সেবা বন্ধ, হাসপাতাল ছেড়ে যায় রোগীরা by আরিফুল হক

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০টি বহির্বিভাগে গতকাল শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুইটা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা নিতে পারেনি রোগীরা। হামলার আশঙ্কায় অনেক রোগী ও তাদের স্বজনেরা প্রাণভয়ে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যায়।
হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির সাংসদ আসিফ শাহরিয়ার ও তাঁর সমর্থকেরা বাঁশের লাঠি নিয়ে হাসপাতাল ঘেরাও করতে আসছেন—এ খবরে গতকাল সকাল থেকে হাসপাতালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।


বেলা ১১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে পারে রোগীরা। এরপর হামলার আশঙ্কায় প্রতিটি বহির্বিভাগে রোগী কমতে থাকে। বেলা একটার দিকে সাংবাদিকদের ওপর সাংসদ সমর্থকদের হামলা, এরপর ওই সমর্থকদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় বেলা দুইটা পর্যন্ত হাসপাতাল চত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুরো হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। ওই সময় বহির্বিভাগ, হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যালয় বন্ধ দেখা গেছে।
এ সময় অনেক রোগী প্রাণভয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হন। হাসপাতালে প্রবেশের প্রধান পাঁচটি ফটক ছিল বন্ধ। শুধু প্রশাসনিক কার্যালয়ে যেতে ফটকটির একটি অংশ খোলা ছিল। সংঘর্ষের সময় লোকজনকে হুড়োহুড়ি করে ওই ফটক পার হতে দেখা গেছে।
এমনই একজন রোগী কাউনিয়া উপজেলার আসমা বেগম। হাসপাতাল ছাড়ার সময় তাঁর এক স্বজন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলার আশঙ্কায় চিকিৎসা না নিয়েই চলে যাচ্ছি।’
রংপুর সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘পা ভাঙা নিয়ে এসেছিলাম চিকিৎসা পেতে। কিন্তু চিকিৎসা না নিয়েই ভয়ে চলে যাচ্ছি।’ এমনি আরও অনেকেই জানান তাঁদের দুর্ভোগের কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন সাংসদের নেতৃত্বে মানুষজন যদি লাঠি নিয়ে হাসপাতাল ঘেরাও করে, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? মনে হয়, এ ধরনের ঘটনা দেশে প্রথম ঘটল।’
এদিকে গতকাল জরুরি বিভাগেও রোগীর উপস্থিতি খুব কম ছিল। এই বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সিদ্দিকুল ইসলাম খান বলেন, সকাল সকাল কিছু রোগী এসেছে। তবে দুপুর ১২টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত রোগীর উপস্থিতি খুব কম ছিল। সাধারণত এমনটি ঘটে না।
যোগাযোগ করলে হাসপাতালের পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাঠিসোঁটাসহ ট্রাকে করে মানুষ নিয়ে এসে যদি হাসপাতাল ঘেরাও করা হয়, তাহলে কীভাবে মানুষ চিকিৎসা নিতে আসবে?’

No comments

Powered by Blogger.