গাড়িবিলাস-যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন

প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য কর্মকর্তাদের গাড়ি প্রদান করা হয়। এটা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারের অধিকাংশ দপ্তরে এই গাড়ির ব্যবহার নিয়ম-নীতির বাইরে হচ্ছে। দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে এমন গাড়ি ব্যবহারের সংখ্যা এতই বেশি যে তাতে আতঙ্কিত বোধ করাই স্বাভাবিক।
তেমনি একটি দপ্তরের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে কালের কণ্ঠে। সেখানে শুধু ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা গাড়িরই তথ্য প্রদান করা হয়েছে। শুধু এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাই যদি অনিয়ম করে গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার করতেন, তাহলে বোধ হয় বলার তেমন কিছু থাকত না। আসলে সরকারি গাড়ি প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে যথেচ্ছ ব্যবহার করা, কর্মকর্তাদের নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজ পরিবারের সদস্যদের কাজে গাড়ি ব্যবহার করা, এমনকি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মীদেরও গাড়ি ব্যবহার করার মতো তথ্য যখন পত্রিকায় প্রকাশ হয়, স্বাভাবিকভাবেই তাতে আঁতকে উঠতে হয়। প্রশ্ন জাগে, এভাবে গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে যে জ্বালানি তেল ও গ্যাস খরচ হয়, তার অর্থ জোগান দেয় কে? ডিসিসির কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়েও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেখানে। ডিসিসির দুজন প্রশাসকের ব্যবহারের জন্য দামি চারটি গাড়ি নিয়োজিত। ১৭৩টি গাড়ি ডিসিসির কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যার বেশির ভাগই আবার কর্মকর্তাদের পূর্ণকালীন ব্যবহারের জন্য নয়; কিন্তু তাঁরা সেই নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। এখানেই আসলে ব্যত্যয় ঘটছে। এমন অবস্থা সরকারি সব দপ্তরেই কমবেশি চলছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের এই গাড়িবিলাস দীর্ঘদিনের। সময়ান্তরে কিছুটা হেরফের হলেও তা তেমন বিশেষ উল্লেখযোগ্য নয়; কিন্তু তাঁদের মতোই সরকারি তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করে সংসদ সদস্যরাও গাড়িবিলাসে লিপ্ত হন। এই প্রক্রিয়াও রাষ্ট্রের অর্থ খাতকে আঘাত করছে। যার দায়ভার বহন করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এখানে আবার নিজেরাই নিজেদের বিলাসী জীবনের পথকে আইন করে প্রশস্ত করে দিয়েছেন। সংসদ সদস্যরা কর মওকুফ করিয়ে নিয়ে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছেন। সংসদ সদস্যদের কর মওকুফের সুবিধা সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন সরকারি কর্মকর্তারাও গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে গাড়ির অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের কারণেই সরকারকে কোটি কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়া উচিত নয়। দেশের প্রয়োজনে নিয়মবহির্ভূত গাড়ি ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.