তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সংবিধান by মোঃ খলিলুর রহমান

দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে আমি নিচের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরতে চাই। ১। (ক) সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটসংখ্যার ভিত্তিতে সর্ববৃহৎ দলের তিনজন, দ্বিতীয় বৃহত্তর দলের দু'জন এবং তৃতীয় ও চতুর্থ বৃহত্তর দলের একজন করে মোট সাতজন সদস্য নিজ নিজ দল কর্তৃক মনোনীত হবেন।


তারা একজন করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশপ্রধান এবং একজন করে আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার সংস্থা ও উপজাতীয় প্রতিনিধি মনোনীত করবেন। এ ১৪ জন উপদেষ্টা কর্তৃক মনোনীত প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ প্রদান করবেন। তারা ব্যর্থ হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারই প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবেন।
(খ) নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষের ৪৫ দিন আগে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন প্রক্রিয়া শুরু এবং কমপক্ষে পাঁচ দিন আগে তা সম্পন্ন হবে।
(গ) ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
২। (ক) প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের পর প্রাপ্ত ভোটসংখ্যার অনুপাতে বিভিন্ন দল থেকে নির্বাচিত সদস্য নিয়ে গঠিত একটি সর্বদলীয় কমিটির সুপারিশের আলোকে রাষ্ট্রপতি স্বাধীন, শক্তিশালী, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত 'দুদক' এবং নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।
(খ) ব্যক্তিকে না দিয়ে দলকে ভোট দেওয়া হবে। যে আসনে যে দল বেশি ভোট পাবে, সে আসনে সে দলীয় সদস্য থাকবেন। এ ক্ষেত্রে দলগুলোর মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।
(গ) ২/খ গৃহীত না হলে এক ব্যক্তি দুটির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
৩। (ক) সংসদে আলোচনার মাধ্যমে 'বিসমিল্লাহ' সংযোজিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী গৃহীত হবে। বিভিন্ন দেশে বিদ্যমান একাধিক রাষ্ট্রভাষার আদলে জনসংখ্যানুপাতে প্রধান চারটি ধর্ম যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ রাষ্ট্রধর্ম এবং অন্যান্য ধর্ম পঞ্চম রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতি পাবে। তবে নাগরিক হিসেবে সবাই সমঅধিকার ও মর্যাদা ভোগ করবেন।
(খ) কমপক্ষে দুটি অথবা যতটি প্রয়োজন ততটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে।
(গ) সংসদ অধিবেশন বর্জনকে অবৈধ করতে হবে।
(ঘ) একই ব্যক্তি একই সঙ্গে দলীয় এবং সরকার/রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবেন না।
(ঙ) অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র না থাকলে সে দলের নিবন্ধন বাতিল হবে।
(চ) 'সরকারের পতন হবে'_ এমন বিষয় ছাড়া জনস্বার্থে নিজ দলের বিরুদ্ধেও সাংসদদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে 'ফ্লোর ক্রসিং' আইনটি সংস্কার করতে হবে।
(ছ) 'রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয় জড়িত'_ এরূপ বিষয় বাদে সব রাষ্ট্রীয় চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে অবশ্যই সংসদে আলোচিত হবে।
আমাদের রাজনীতিকদের পারস্পরিক বিশ্বাস সৃষ্টিতে ব্যর্থতার দায়ভার চিরদিন জাতি বহন করতে পারে না। জাতি এখন অনেক সচেতন। মনে রাখলেই মঙ্গল হবে, জনতার স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণকে কেউ কোনোদিন দমিয়ে রাখতে পারেনি।
কান্দারপাড়া, জামালপুর
 

No comments

Powered by Blogger.