যেমন কাটছে সবিতা ব্যানার্জীর দিনকাল

স্টাফ রিপোর্টার: চলচ্চিত্রের যারা পুরনো দর্শক তাদের কাছে সবিতা কিংবা সবিতা ব্যানার্জী নামটি বেশ পরিচিত। চলচ্চিত্রে অভিনয়ে এখন অনিয়মিত হলেও চলচ্চিত্রের একজন নিবেদিত মানুষ তিনি। দেশীয় চলচ্চিত্রকে, এখনও চলচ্চিত্রে কাজ করাকে তিনি অহঙ্কার মনে করেন। মাঝে বিশ বছর বিরতি নিয়ে পাঁচ বছর আগে চাষী নজরুল ইসলামের নির্দেশনায় ‘সুভা’ ছবিতে শাকিব খানের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সবিতা।  বিশ বছর পর এটিই ছিল তার অভিনীত নতুন কোন ছবি। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মূলত চলচ্চিত্রে অভিনয়ে সবিতার সম্পৃক্ততা ঘটে। তবে তার অভিনীত প্রথম ছবি ছিল সফদর আলী ভূঁইয়া পরিচালিত ‘কাঞ্চনমালা’। এ ছবিতে তিনি ছোট নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। ঢাকার রাজা বাজারে জন্ম নেয়া সবিতার ছোট বেলা থেকেই নিজেকে মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার প্রবল ইচ্ছে ছিল। উত্তম কুমার ও সন্ধ্যা রায় অভিনীত ‘মায়ামৃগ’ ছবিটি দেখার পরই উত্তম কুমারের সঙ্গে দেখা হওয়ার আশায় তার মা বিশিষ্ট চলচ্চিত্রাভিনেত্রী অরুণা ব্যনার্জীর কাছে বায়না ধরেন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য। এভাবেই একটু একটু করে সবিতার চলচ্চিত্রে পদার্পণ ঘটে। উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘চোরাবালি’ ছবিতে তিনি প্রথমবারের মতো নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন। এ ছবিতে তার বিপরীতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা সৈয়দ আহসান আলী সিডনী। এরপর অন্তরঙ্গ, দুটি মন দুটি আশা ছবিতেও নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন। সে সময়ের ছবির কথা বলতে গিয়ে সবিতা ব্যানার্জী বলেন,  এখন আসলে চলচ্চিত্রে আর সেই সুদিন নেই। সেদিন এক অনুষ্ঠানে আইন মন্ত্রণালয়ের একজনের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। আমার সঙ্গে কথায় কথায় তিনি বললেন, জানেন, আপনার একটি ছবির শুধু একটি গান দেখার জন্য আমি আশিবার ছবিটি দেখেছি। ভদ্রলোকের একথা শুনে আমি রীতিমতো অবাক না হয়ে পারিনি। অথচ এখনকার সিনেমার গান হল থেকে বের হলেই দর্শক ভুলে যায়। বশীর হোসেন পরিচালিত ‘আপন পর’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে প্রয়াত  জাফর ইকবালের। এ ছবিতে বশীর আহমেদের গাওয়া ‘পিঞ্জর খুলে দিয়েছি যা কিছু বলার ছিল ভুলে গিয়েছি, যারে যাবি যদি যা’ গানটি  সে সময় ব্যাপক আলোড়ন তুলে। এ ছবিতে জাফর ইকবালের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন সবিতা ব্যানার্জী। চলচ্চিত্রে কাজ করার পাশাপাশি সবিতা ব্যানার্জী সে সময় মঞ্চ, রেডিও টেলিভিশনেও নিয়মিত নাটকে অভিনয় করতেন। মঞ্চে তিনি সর্বপ্রথম অভিনয় করেন নায়করাজ রাজ্জাকের বিপরীতে ‘কুয়াশার কান্না’ নাটকে। এই নাটকে তিনি মলি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এরপর ‘মিতা নার্সিং হোম’ নাটকেও অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছে আনোয়ারা, জুলেখা, ময়ূরপংখী, গাজী কালু চম্পাবতী, দুই ভাই, বাল্যবন্ধু, ছদ্মবেশী, সাধারণ মেয়ে, অবাক পৃথিবী, প্রতিবাদ, সন্তান, পাতালপুরীর রাজকন্যা, স্মাগলার, মনিমুক্তা, উৎসর্গ ইত্যাদি। এই সময়ের শিল্পীদের অভিনয় সম্পর্কে সবিতা বলেন,  আমার মনে আছে ‘অবাক পৃথিবী’ ছবিতে আমি আর কবরী গারো মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। কারও বোঝার উপায় ছিল না যে আমরা গারো নই। চরিত্রের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব মিশে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এখন আর শিল্পীদের মধ্যে সে চেষ্টাটা একেবারেই নেই। সবিতা ব্যানার্জীর দুই ছেলে অমিত দেওয়ানজী ও রাজেশ দেওয়ানজী। দুই ছেলে নিয়েই তার সুখের সংসার। নাটকে কিংবা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য যদি ভাল চরিত্র পান তবেই এখন অভিনয় করেন। তবে বিভিন্ন পূজাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে তাকে বিশেষভাবে দেখা যায়।

No comments

Powered by Blogger.