চরফ্যাশনে গাছ কাটা-নিজের পায়েই কুড়াল মারা হলো

ভোলার চরফ্যাশনে একদিনে ১২ হাজার চারাগাছ কাটা হয়েছে। শনিবার সমকালে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, কৃষকদের সস্তা সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে তাদের দিয়েই গাছ কাটানো হয়েছে। আর এ কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন জাহানপুরের ইউপি চেয়ারম্যান। গাছগুলো উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলার উদ্দেশ্য নিয়েই একটি প্রকল্পের আওতায় রোপণ করা হয়েছিল।


স্থানীয় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের স্বার্থ সংঘাত উপকূলীয় এলাকাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার সেই উদ্যোগ ভণ্ডুল করে দিতে উদ্যত। এটা ঠিক যে, এলাকাটির তিনটি বাগানের জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে সরকারের বিরোধ চলছিল। কৃষকরা এসব বাগানের জমি তাদের বলে দাবি করে আসছেন। অন্যদিকে সরকার এগুলোকে খাস জমি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলার উদ্দেশ্য নিয়ে এসব চারাগাছ রোপণ করা হয়েছে, তাই এগুলোকে কেটে ফেলা কোনোক্রমেই সমর্থন করা যায় না। ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে গাছ কর্তনকারী কৃষকরাও রেহাই পাবেন না। নিজের জনসমর্থন ধরে রাখার জন্য জনপ্রতিনিধি অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে পারেন। কিন্তু সে পদক্ষেপ যেন বৃহত্তর শুভ উদ্যোগের বিরুদ্ধে না হয় সেটাও জনপ্রতিনিধির লক্ষ্য রাখা উচিত। কোনটা রেকর্ডীয় জমি আর কোনটা রেকর্ডীয় নয় সেটা কে নির্ধারণ করবে? নিশ্চয়ই জাহানপুরের চেয়ারম্যান সাহেবের মর্জির ওপর তা নির্ধারিত হবে না। এ জন্য আইন-কানুন আছে। সে আইনানুগ ফয়সালার জন্য অপেক্ষা না করে লোক দিয়ে গাছ কেটে নেওয়া নিশ্চয়ই সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। এ ব্যাপারে অবশ্য মামলা হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়েই গেছে। আমরা যে কোনো অবস্থাতেই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলার উদ্দেশ্য নিয়ে রোপণ করা গাছ কাটা বা বনায়ন নষ্টের বিরুদ্ধে। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের জাতীয় স্বার্থ। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে। তখন বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয়, এমনকি সহায়-সম্বলহীন হয়ে উদ্বাস্তুর সংখ্যা বৃদ্ধি করবে।

No comments

Powered by Blogger.