ওজোন দিবস-ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে ওজোন স্তর by আজিজুর রহমান

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে অবস্থিত ওজোন স্তর, যা এত দিন সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি আটকে রেখে জীবজগৎকে রক্ষা করে আসছিল, তা মনুষ্যসৃষ্ট কিছু ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণের কারণে ক্রমাগত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৪ সালে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রথম জানা যায়, বায়ুমণ্ডলে ক্রমবর্ধমান ক্লোরোফ্লোরো কার্বন বা সিএফসি গ্যাসের উপস্থিতির কারণে ওজোন স্তর ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ফলে বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হয়ে উঠছে।


পৃথিবীব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে তা ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। একই সঙ্গে ওজোন স্তর ক্ষয়ের কারণে পৃথিবীতে অতিবেগুনি রশ্মির বর্ধিত আপাতন হচ্ছে এবং এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ওপর। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে টিমের গবেষকরা ১৯৮৫ সালে বিশ্ববাসীকে একটি ভয়ংকর দুঃসংবাদ দেন। তাঁরা জানান, কুমেরুর আকাশে ওজোন স্তরে বিশাল একটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর কয়েক বছর পর বিজ্ঞানীরা জানান, ১৯৯৬ সালের তুলনায় এই গর্তটি ২৫ শতাংশেরও বেশি বেড়ে গেছে। ১৯৯৮ সালে এই গর্তটির আয়তন ছিল অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের তিন গুণ বড়। আর অতিবেগুনি রশ্মির আগমনের পরিমাণ অ্যান্টার্কটিকায় প্রতিবছর ১৩০ শতাংশ হারে বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা ১৯৮৮ সালের মে মাসে যৌথভাবে তাঁদের গবেষণার যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন তাতে বলা হয়, ৩০-৬০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের মধ্যবর্তী যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ, রাশিয়া ও জাপানের জনবসতি অঞ্চলে গত ১৭ বছরে ১.৭ শতাংশ থেকে ৩.৪ শতাংশ পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলীয় ওজোন হ্রাস পেয়েছে। সর্বশেষ এশিয়াবাসীর জন্য দুঃসংবাদ দিয়েছে চীনের একটি বিজ্ঞানবিষয়ক পত্রিকা। পত্রিকাটিতে বলা হয়, ভারতের সীমান্তে তিব্বতের কিংসাই মালভূমির আকাশে প্রায় ২৫ লাখ বর্গকিলোমিটার অংশজুড়ে ওজোন স্তর ক্ষয়ে গেছে। আর ওজোন স্তরের ওই ক্ষয়ের আয়তন ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে ওই অঞ্চলে সরাসরি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ করছে। ওজোন স্তর ক্ষয় হওয়ার কারণে অতিবেগুনি রশ্মির বিরূপ প্রভাব ইতিমধ্যে উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের ওপর পড়তে শুরু করেছে। মানুষের ত্বকের ক্যান্সার, চোখে ছানিপড়া, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যাওয়া, সালোকসংশ্লেষণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়া, সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি ফাইটোপ্লাংকটন বিনষ্ট হওয়াসহ নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ওজোন স্তর ধ্বংসে সিএফসিসহ এবং অন্যান্য গ্যাসের ভূমিকা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মন্ট্রিল প্রটোকলের আওতায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাপী এসব গ্যাস উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ক্রমক্ষয়িষ্ণু ওজোন স্তরকে সংরক্ষণ ও পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (টঘঊচ) উদ্যোগে ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কানাডার মন্ট্রিল শহরে গৃহীত হয় মন্ট্রিল প্রটোকল। এরপর ১৯৯৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর গৃহীত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে ওজোন স্তর সংরক্ষণে ১৯৯৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে ওজোন দিবস পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর এ দিবসটি উদ্‌যাপিত হচ্ছে।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.