জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাবতে হবে by মোঃ মুজিবুর রহমান

১৯৯২ সালের ৩৭নং অ্যাক্টের ক্ষমতাবলে উচ্চতর শিক্ষায় সেশনজট নিরসনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর এসে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ওই উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারছে না প্রত্যাশিতভাবে।


এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কোর্সের সেশনজট নিরসন করা তো সম্ভব হচ্ছেই না, বরং ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে অনার্স কোর্সের প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ভর্তিকৃতরা প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। ইতিমধ্যে ওই বর্ষের পরীক্ষার তারিখ একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের তিন বছরমেয়াদি পাসকোর্সের পরীক্ষারও তারিখ নির্ধারণ করা হচ্ছে না।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকাণ্ডে খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর একাধিক জাতীয় পত্রিকায়। সমকালে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী জানা যায়, অতীতের চলে আসা নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ ছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য নেই বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় মতপ্রকাশ করা হয়েছে। সারাদেশের ১২ লাখ ছাত্রছাত্রীর উচ্চতর শিক্ষার দায়িত্ব পালনকারী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মানও সন্তোষজনক নয় (সমকাল, ০৬.০৯.১১)। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেসব সমস্যা চিহ্নিত করেছে এসবের বাইরে আরও নানা ধরনের সমস্যায় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি জর্জরিত। যেমন_ পরীক্ষা গ্রহণের জন্য যথাসময়ে উত্তরপত্র মুদ্রণ করতে না পারা, উত্তরপত্র পরীক্ষণের জন্য পরীক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর যথাসময়ে ফল প্রকাশ করতে না পারা, পরীক্ষার ফল প্রকাশে সাত-আট মাস বা কখনও কখনও তারও বেশি সময়ক্ষেপণ করা, জরুরি প্রয়োজনে পরীক্ষা পাসের সনদপত্র ও নম্বরপত্র উত্তোলনের জন্য অনেক দূর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরীক্ষার্থীদের একাধিক দিন আসতে বাধ্য হওয়া ইত্যাদি অন্যতম। শুধু তাই নয়, কোনো কলেজে অল্পসংখ্যক পরীক্ষার্থী থাকলেও তাদের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, ডেসক্রিপটিভ শিট গ্রহণ এবং সংশোধন শেষে পুনঃজমা, চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন ফরম গ্রহণ ও জমা দেওয়া ইত্যাদি কাজের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ অনেকবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হয়। ফলে কলেজ কর্তৃপক্ষও তাদের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত খরচের নামে।
আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছিলাম, যেহেতু সারাদেশের কলেজগুলোয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এবং তাদের নানা কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়, সে জন্য বিভাগীয় শহরগুলোয় দ্রুত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা স্থাপন করা হবে। কিন্তু আমরা এখনও দেখছি, ছাত্রছাত্রীদের নানা কাজে গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে। কাজেই এখন বলতে কোনো বাধা নেই যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ফলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও কলেজ কর্তৃপক্ষের হয়রানি বেড়ে গেছে আরও ব্যাপকভাবে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রায়ই বলে থাকে, সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে! প্রসঙ্গত অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ করা দরকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাত্র মূল ক্যাম্পাস থাকার দরুন এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারও চাকরি বদলিযোগ্য নয়। ফলে তারা সবাই নিয়োগের পর থেকে একই কর্মস্থলে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আসছেন। ওই পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার কারণে অনেকেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। কাজেই এসব সমস্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তি দিতে হলে বিশেষ করে এর অধীন কলেজগুলোর লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘবের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সরকারের উচ্চতর পর্যায়ে নতুন করে ভাবতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। দরকার হলে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অ্যাক্ট সংশোধন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রীর স্বার্থে এতে দোষের কিছু নেই।
সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, পাবনা
 

No comments

Powered by Blogger.