গণমিছিল পিছিয়ে সোমবারে নিল বিএনপি, আজ কর্মসূচি দিতে পারে আ.লীগ-ঢাকায় মিছিল-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা

বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে আজ রোববার রাজধানীতে মিছিল, সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ।  ফলে চারদলীয় জোটের গণমিছিল পিছিয়েছে। তারা কাল সোমবার ঢাকায় গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে।


অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে আজ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের নির্ধারিত জনসভা স্থগিত করা হয়েছে।
গত রাতে দলীয় একটি সূত্র জানায়, মহানগর আওয়ামী লীগও আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
চারদলীয় জোটের ঢাকায় গণমিছিল আয়োজনে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা প্রথম আলোকে বলেছেন, ক্ষমতাসীনেরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাধানোর পাঁয়তারা করছে। সরকারের এই আচরণ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আজ বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোটের গণমিছিল হওয়ার কথা ছিল। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে একই দিন মহানগর আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে জনসভা করার ঘোষণা দেয়।
‘পরস্পরবিরোধী দলগুলো একই দিন ঢাকা মহানগরে কর্মসূচি দেওয়ায় অন্তর্ঘাতমূলক ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে’—এই আশঙ্কা ব্যক্ত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আজ সকাল ছয়টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, মিছিল, মানববন্ধন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। গতকাল দুপুরেই ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়।
আজ ঢাকা ছাড়াও সারা দেশের বিভাগীয় শহরে ও জেলা শহরে গণমিছিলের কর্মসূচি ছিল। গতকাল রাতে বরিশাল ও রংপুর ছাড়া বাকি চার বিভাগীয় সদরেও আজ সব ধরনের মিছিল-সমাবেশের ওপর একই নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা সদরেও একই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল বিকেলে এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেছেন, বিএনপি আগেই কর্মসূচি দিয়েছে। অনেক পরে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আর একে ব্যবহার করে সংঘর্ষের অজুহাতে কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম অভিমুখে চারদলীয় জোটের রোডমার্চ শেষে ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জনসভা থেকে খালেদা জিয়া ২৯ জানুয়ারি ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এরপর গত বৃহস্পতিবার মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশবিরোধী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে দেড় মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, একই স্থানে দুটি রাজনৈতিক দল কর্মসূচি দেওয়ায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা: গতকাল ডিমএপির কমিশনার বেনজীর আহমেদের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ রোববার সকাল ছয়টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে সব ধরনের মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণ-অবস্থান, সভা ও মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সব রকম ছড়ি বা লাঠি, বিস্ফোরকদ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্র বহনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম, সংঘর্ষ এড়াতে ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ডিএমপি আইনের ২৮ ও ২৯ ধারার ক্ষমতাবলে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং রাস্তায় দাঁড়িয়ে বা বসে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল করা যাবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, ডিএমপি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে অজুহাত দেখিয়েছে।
বিএনপির গণমিছিল কাল: উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়া গুলশানে তাঁর কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে আজকের গণমিছিল কর্মসূচি কাল সোমবার করার সিদ্ধান্ত হয়। কাল বেলা দুইটায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা বাদে অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে আজ রোববার কর্মসূচি পালনের পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা বলবৎ রাখা হয়।
রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয়ভাবে কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হলে বিএনপির স্থানীয় নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে করণীয় নির্ধারণ করবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি সহিষ্ণুতা দেখিয়ে রাজধানীতে কাল সোমবার গণমিছিল করবে। তিনি বিএনপির এই আচরণকে দুর্বলতা না ভাবতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এমন একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের এ ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কর্মসূচি হলে রাজনীতি আবারও রক্তাক্ত হতো। এর সুযোগ অন্য কেউ নিতে পারত। বিএনপি তা চায়নি। বিএনপি গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে চায়।
রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে চারদলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি শরিকদের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বের হওয়ার সময় জামায়াতে ইসলামীর নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আশা করছি, সোমবারের কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেবে না।’
রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা: ঢাকা মহানগরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। আজ পুলিশ ও র‌্যাবের ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
পুলিশ ও র‌্যাব সূত্র জানায়, আজ সকাল ছয়টা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনার সামনে পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্য মোতায়েন করা হবে।
অবশ্য গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাজধানীজুড়ে র‌্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়। সন্ধ্যার পর নগরের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে তল্লাশি শুরু করা হয়।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল বলেন, যেকোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা ঠেকাতে আজ সকাল থেকে রাজধানীতে র‌্যাবের দুই হাজার পোশাকধারী সদস্য ছাড়াও গোয়েন্দা দল তৎপর থাকবে। তারা পুলিশের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

No comments

Powered by Blogger.