চরাচর-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী by বিশ্বজিৎ পাল বাবু

ছানামুখী। দেখতে সাদা, গায়ে চিনি মাখানো। ছানা আর চিনিতে তৈরি হওয়া প্রসিদ্ধ মিষ্টি খাবার। ভোজনরসিক বাঙালির পছন্দের তালিকায় অনেকটা ওপরে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই খাবারের সুনাম উপমহাদেশজুড়ে। প্রায় ১০০ বছর আগে প্রথম তৈরি হওয়া ছানামুখীর কদর এখনো এতটুকু কমেনি; বরং বিয়ে-শাদি, অন্য কোনো অনুষ্ঠান, কারো বাড়িতে বেড়ানো ইত্যাদিতে ছানামুখী যেন আলাদা ঐতিহ্য বহন করে।


জেলার বাইরে থেকে বেড়াতে আসা লোকজন ছানামুখী নিয়ে যাবে না_এটা যেন ভাবাই দায় হয়ে পড়ে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই ছানামুখীর যাত্রা সেই ব্রিটিশ রাজত্বকাল থেকেই। এ মিষ্টির খ্যাতির পেছনে যে মানুষটির নাম জড়িয়ে আছে তিনি হলেন মহাদেব পাঁড়। তাঁর নাম অনুসারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার 'মহাদেব পট্টি' নামকরণ হয় বলে প্রচলিত আছে। যেখানে বর্তমানে কয়েকটি প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকানও রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, জন্মস্থান কাশিধামে হলেও বড় ভাই দুর্গা প্রসাদের দোকানে মিষ্টি তৈরি করতে কলকাতায় আসেন কিশোর মহাদেব। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর আশ্রয়হীন হয়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে আসেন। কাজ নেন শহরের মেড্ডার শিবরাম মোদকের মিষ্টির দোকানে। কিছুদিন যেতেই তাঁর বানানো মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মহাদেব পাঁড়ের হাতেই প্রথম তৈরি হয় ছানামুখী। তাঁর বানানো মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেছিলেন ভারতের বড় লাট লর্ড ক্যানিং ও তাঁর স্ত্রী লেডি ক্যানিং। পরে ওই মিষ্টির নাম রাখা হয় লেডি ক্যানিং। কিছুদিনের মধ্যে মিষ্টি হিসেবে ছানামুখীর সুনামও ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পাঁচ-সাতটি দোকানে এখনো তৈরি হয় ছানামুখী। স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি জেলার বাইরের দোকানিরা ছানামুখী পাইকারি কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। বর্তমানে দাম ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি। তবে দুধের দামের ওপর নির্ভর করে এর দাম ওঠানামা করে।
কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪০ কেজি দুধে ছয় কেজি ছানামুখী বানানো যায়। এতে প্রায় ছয় কেজি চিনি দিতে হয়। প্রথমে ছানা তৈরি করে ছোট ছোট করে কাটা হয়। পরে ছানাগুলো চিনির রসে ভেজে নিতে হয়। দুধের ভালো-মন্দের ওপর অনেক সময় ছানামুখীর স্বাদেরও তারতম্য ঘটে।
দোকানিরা জানালেন, ছানামুখী কারিগরদের শ্রমের মূল্যও একটু বেশি। অনেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কারিগর নিয়ে ছানামুখী বানান। সময়ভেদে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ কেজি ছানামুখী বিক্রি হয়। গরমকালে এর চাহিদা বেশি থাকে। দূর-দূরান্তের অনেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ছানামুখী নিয়ে যান। ক্রেতারা জানালেন, দিনকে দিন ছানামুখীর দাম বেড়েই চলছে। তবে চাহিদার এতটুকুও কমতি নেই তাদের কাছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বেড়াতে এসে ছানামুখী খাওয়া কিংবা নিয়ে যাওয়া না হলে অর্পূণতাই থেকে যাবে বলে মন্তব্য অনেকের। স্থানীয়দের পাশাপাশি রাজশাহী, কুমিল্লা ও নরসিংদী থেকে আসা অনেক ক্রেতাকেই পাওয়া যায় বিভিন্ন দোকানে।

বিশ্বজিৎ পাল বাবু

No comments

Powered by Blogger.