সংসদের একাদশ অধিবেশন-সংসদীয় গণতন্ত্র সচল ও প্রাণবন্ত হোক

বম সংসদের একাদশ অধিবেশন বসছে আজ। চলতি অধিবেশনেও বিরোধী দল অংশগ্রহণ করছে না, এটা প্রায় নিশ্চিত। নবম সংসদের বিগত ১০টি অধিবেশনের মধ্যে ছয়টিতেই বিরোধী দল পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিল। চলতি সংসদের বিগত ১০টি অধিবেশনের ২৪১ কার্যদিবসের গড়ে ১৮৭ দিন অনুপস্থিত বিরোধী দলের সদস্যরা। দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম ও দশম অধিবেশনে এক দিনও বিরোধী দল সংসদে যায়নি। আর আজ যখন সংসদ অধিবেশন বসছে, তার আগে বিরোধী দল গেছে রোডমার্চে।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সংসদই সব রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। সংসদ অধিবেশনে সরকার ও বিরোধী দলের উপস্থিতিতে সংসদ জমে ওঠে, প্রাণবন্ত হয়। কিন্তু পরিবেশ না থাকার অজুহাতে বিরোধী দল সংসদ বর্জন করে আসছে। বিরোধী দলের চিফ হুইপ জানিয়েছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও বিরোধী দলের সংসদে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাঁর এ বক্তব্য থেকেই ধরে নেওয়া যায়, এবারের অধিবেশনেও বিরোধী দল যাচ্ছে না।
বিরোধী দল সরকারের সমালোচনা করতে পারে। তবে সে সমালোচনা করার জন্য একমাত্র রাজপথকেই বেছে না নিয়ে সংসদে গিয়েও তাদের বক্তব্য পেশ করতে হবে। সেটাই সংসদীয় রীতি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটাই প্রথম পথ। সংসদ বর্জনের যে সংস্কৃতি আমাদের এখানে গড়ে উঠেছে, সেটা গণতন্ত্রের জন্য তেমন শুভ নয়। জনগণ সংসদ সদস্যদের নির্বাচন করে সংসদে পাঠায়। সেখানে সংসদ সদস্যরা একটানা সংসদ বর্জন করে চললে, জনগণের কথা সংসদে ওঠে না। বিরোধীরা সংসদে ও রাজপথে একই সঙ্গে তাঁদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলতে পারেন। সাম্প্রতিক দুটি রোডমার্চে বিরোধী দল যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে, সেই বক্তব্য সংসদেও উপস্থাপন করা যেত। সেটা করলে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হতো। বিরোধী দল কি সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, একটানা সংসদ বর্জন থেকে এটাও এখন একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিরোধী দলকে সংসদে যেতে হবে। সংসদ অধিবেশনে গিয়েই নিজেদের কথা তুলে ধরতে হবে। রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার আগে কিংবা তার পাশাপাশি বিষয়গুলো সংসদে তুলে ধরতে হবে। সংসদে আলোচনার মাধ্যমে যদি সমস্যার সমাধান হয়, তাহলে রাজপথে আন্দোলনের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। সংসদে দেওয়া বক্তব্যকে রাজপথের আন্দোলন শক্তি জোগাতে পারে। জনগণ যে দায়িত্ব সংসদ সদস্যদের ওপর অর্পণ করেছে, সে দায়িত্ব পালনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দলের চাপিয়ে দেওয়া কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে জনগণ যেন উপেক্ষিত না হয়, প্রাথমিক করণীয়টি তথা সংসদে বক্তব্য পেশের বিষয়টি যেন উপেক্ষিত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সর্বাবস্থায় সংসদে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আমাদের দেশে একসময় গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছিল। অনেক কষ্টের অর্জন আজকের গণতন্ত্র এবং সংসদ। একসময়ের নেতিবাচক রাজনীতির পরিণাম কী হতে পারে, তার উদাহরণ আমাদের নিকট-অতীতেই রয়েছে। আবারও সেই অতীতের পুনরাবৃত্তি হোক, এটা আমরা কেউ চাই না। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে তাই গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল হয়ে সংসদকে কার্যকর করতে হবে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিরোধী দলও সরকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিরোধী দল সংসদে অনুপস্থিত থাকলে সরকারের ভুল সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থেকে যায়। সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে সরকারকে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করাটা বিরোধী দলের অবশ্য পালনীয় দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সরকারকে সঠিক পথে চালিত করার কাজটি সরকারি দলের সঙ্গে বিরোধী দলকে ভাগাভাগি করে নিতে হয়।
আমরা চাইব, বিরোধী দল সংসদে ফিরে তাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরুক। সরকারকে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করুক। সংসদকে কার্যকর করে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাক বিরোধী দল। সংসদীয় গণতন্ত্র সচল, প্রাণবন্ত, গতিশীল ও পুরোপুরি অর্থবহ হোক। গণতন্ত্র পরিপূর্ণভাবে একটি জনকল্যাণকর আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় পরিণত হোক।

No comments

Powered by Blogger.