইগুলো পড়ছি একটার পর একটা। বেশির ভাগই থ্রিলার। আর টিভি দেখছি। গানের প্রতিযোগিতাগুলো খুব মন দিয়ে দেখি। লাইভও দেখছি।’

No comments

Powered by Blogger.