ফুটবলার বনাম বাবা বেকহাম

সময় কত দ্রুতই না বয়ে যায়! দেখলে মনে হয়, এই তো সেদিন ওর জন্ম হলো, এই তো সেদিন হাঁটি হাঁটি পা পা করে হাঁটতে শিখল; সেই ব্রুকলিনের বয়স এখন ১২ বছর! কথাবার্তায় কেমন জানি একটা ভারিক্কিও এসেছে! রোমিও আর কদিন বাদে দশে পা দেবে। আমেরিকায় যখন সপরিবারে চলে এলেন, ক্রুজের নাম তখনো রাখাই হয়নি; সেই গ্যাদা বাচ্চা ক্রুজ পর্যন্ত ছয় বছরের বালক। পরিবারের আয়তন এরই মধ্যে বেড়েছে।


তিনটা ছেলের পর খুব করে একটা পরির মতো মেয়ে চেয়েছিলেন। ভগবান তাঁর চাওয়া পূরণ করে দিয়েছেন। ঘর আলো করে এসেছে হার্পার।
তিন ছেলে আর এক মেয়ে—এই নিয়ে ডেভিড আর ভিক্টোরিয়া বেকহামের সংসার। এই নিয়েই তাঁদের জগৎ। আর দশটা তারকা দম্পতির সঙ্গে এখানেই তাঁদের পার্থক্যও। ঝলমলে গ্ল্যামার দুনিয়া মানে শুধু টাকার স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া নয়; অর্থবিত্ত-খ্যাতি-যশের মধ্যে থেকেও আদর্শ বাবা হয়ে উঠেছেন বেকহাম, আদর্শ মা ভিক্টোরিয়া।
বিশেষ করে, বেকহামের কথা আলাদা করেই বলবে সবাই। ইদানীং তারকা ফুটবলারদের নামে কত কেচ্ছাকাহিনি বের হয় রোজ। কিছু কিছু ঘটনা তো রীতিমতো বিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে দেয়। কিন্তু বেকহামের এত লম্বা ক্যারিয়ারে সামান্য দুটো আঁচড় ছাড়া আর কিছু নেই। ২০০৪ সালে নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড বোমা ফাটিয়েছিল, বেকহামের সঙ্গে তাঁর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী রেবেকা লুজের গোপন অভিসার চলছে। এক সপ্তাহ বাদে সারাহ মারবেক নামের এক অস্ট্রেলিয়ান মডেলও দাবি করেন, বেকহামকে শয্যাসঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন। দুটো খবরকেই বেকহাম উড়িয়ে দিয়েছেন প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।
সেই প্রথম সেই শেষ। এরপর আর কোনো ‘কেচ্ছা’ নেই। গল্প আছে—এক আদর্শ বাবা, আদর্শ স্বামীর গল্প।
সত্যি বলতে কি, এই যে বেকহাম প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের লোভনীয় প্রস্তাব পায়ে ঠেললেন, ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে ফেরার স্বপ্নটাকে ইচ্ছা করেই গলা টিপে মেরে ফেললেন; সে-ও পরিবারের জন্যই। বেকহামের সঙ্গে পিএসজিসহ আরও কিছু ক্লাবের নাম শোনা যাচ্ছিল এলএ গ্যালাক্সির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরোবার আগেই। পিএসজি অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্যালাক্সির সঙ্গেই আরও দুই বছরের জন্য চুক্তি করেছেন ইংলিশ ফুটবল তারকা।
বেকহাম জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর জন্য ছিল একই সঙ্গে কঠিন এবং সহজ। ইউরোপের ফুটবলে ফেরার প্রস্তাবকে ‘না’ বলা আসলেই কঠিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কঠিন কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছে পরিবারের দিকে তাকিয়ে। ৩৬ বছর বয়সী এই তারকা বলেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত এটা ছিল সহজ একটা সিদ্ধান্ত। আমার এই বয়সে যে প্রস্তাবগুলো পেয়েছিলাম, সেগুলো বিবেচনা করার আগে সবগুলো বিকল্প আমাকে ভালোমতো ভেবে দেখতে হয়েছে। আমি ভেবে দেখেছিও। কিন্তু আমাদের কাছে সব সময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আমাদের পরিবার কোথায় সুখ বোধ করছে, কোথায় সুখী জীবনযাপন করছে।’
গত পাঁচ বছরে লস অ্যাঞ্জেলেসে সংসারটা বেশ গুছিয়ে এনেছেন। মেয়ের জন্ম, তিন ছেলের বন্ধু, স্কুল—সব এখানেই। সব মিলে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা তাই পরিবারের দিকে তাকিয়েই, ‘গত পাঁচ বছরে লস অ্যাঞ্জেলেসে আমাদের অনেক সুন্দর সময় কেটেছে। আমি এখানে খেলে তৃপ্ত, আমাদের বাচ্চারাও খুব খুশি। এটাই এই সিদ্ধান্তের সবচেয়ে বড় কারণ।’
পিএসজিতে গেলে ফুটবলার বেকহাম হয়তো লাভবান হতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছে বাবা বেকহাম-সত্তাটাই।
 রাজীব হাসান

No comments

Powered by Blogger.